ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে দলমার হাতিদের খেদানোয় গতি আনার নির্দেশ দিলেন বনমন্ত্রী। রবিবার দুপুরে রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন বেলিয়াতোড় রেঞ্জ অফিসে বন দফতরের কর্তা ও স্থানীয় বিধায়কদের নিয়ে এ ব্যাপারে বৈঠক করেন। পরে তিনি বলেন, “হাতিদের যত দ্রুত সম্ভব দলমায় ফেরত পাঠাতে হবে। সে জন্য টাকার অভাব হবে না। প্রয়োজনে অভিযানে লোকবল বাড়াতে হবে।”
দু’দফায় বাঁকুড়া জেলায় দলমার প্রায় ১৫০টি হাতি মাস দেড়েক আগে ঢুকেছে। তাদের হামলায় জেলার এক জনের মৃত্যু হয়েছে, জখম হয়েছেন কয়েক জন। খাবারের সন্ধানে জঙ্গল ছেড়ে হাতির পাল চাষের খেতে নেমে প্রচুর জমির ফসল খেয়ে, মাড়িয়ে নষ্ট করেছে। হাতিদের তাড়ানোর দাবিতে বাসিন্দারা রেঞ্জ অফিসগুলিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। ধানের দাম না পাওয়া নিয়ে এমনিতেই চাষিদের একাংশ ক্ষুদ্ধ। তার উপরে মাঠের সব্জি এ ভাবে হাতিরা নষ্ট করায় ক্ষোভ আরও ছড়ায়। সম্প্রতি বাঁকাদহ রেঞ্জ অফিসারকে চার ঘণ্টা তালা বন্ধ করে রেখে আলু ছড়িয়ে ক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। সপ্তাহখানেক আগে বন দফতর হাতিগুলিকে তাড়ানোর জন্য অভিযান শুরু করলেও তাদের বেশিদূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়নি।
এই প্রেক্ষিতে হাতি তাড়ানোয় গতি আনার জন্য বনমন্ত্রীর এই বৈঠক বলে বনকর্মীদের একাংশের মত। বৈঠকে ছিলেন ডিএফও (বাঁকুড়া উত্তর), এডিএফও বিষ্ণুপুর (পাঞ্চেত) এবং হাতি উপদ্রুত বড়জোড়া ও সোনামুখীর বিধায়কেরা। বড়জোড়ার বিধায়ক তৃণমূলের আশুতোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “হাতিরা বড়জোড়ার বহু গ্রামে ব্যাপক ক্ষতি করেছে। হাতিগুলিকে দ্রুত তাড়ানোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য মন্ত্রীকে জানিয়েছি।” সোনামুখীর বিধায়ক তৃণমূলের দিপালী সাহা বলেন, “বড়জোড়া যাওয়ার পথে ও ফেরার পথে দু’দফায় হাতিরা হামলা চালায়। বাসিন্দারা খুবই সমস্যার মধ্যে রয়েছেন।” ডিএফও (বাঁকুড়া উত্তর) এস কুলন ডেইভাল বলেন, “হাতি তাড়ানো অভিযান শুরু করা হলেও বেশি দূর পাঠানো যায়নি। হাতির দল কিছুতেই এগোতে চাইছে না। সামান্য এগিয়ে আবার ফিরে আসছে। অনেকগুলো দলে ভাগ হয়ে আমাদের বিপত্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই বিশেষ সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে না।” তবে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার পরে তাঁরা হাতি তাড়ানো অভিযান আরও জোরদার করছেন বলে ডিএফও জানান। তিনি বলেন, “সব রেঞ্জ অফিসের বনকর্মীদের নিয়ে আমরা শীঘ্রই সম্মিলিত ভাবে হাতি তাড়ানোর অভিযান শুরু করব।” তাঁর আশ্বাস, দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য যা যা করণীয় তা করা হচ্ছে।
হাতির দলের দৌরাত্ম্য অবশ্য অব্যাহত রয়েছে। হাতিরা শনিবার রাতে বেলিয়াতোড় বনাঞ্চলের কাপাসবেড়ে, ডাংচাউল, রাউতোড়া, মুক্তাপুর প্রভৃতি গ্রামে বোরো ধানের বীজতলা, আলু ও বাঁধাকপির খেত নষ্ট করেছে বলে অভিযোগ। বাঁকাদহ রেঞ্জের কুলুপুকুর, দুন্দুড়, হেতাগাড়া প্রভৃতি গ্রামের খেতেও হাতিরা হামলা চালিয়েছে। শনিবারও রাধানগর রেঞ্জ অফিসে বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। বনকর্তারা বক্তব্য, হাতি তাড়ানোর সময় গ্রামবাসীদের সহযোগিতা দরকার। |