অস্ট্রেলিয়ায় হতাশাজনক পাঁচটা সপ্তাহ শেষ হল। প্রাক্তন ক্রিকেটার হিসেবে সিরিজটা যে ভাবে এগোল তা দেখে খুব দুঃখ পেয়েছি। খারাপ লেগেছে ভারতীয়দের পারফরম্যান্স দেখে। এই টিমে কয়েক জন চ্যাম্পিয়ন আছে, যারা ভারতীয় ক্রিকেটকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। গত ন’মাসে দলের পারফরম্যান্স দেখে ওরাও নিশ্চয়ই আঘাত পেয়েছে। ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়া সফরের হার দুটোই বড় ব্যবধানের। ডানকান ফ্লেচারের জন্যও নিশ্চয়ই এই সময়টা দুঃস্বপ্নের মতো। অস্ট্রেলিয়ায় ওর কোচিংয়ে শেষ বারোটা ম্যাচের মধ্যে এগারোটা হেরেছে। কোচ হিসেবে ওর খ্যাতি অটুট রাখার চাপটা কী রকম, বুঝতে পারছি। ইংল্যান্ড ক্রিকেটাররা ফ্লেচারকে সম্মান করত। ও সাফল্যও পেয়েছিল। তবে এখন নিশ্চয়ই ও ভাবছে, আমি ঠিকঠাক করে কী করতে পারি?
ভারতীয় ক্রিকেটের লক্ষণ মোটেও ভাল না। এই জায়গাটা থেকে বেরতে সঠিক বিশ্লেষণের পাশাপাশি দরকার বিচক্ষণ পরিকল্পনা। বিদেশে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতেই কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের বিচার হবে। সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া উচিত এমন একটা দল গড়ার উপর যারা বিদেশে ভাল খেলতে পারবে। কারণ অধিনায়ক বা বাকি ক্রিকেটার যারাই হোক না কেন, দল হিসেবে ভারত কখনওই দেশের মাঠে সমস্যায় পড়বে না। ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে তুমি কেমন খেলছ, সেটাই আসল। অচেনা পরিবেশে একটা দল কেমন খেলছে, সেটা দিয়েই ক্রিকেটবিশ্বের শ্রদ্ধা পাওয়া যায়। আর এটার উপরই ভারতের ফোকাস রাখা উচিত।
মিডিয়ার গুজব, দ্রাবিড় নাকি অবসর ঘোষণা করতে চলেছে। খবরটা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই মনে হল, ব্যস, আবার শুরু হবে একের পর এক গল্প ফাঁদা। নানা সূত্র থেকে নানা রকম সত্যি-মিথ্যে খবর নিয়ে শিরোনাম করা হবে। দল বা ক্রিকেটার হিসেবে এটা নিয়ে কিছুই করার থাকে না। এটা খুব স্বাভাবিক যে কেউ ভাল খেলতে না পারলে তাকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। সবাই মিলে তার বিচার করতে বসে এবং তারা নিজেরাই নিজেদের মতো একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায়। এ সব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হল সব রকম গুজব শুনে যাওয়া এবং তার কোনও প্রভাব নিজের উপর পড়তে না দেওয়া।
সিনিয়রদের নিয়ে প্রচুর জল্পনা চলছে। ওদের মধ্যে কারও কারও জায়গায় তরুণদের আনার কথা ভাবা হচ্ছে। শেষ দুটো টেস্ট বিরাট ভাল খেলায় তরুণদের পক্ষে দাবিটা আরও জোরালো হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে, যে কোনও ভাল টিমে তরুণ এবং প্রবীণদের সঠিক ভারসাম্য থাকা দরকার। ভারতীয় দলের কিংবদন্তিরা সবাই চল্লিশ ছুঁইছুঁই। কিন্তু ওদের প্রাপ্য সম্মানটা দিতেই হবে। অস্বীকার করছি না যে দল বাছার ক্ষেত্রে পারফরম্যান্সই একমাত্র মাপকাঠি হওয়া উচিত। তবে সিনিয়রদের ব্যাপারটা ঠিকঠাক করে দেখতে হবে। ওরা প্রত্যেকেই যথেষ্ট পরিণত। ভারতীয় ক্রিকেটের প্রতি ওদের প্রচুর অবদান। ওরা জানে দলের জন্য কোনটা ভাল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ওরা কখন অবসর নেবে সেই সিদ্ধান্তটা ওদের উপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত। আমরা সবাই জানি যে সেই সময়টা খুব দূরে নয়। অদূর ভবিষ্যতে এ রকম ঘোষণা শুনলে আমি অবাক হব না। কিন্তু সেটা ওদের নিজেদের মুখ থেকেই আসতে দিন না।
সামনের কয়েক মাস ভারত টেস্ট খেলবে না। দলের পারফরম্যান্স খতিয়ে দেখার যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে। নির্বাচকদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে ব্যাপারটা কার্পেটের তলায় না ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। কারণ এটা ভারতের সুনামের ব্যাপার। আর হ্যাঁ, একটা শক্তিশালী ভারতীয় দল বিশ্বক্রিকেটের জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
|
টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে নামলেন সচিনরা
সংবাদসংস্থা • দুবাই |
অস্ট্রেলিয়ায় ব্যর্থতার জেরে টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে নেমে গেলেন ভারতীয়রা। প্রথম দশ টেস্ট ব্যাটসম্যানদের তালিকা থেকে ছিটকে সচিন তেন্ডুলকর এখন ১৩ নম্বর। তিন ধাপ নেমে ১৮ নম্বরে রাহুল দ্রাবিড়। দু’ধাপ নেমে ভিভিএস লক্ষ্মণ এখন ২৩। এক ধাপ নেমে বীরেন্দ্র সহবাগ ২৪-এ। দু’ধাপ নেমে গৌতম গম্ভীর ৩৪ নম্বরে। বোলারদের মধ্যে এক ধাপ নেমে দশ নম্বরে রয়েছেন জাহির খান। প্রথম কুড়ি জন বোলারের মধ্যে তিনিই একমাত্র ভারতীয়। অন্য দিকে র্যাঙ্কিংয়ে উঠে এসেছেন রিকি পন্টিং (১৪), মাইকেল ক্লার্ক (৩), পিটার সিডল (৪), রায়ান হ্যারিস (২২) এবং নাথান লিয়ঁ-রা (৪৩)। |