টি-শার্ট তখন খুলে ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন। খালি গায়ে দর্শকদের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে নিজের বুকে চাপড় মেরে চলেছেন ক্রমাগত। হুঙ্কার দিচ্ছেন একের পর এক।
এ কি কোনও টেনিস প্লেয়ার? না কি কোনও গ্ল্যাডিয়েটর যিনি এই একটু আগে এরিনায় বধ করে এলেন তাঁর প্রতিপক্ষকে? রড লেভার এরিনায় কি টেনিস ম্যাচ হয়ে গেল না রক্তক্ষয়ী কোনও যুদ্ধ? ফেসবুক-টুইটারে একের পর এক যে সব প্রতিক্রিয়া আছড়ে পড়ছিল, তাতে অবশ্য ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক।
‘পাগলামির টেনিস হচ্ছে’...‘৯১১ নম্বরে ফোন করুন শিগগির...শেষ পর্যন্ত যে দু’পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে, সে-ই জিতবে এ লড়াই’..‘দু’জন যোদ্ধাকেই উঠে দাঁড়িয়ে কুর্নিশ করতে হবে’... |
প্রায় ছ’ঘণ্টার লড়াইয়ের শেষে দুই যোদ্ধাকেই কুর্নিশ জানাতে কসুর করেনি দর্শককুল। ঠিক তেমনই একে অপরের প্রতি অসীম শ্রদ্ধাও ঝরে পড়ছিল। চ্যাম্পিয়নের ট্রফিটা হাতে নিয়ে নোভাক জকোভিচ বলে উঠলেন, “আজ আমরা অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ইতিহাস সৃষ্টি করলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হল, দু’জনের পক্ষে এক সঙ্গে জেতা সম্ভব ছিল না।” তার একটু আগে রাফায়েল নাদাল বলেছেন, “আমার খেলা অন্যতম সেরা গ্র্যান্ডস্লাম ফাইনাল। নোভাককে এর জন্য ধন্যবাদ।” গ্র্যান্ডস্লাম ইতিহাসে এটা কি অন্যতম সেরা ফাইনালগুলোর তালিকায় ঢুকে যাবে? মহেশ ভূপতির ভোট সে দিকেই। সর্বশ্রেষ্ঠ না হোক, দীর্ঘতম ফাইনাল তো বটেই। আজ যখন ম্যাচ শেষ হল মেলবোর্নের ঘড়িতে রাত একটা বেজে গিয়েছে। জকোভিচ-নাদাল দু’জনেই মাইকের সামনে এসে কথা শুরু করলেন, ‘গুড মর্নিং’ বলে। যা শুনে প্রথম বার বোধহয় দমফাটা উত্তেজনার আবহটা কিছুটা হাল্কা হল।
জকোভিচ বলছিলেন, “বিশ্বের অন্যতম সেরা প্লেয়ার রাফা। অবিশ্বাস্য খেলা হল। আশা করব এ রকম ম্যাচ আরও হবে।” আজ রাফা-জোকারের লড়াইয়ের সৌজন্যে সবথেকে ব্যবহৃত শব্দ বোধহয় ‘অবিশ্বাস্য।’ সত্যিই অবিশ্বাস্য টেনিসই হল। না হলে নাদাল কী করে হেরে যাওয়ার পরে বলতে পারেন: “কোনও দিন এই ম্যাচটার কথা ভুলব না।”
দুনিয়ার নজর এ দিন ছিল মেলবোর্নে। খেলা যত এগোচ্ছে, প্রতিক্রিয়ার বহর তত বাড়ছিল। ডেল স্টেইন যেমন একটা সময় টুইট করলেন: ‘আমার সমুদ্র সৈকতে সময় কাটানোর প্রোগ্রামটা আজ গেল..এ তো শেষই হচ্ছে না..’। একটু পরেই শেন ওয়ার্নের টুইট: ‘জকোভিচের চুলটা ঠিক বাকিংহাম প্যালেসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সান্ত্রীদের মতো লাগছে’। জকোভিচের খেলার স্টাইলটা আবার টুইটার মারফত খুব সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করেছেন মহেশ ভূপতি। ‘জকোভিচকে স্রেফ ফর্মুলা ওয়ান গাড়ির সঙ্গে তুলনা করা যায়। যখনই প্রয়োজন তখনই আর একটা গিয়ারে চলে যায়, যেটা প্রতিপক্ষের নেই।”
ট্রফি হাতে শান্ত ছেলেটা যখন হাসিমুখে সার্বিয়ান ভাষায় তাঁর পরিবার এবং দেশের লোকজনের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছিলেন, তখন মনে হচ্ছিল এটাও একটা গিয়ার। যেটা চ্যাম্পিয়নদের থাকতেই হয়। |