শ্যামপুরের যে দু’টি সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে ধান কেনার ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে ‘কড়া ব্যবস্থা’ নেওয়া হতে পারে বলে জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।
আজ, সোমবার জেলার বিভিন্ন সমবায় সমিতির কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে এই দফতর। সেই বৈঠকেই বিষয়টি স্থির হবে। এ ছাড়াও, উদয়নারায়ণপুরে ফের কবে থেকে ধান কেনা হবে, তা-ও ঠিক করা হবে ওই বৈঠকে। শনিবার থেকে এখানে ধান কেনা বন্ধ রয়েছে।
শ্যামপুরের কামদেবপুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি এবং সুলতানপুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি উদয়নারায়ণপুরে চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার বরাত পেয়েছিল। তাদের ধান কেনার বরাত দিয়েছিল রাজ্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ নিগম। শনিবার ধান কেনার সময়ে চাষিরা এই দু’টি সমবায় সমিতি কর্তাদের ঘেরাও করেন। তাঁদের অভিযোগ, ফড়েদের কাছ থেকে চুপিসাড়ে ধান কেনা হচ্ছিল। সমিতির কর্তাদের সঙ্গে ছিলেন চালকলের কর্মচারীরা।
ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ নিগমের আধিকারিকেরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। এর ভিত্তিতে সমবায় সমিতির দু’ই কর্তা, চালকল কর্মী, ফড়ে-সহ ছ’জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
অভিযোগটি পৃথক ভাবে খতিয়ে দেখছে জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতরও। এই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ম হল, যে এলাকায় ধান কেনা হবে সেখানকার চাষিদের মধ্যে ধান কেনার অন্তত তিন আগে থেকে মাইক প্রচার করতে হবে। বিষয়টি পঞ্চায়েতের প্রধানকে জানাতে হবে।
জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের এক কর্তা জানান, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গিয়েছে, পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে ধান কেনার আগে কোনও প্রচার হয়নি। সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের প্রধানদের ধান কেনার বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। নগদ টাকা দেওয়া হচ্ছিল ফড়েদের। তাঁদের নামে ওই সমবায় ব্যাঙ্ক দু’টিতে অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে ‘উইথড্রয়াল স্লিপ’-এ সই করিয়ে নেওয়া হচ্ছিল। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য যেখানে ১০৮০ টাকা, সেখানে ফড়েদের দেওয়া হচ্ছিল ৮৩০ টাকা করে।
এ দিকে, শ্যামপুরের তৃণমূল বিধায়ক কালীপদ মণ্ডল বলেন, “শ্যামপুরে কী ধানের অভাব রয়েছে? ওরা উদয়নারায়ণপুরে ধান কিনতে গেল কেন? উদয়নারায়ণপুরের চাষিরা শ্যামপুরের ব্যাঙ্কে এসে অ্যাকাউন্ট খুলবেন?”
শনিবার চাষিদের বিক্ষোভ চলে গভীর রাত পর্যন্ত। বিক্ষোভ সামাল দিতে উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজা গভীর রাত পর্যন্ত চাষিদের সঙ্গে ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, “মুখ্যমন্ত্রী যে উদ্দেশ্য নিয়ে সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার কথা বলছেন তা বানচাল করার জন্য কোনও চক্র কাজ করছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখা দরকার।”
শুধু উদয়নারায়ণপুরই নয়, জগৎবল্লভপুরের পাতিহালে চাষিদের ‘উইথড্রয়াল স্লিপ’-এ সই করিয়ে নগদ টাকা দিয়ে শ্যামপুরেরই অন্য একটি সমবায় সমিতি চালকল মালিকদের সঙ্গে নিয়ে ধান কিনছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্য দিকে, শ্যামপুরেরই কোনও কোনও জায়গায় রেভিনিউ স্ট্যাম্পে সই করিয়ে সমবায় ব্যাঙ্ক চাষিদের নগদ টাকা দিয়ে ধান কিনছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ধানের দাম ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের থেকে কম দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ।
জেলা খাদ্য ও সরবরাহ নিয়ামক শ্বাশ্বতী ঘোষ বলেন, “অত্যাবশকীয় পণ্য সরবরাহ নিগমই জেলায় বিভিন্ন সমবায় সমিতিকে নিয়োগ করেছে। যে দু’টি সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তাদের কিসের ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়েছিল সে বিষয়ে নিগমের কাছ থেকে রিপোর্ট নেব। তার পরে ঠিক হবে ওই দু’টি সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অন্যান্য যে সব অভিযোগ উঠেছে সেই সব বিষয়ও বৈঠকে আলোচনা করা হবে বলে নিয়ামক জানান।
এ দিকে, কামদেবপুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি তাদের পরিচালিত নয় বলে দাবি করেছে তৃণমূল। শ্যামপুরের দলীয় বিধায়ক কালীপদ মণ্ডল বলেন, “ওই সমবায় সমিতি সিপিএম পরিচালিত।”
সিপিএমের হাওড়া জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, “আমি যতদূর শুনেছি ওই সমবায় সমিতি আমাদের হাতে নেই। তবু আমি দলের কাছ থেকে আরও বিস্তারিত জানতে চেয়েছি।” অন্য দিকে, কংগ্রেস নেতা আতিয়ার খান বলেন, “সমবায় সমিতিগুলির দখল নিতে এক সময়ে তৃণমূল এবং সিপিএম মরিয়া ছিল। দুর্নীতির অভিযোগ উঠতেই দু’টি দলই ঘাড় থেকে সমিতিগুলির বোঝা নামাতে চাইছে।” |