প্রশাসনিক জটিলতার জেরে গত কয়েক মাস ধরে রায়গঞ্জ পুরসভা নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বিরোধী অভিযান বন্ধ রেখেছে। সেই সুযোগে শহরের ব্যবসায়ীদের একাংশ ফের নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের কারবার শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ পেয়ে ফের শহরের বিভিন্ন বাজারে অভিযানে নেমেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। রবিবার পুর চেয়ারম্যান মোহিত সেনগুপ্তের নেতৃত্বে অভিযান শুরু হয়। অভিযানে সামিল হন পুলিশ আধিকারিক এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররাও। এদিন পুর কর্তৃপক্ষ শহরের মোহনবাটি, সুপার মার্কেট এলাকার একাধিক দোকানে অভিযান চালান। নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ক্যরিব্যাগের কারবার করার অভিযোগে দুই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে জরিমানাও আদায় করা হয়। আটক করা হয় প্রায় ৪ কেজি নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ক্যরিব্যাগ। পুরসভার স্বাস্থ্য পরিদর্শক সুদেব দাস বলেন, “প্রশাসনিক জটিলতার জেরে গত কয়েকমাস ধরে পুর কর্তৃপক্ষ নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বিরোধী অভিযান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশে পুর চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ফের নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বিরোধী অভিযানে নামা হল।” |
বাজারে পুরসভার অভিযান। রায়গঞ্জে তরুণ দেবনাথের তোলা ছবি। |
পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান রণজকুমার দাস বলেন, “কোনও ব্যবসায়ী নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের কারবার করার অভিযোগে ধরা পড়লে সরকারি নির্দেশে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। ক্রেতারা নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করলেও জরিমানা আদায় করা হবে। তারপরও নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের কারবার বন্ধ না-হলে দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানানো হবে।”
পুর চেয়ারম্যানের অভিযোগ, গত দেড় বছর ধরে পুর কর্তৃপক্ষ শহর জুড়ে সচেতনতা প্রচার চালালেও বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীদের একাংশ নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ক্যরিব্যাগের কারবার থেকে সরে আসেননি। এ ছাড়াও শহরের মিষ্টি ব্যবসায়ীদের একাংশ ক্ষতিকারক রঙ মেশাচ্ছেন। এদিন অভিযান চালানোর সময়ে শহরের রেলস্টেশন এলাকার এক মিষ্টি ব্যবসায়ীকে ক্ষতিকারক রঙ মেশানোর অভিযোগে পুর কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে দেন। পাশাপাশি, পুরসভার তরফে ওই ব্যবসায়ীর দোকানে রাখা রঙ মেশানো বহু মিষ্টি নষ্ট করে দেওয়া হয়। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশে ২০১০ সালের ১৫ জুলাই রায়গঞ্জে ৪০ মাইক্রনের কম পুরু নিষিদ্ধ প্লাষ্টিক ক্যারিব্যাগ বিরোধী অভিযান শুরু হয়। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ওই অভিযান চলে। নিষিদ্ধ প্লাষ্টিক ক্যারিব্যাগের কারবার ও ব্যবহার করার অভিযোগে প্রায় ১২০ জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে ও প্রায় ৩০ জন ক্রেতার কাছ থেকে ৫০ টাকা করে জরিমানা আদায় করা হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় প্রায় সাড়ে ৪ কুইন্টাল নিষিদ্ধ প্লাষ্টিক ক্যারিব্যাগ। এর পরে বিধানসভা ও রায়গঞ্জ পুরসভার নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় প্রশাসনিক জটিলতার জেরে অভিযান সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখতে বাধ্য হন পুর কর্তৃপক্ষ। এর পরে নভেম্বর মাসেও পুরসভা কয়েক দফায় শহরের বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালায়। তার পরেও শহরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার চলছে অভিযোগ পেয়ে ফের অভিযান শুরু হয়। রায়গঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অতনুবন্ধু লাহিড়ী বলেন, “ব্যবসায়ীরা যাতে নিষিদ্ধ প্লাষ্টিক ক্যারিব্যাগের কারবার থেকে সরে আসেন ও খাবারে ক্ষতিকারক রঙ না মেশান তার জন্য সংগঠনের তরফে আগামী সপ্তাহ থেকে সচেতনতামূলক অভিযানে নামার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” |