শহরের ছাপাখানা মোড়ে একটি বড় দশকর্মা দোকানের প্রবেশ পথের ডান দিকে নির্দেশিকাপুরসভার নির্দেশে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার কথা সেখানে জ্বলজ্বল করছে। কিন্তু কাছাকাছি দোকানেই রমরমিয়ে চলছে প্লাস্টিকের ব্যাগ বিক্রি। বেলডাঙা পুর এলাকার মাছের ও মাংসের বাজারে অবশ্য সে সব নিষেধাজ্ঞার কোনও বালাই নেই। না চাইতেই সেখান থেকে মেলে এমন ক্যারিবাগ যা নিষিদ্ধ। সরস্বতী পুজোর দিন সকালে সারা শহরেই যথেচ্ছ মিলেছে প্লীস্টিকের ক্যারিব্যাগে যাবতীয় পুজোর সামগ্রী।
নিয়ম অনুযায়ী, ৪০ মাইক্রনের নীচের প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। ক্যারিব্যাগ হতে হবে ৪০ মাইক্রনের উপরে এবং মাপ হতে হবে ১২ বাই ১৬ ইঞ্চি। কিন্তু কেউই সে কথা মানেন না। অথচ গত ১৫ অগস্ট ২০১১ থেকে বেলডাঙা পুরসভার পক্ষে ঘোষণা করা হয়, পুরসভা এলাকার পাতলা নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের প্যাকেট ব্যবহার ও বিক্রি বন্ধ করতে হবে। সেই ঘোষণাতে বলা হয়েছিল, ১৫ অগস্টের পরে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যবহার করা হলে ৫০ টাকা জরিমানা দিতে হবে ব্যবহারকারীকে এবং বিক্রেতাকে জরিমানা দিতে হবে ৫০০ টাকা। কিন্তু তারপরে ৬ মাস অতিক্রান্ত। এরপরেও নজরদারির অভাবে বন্ধ হয়নি নিষিদ্ধ প্লাস্টিক। দুর্গা পুজোর সময় প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতনতা বাড়াতে কয়েকটি মণ্ডপে কর্তৃপক্ষেরা উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও যে কাজের কাজ তেমন কিছু হয়নি, তার প্রমাণ মিলেছে এ বার পর্যটন মরসুম শুরু হয়ে যাওয়ার পরে। একের পর এক উৎসব, পিকনিক এবং গত সপ্তাহে সুভাষচন্দ্র-স্মরণ থেকে শুরু করে সরস্বতী পুজো পর্যন্ত রমরমিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে প্লাস্টিক।
প্রশাসন ও স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোও কিন্তু চায় প্লাস্টিক ব্যবহার কমে যাক। তারপরেও কেন এই হাল, তা জানাতে গিয়ে বেলডাঙা বড়ুয়া মোড়ের ব্যবসায়ী গিয়াসুদ্দিন বলেন, “শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের এক দিকে পুরসভা, অন্য দিকে পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েতে প্লাস্টিক ব্যবহারের উপরে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। পুরসভায় রয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।” তিনি বলেন, “ক্রেতারাই যথেষ্ট সচেতন নন। তিনি যদি দেখেন পঞ্চায়েত এলাকার দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনলে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ পাওয়া যাবে, তা হলে তিনি সেখান থেকেই জিনিসপত্র কিনবেন। পুরসভা এলাকা থেকে কিনলে তো ক্যারিব্যাগ পাওয়া যাবে না।” বেলডাঙার বিদায়ী পুরপ্রধান সিপিএমের প্রিয়রঞ্জন ঘোষের বক্তব্য, “এমনিতে এই পুরসভা দু’টি ব্লকের কেন্দ্রস্থল। গ্রাম বাদ দিলে পুরসভা এলাকা ছোটই।” তাঁর কথায়, “১৫ অগস্টের ঘোষণা শুধু বিজ্ঞপ্তি হয়েই থেকে গিয়েছে। কার্যকরী করা যায়নি।” ছাপাখানা ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির পক্ষে সভাপতি সুজাউদ্দিন আহমেদেরও বক্তব্য, “পুরসভার ধারাবাহিক নজরদারি না থাকার ফলেই এই অবস্থা।”
বেলডাঙার পুরপ্রধান অনুপমা সরকার বলেন, “আমরা কিছু করছি না তা কিন্তু নয়। আমরা ধারাবাহিক ভাবে নজরদারি রাখছি। হাতেনাতে কাউকে ধরলে তাকে জরিমানা করা হচ্ছে।” তাঁর দাবি, “বেলডাঙার প্রধান মোড় বড়ুয়া ও ছাপাখানায় প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে না। তবে আমরা চাই শহরে আরও বেশি করে প্রশাসনিক সহযোগিতা নিয়ে নজরদারি বাড়াতে। শীঘ্রই গোটা শহরে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা যাবে বলে মনে হচ্ছে।”
তবে শহরের যে মতি ফিরছে, তার প্রমাণ প্লাস্টিকের কাপের বদলে কাগজের কাপে চা দিয়ে বেশি দাম চাইলে দোকানদারকে নিরাশ হতে হচ্ছে না। স্টেশন লাগোয়া এলাকার চা ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবিরের কথায়, “কাগজের কাপেই চা দিচ্ছি, দাম বেশি নিতেই হচ্ছে। কিন্তু শহরের লোকের তাতে আপত্তি নেই।” বড়ুয়া ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মুক্তাদির মোল্লা বলেন, “নিষিদ্ধ প্লাস্টিক বন্ধ সকলেরই এগিয়ে আসা উচিত। আমাদের ব্যবসায়ীদের তরফে আমরা সব রকম সহযোগিতা করছি।” |