এটাই কিন্তু লগ্নির আদর্শ সময়
বাজারের পথ চড়াই উতরাইয়ে ভরা। একটু উঠলেই ভয় হয় কখন আবার পড়বে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হওয়ায় গত কয়েক দিনে সূচক উঠেছে বেশ কিছুটা। এতটা ওঠার পর সংশোধনের সম্ভাবনা কিন্তু একদম উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে মাঝারি মেয়াদে বাজার ভালর দিকেই যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধি কমতে শুরু করেছে। বাড়ছে টাকার দাম। ক’দিন আগেই তাদের ঋণনীতিতে নগদ জমার অনুপাত বা সিআরআর কমিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এর ফলে বাজারে আসবে ৩২,০০০ কোটি টাকা। এ বার অপেক্ষা সুদ কমার। মার্চে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যদি সুদ কমানোর পথে হাঁটে, তবে তার বড় প্রভাব পড়বে বাজারে। মার্চেই আছে কেন্দ্রীয় বাজেট ও কয়েকটি রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ। অর্থাৎ মাসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাজারের কাছে।
এখন জোর কদমে চলছে কোম্পানি ফলাফল প্রকাশ। চলবে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে, বহু ক্ষেত্রেই বিক্রি বাড়লেও লাভ সেই অনুপাতে বাড়েনি অথবা কমেছে। এক দিকে, চড়া মূল্যবৃদ্ধির কারণে কাঁচামালের দাম বাড়া ও অন্য দিকে, ঋণের উপর সুদ বেড়ে যাওয়া বড় রকমের চাপ সৃষ্টি করেছে মুনাফার উপর। এ ছাড়া ডলারের মূল্যবৃদ্ধি তো ছিলই।
সম্প্রতি এই সমস্ত চাপ থেকেই বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করছে শেয়ার বাজার। শুক্রবার সেনসেক্স উঠে এসেছে ১৭,২৩৪ অঙ্কে। ৫,২০০ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে নিফটিও। এ বার বাজারের আরও ওঠার জন্য প্রয়োজন বিদেশি লগ্নির সমর্থন। সুখের কথা, জানুয়ারিতে বেশ খানিকটা বেড়েছে বিদেশি লগ্নি। ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ইক্যুইটিতে লগ্নি এসেছে ১৭৯ কোটি ডলার। আর ঋণপত্রে বিদেশি লগ্নির পরিমাণ ছিল ৩২০ কোটি ডলার। বিদেশি মুদ্রার আগমন বাড়তে থাকায় ডলারের বিনিময় মূল্যও নেমে এসেছে ৪৯.৩২ টাকায়। এতে লাভবান হবে তেল বিপণনকারী এবং আমদানি-নির্ভর সংস্থাগুলি। মূল্যবৃদ্ধি ও সুদ হ্রাসের সম্ভাবনা থাকায় আগামী দিনে বিদেশি লগ্নিতে ভাটা পড়বে না বলে মনে করা হচ্ছে। এবং এই সব কারণেই আশা, চলতি অর্থবর্ষের শেষে মোটামুটি ভাল জায়গাতেই থাকবে দেশের প্রধান দুই সূচক। যদিও সংশোধনের সম্ভাবনাও থাকবে লাভ ঘরে তোলার তাগিদে। তবে সাময়িক পতনকে দেখতে হবে ভাল শেয়ার কেনার সুযোগ হিসাবে।
আরও বেশ কয়েকটি ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে গত সপ্তাহে। ২৪১ কোটি টাকা কমে এনটিপিসি-র লাভ দাঁড়িয়েছে ২,১৩০ কোটি টাকায়। ১০ শতাংশ বেড়ে ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার লাভ পৌঁছেছে ৭১৬ কোটি টাকায়। ২৩০ কোটি টাকা কমে কানাড়া ব্যাঙ্কের নিট মুনাফা নেমে এসেছে ৮৭৬ কোটি টাকায়। ২০ কোটি টাকা বেড়ে ভেল-এর লাভ পৌঁছেছে ১,৪৩২ কোটি টাকায়। স্পষ্টতই লাভের উপর চাপ আছে সব ক্ষেত্রেই। সবাই এখন মূল্যবৃদ্ধি ও সুদ কমার অপেক্ষায়।
সিআরআর ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমে যাওয়ায় এক দিকে যেমন বাজারে আসবে ৩২,০০০ টাকা, তেমনই কম বেশি একই পরিমাণ অর্থ বাজার থেকে শুষেও নেবে বিভিন্ন বন্ড ইস্যু। বাজারে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে করমুক্ত বন্ড। করমুক্ত ৮.৩ শতাংশ সুদ উঁচু হারে করদাতাদের কাছে বেশ লোভনীয়। এই ধরনের ৩০,০০০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করবে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। এ ছাড়া বাজারে আসছে কর সাশ্রয়কারী দীর্ঘমেয়াদি পরিকাঠামো বন্ড (আয়কর আইনের ৮০-সি সি এফ ধারা অনুযায়ী)। ইক্যুইটির বাজারকে চাঙ্গা রাখতে হলে প্রয়োজন বাজারে মোটা তহবিল আনার ব্যবস্থা করা। এটা সম্ভব হবে সিআরআর এবং সুদ কমানোর মাধ্যমে। সুদ কমানো হলে বাড়বে বিদেশি বিনিয়োগও। আরও বাড়বে টাকার দাম। ফলে, মজবুত হবে বাজারের ভিত। লগ্নিকারীদের নজর এখন সেই দিকেই। সুদের হার মোটামুটি শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছে। এ বার নামার পালা। ব্যাঙ্কে টাকা রাখতে হলে এটিই আদর্শ সময়। কর সাশ্রয়ের জন্যও ৫ বছর মেয়াদে টাকা রাখা যেতে পারে বিশেষ আমানত প্রকল্পে। আগামী দিনে বাজার উঠবে ধরে নিয়ে লগ্নি শুরু করা যায় ইক্যুইটি-নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ডে। প্রতিটি সংশোধনে একটু একটু করে সংগ্রহ করা যেতে পারে ভাল শেয়ারও। করদাতারা সুযোগ নিন করমুক্ত বন্ড/ডিবেঞ্চারের। শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ হওয়ার পর বাড়তি দাম পাওয়া যেতে পারে এই বন্ডের। সুদের হার কমতে শুরু করলে বন্ডের বাজার দর বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে। এই কথা মাথায় রেখে লগ্নি করা যেতে পারে মিউচুয়াল ফান্ডের বন্ড ফান্ডেও। অর্থাৎ বিভিন্ন ক্ষেত্রে লগ্নির জন্য এটা বেশ ভাল সময়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.