সকালে চেতলার একটি বাড়িতে উদ্ধার হল দম্পতির ঝুলন্ত দেহ। রাতে লেক টাউন থানার বাঙুর অ্যাভিনিউয়ের এক আবাসনে ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে মিলল এক বৃদ্ধের পচাগলা দেহ। রবিবার শহরের দুই প্রান্তে দু’টি ঘটনা ঘটেছে। সকালের ঘটনায় একটি সুইসাইড নোট দেখে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, অসুস্থতার কারণে অবসাদের জেরে আত্মঘাতী হন দম্পতি। বাঙুরের ঘটনায় মৃতদেহের পাশে হৃদ্রোগের ওষুধ মেলে। এ ক্ষেত্রে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েই মারা গিয়েছেন বৃদ্ধ।
বাঙুর অ্যাভিনিউয়ের সি ব্লকের ওই আবাসনে একাই থাকতেন জয়দেব চৌধুরী (৬৫) নামে ওই বৃদ্ধ। আগে ওই ফ্ল্যাটে তাঁর দিদিও থাকতেন তাঁর সঙ্গে। বছর চারেক আগে তিনি মারা যান। দু’জনের কেউই বিয়ে করেননি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দিদির মৃত্যুর পর থেকে কার্যত কারও সঙ্গে মিশতেন না জয়দেববাবু। ফলে পড়শিরাও তাঁর সম্পর্কে সে ভাবে খোঁজখবর রাখতেন না। এ দিন সন্ধ্যায় জয়দেববাবুর ফ্ল্যাটে জল দিতে যাওয়া এক ব্যক্তি পড়শিদের জানান, দু’তিন দিন ধরেই দরজা খুলছেন না ওই বৃদ্ধ। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ পড়শিরা দোতলার ওই ফ্ল্যাট থেকে পচা গন্ধ পান। তাঁরাই তার পরে থানায় খবর দেন। পুলিশ দরজা ভেঙে দেখে, বিছানায় চিৎ হয়ে পড়ে রয়েছে জয়দেববাবুর দেহ। আপাতদৃষ্টিতে তাঁর দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। মৃতদেহের পাশেই পড়েছিল হৃদ্রোগের কিছু ওষুধ। তা থেকে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, হৃদ্রোগেই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
জয়দেববাবু পড়শিদের সঙ্গে মেলামেশা না-করায় তাঁর সম্পর্কে বিশেষ তথ্য দিতে পারেননি এলাকার কেউই। খোঁজ মেলেনি তাঁর কোনও আত্মীয়েরও।
এ দিনই সকালে চেতলা রোডের ৯বি বস্তি এলাকায় উদ্ধার হয় রামলক্ষ্মণ সাউ (৬২) ও মিনা সাউ (৪৫) নামে দম্পতির দেহ। ঘটনাস্থলে একটি সুইসাইড নোট মেলায় প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, আত্মহত্যা করেন ওই দম্পতি। পুলিশ সূত্রে খবর: নোটে লেখা ছিল, দীর্ঘদিনের শারীরিক অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতেই এই সিদ্ধান্ত নেন ওই দম্পতি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চেতলার ওই বস্তিতে ভাড়া থাকতেন সাউ দম্পতি। এ দিন সকালে বহু ডাকাডাকিতেও তাঁরা ঘরের দরজা খোলেননি। দরজা ভেঙে দেখা যায়, ফ্যান থেকে দড়ির ফাঁসে ঝুলছেন দু’জনে। তখনই পুলিশে খবর দেওয়া হয়। হাসপাতালে ওই দম্পতিকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
পুলিশ জানায়, চেতলার সিআইটি মার্কেটের ফুটপাথে সব্জি বেচতেন রামলক্ষ্মণবাবু। দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, কিছু দিন হাসপাতালেও ছিলেন ওই প্রৌঢ়। শনিবার দুপুরে বাড়িতে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। তাঁর স্ত্রী মিনাদেবীও থাইরয়েডের অসুখে ভুগছিলেন। তাঁদের দুই ছেলে এবং এক মেয়ে। বড় ছেলে কার্তিক থাকেন সন্তোষপুরে। ছোট ছেলে গণেশ থাকেন পাশের ঘরেই। মেয়ে নিতুর শ্বশুরবাড়ি বজবজে। রামলক্ষ্মণবাবুদের প্রতিবেশী সোনালাল গুপ্ত ও বাপ্পা লালা জানান, বছর তিনেক আগে চেতলার বস্তিতে ঘর ভাড়া নেয় সাউ পরিবার। বাপ্পাবাবুর কথায়, “ইদানীং শরীরটা বেশ খারাপ হয়েছিল রামলক্ষ্মণবাবুর। কাশির জন্য সারা রাত জেগেই থাকতেন।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, রামলক্ষ্মণবাবুর অসুস্থতার কারণে এখন ব্যবসা সামলান তাঁর ছোট ছেলে। তবে আর্থিক অনটন থাকলেও পারিবারিক কোনও অশান্তি ছিল না। ইদানীং রামলক্ষ্মণবাবুর শরীর যে বেশ খারাপ, তা আত্মীয়দেরও জানিয়েছিলেন তাঁর চিকিৎসক। |