লাক্ষা চাষে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে পুরুলিয়া
পুরুলিয়া জেলায় লাক্ষা চাষের প্রসারে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের আর্থিক সহায়তায় বন দফতর এই জেলার ১১টি ব্লকের ৩০টি মৌজায় লাক্ষা চাষ শুরু করেছে। আবার বন উন্নয়ন নিগম লাক্ষা বীজ উৎপাদনের তিনটি কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চাষিদের ফের লাক্ষা চাষে নামার আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসন সম্প্রতি পুরুলিয়া শহরে লাক্ষা মেলা করল। জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ বলেন, “অতীতে সারা দেশের মধ্যে লাক্ষা চাষে পুরুলিয়ার একটা স্থান ছিল। নানা কারণে লাক্ষা চাষ ও শিল্পে পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখা যায়নি। আমরা পরীক্ষামূলকভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করে ইতিমধ্যেই সফল হয়েছি। চাষিদেরও সেই পদ্ধতিতে লাক্ষা চাষ করার জন্য উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।”
লাক্ষা চাষ নিয়ে বিগত বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে চাষিরা উদাসীনতার অভিযোগ তুলে আসছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে প্রশাসনকে লাক্ষা চাষে গুরুত্ব দিতে নির্দেশ দেন। নভেম্বর মাসে জেলা সফরে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল, পুরুলিয়াতে ভারী শিল্প গঠনের পাশাপাশি ক্ষুদ্র শিল্পগুলিকেও পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। পুরুলিয়াতে লাক্ষা চাষের বিকাশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। তা কার্যকর করতে হবে।
বন দফতর মনে করছে, জেলায় লাক্ষা চাষে বন সুরক্ষা কমিটি এবং বাসিন্দাদের উৎসাহিত করলে মূলত দুটি ক্ষেত্রে উন্নয়ন হবে। প্রথমত, লাক্ষা চাষ করে আর্থিক স্বনির্ভর হবে বন সুরক্ষা কমিটির সদস্য ও বাসিন্দারা। দ্বিতীয়ত, কাঁচামালের অভাবে ভুগতে হবে না লাক্ষা প্রস্তুতকারক শিল্পগুলিকে। বস্তুত, কাঁচা মালের অভাবে রুগ্ন হয়ে পড়েছে বলরামপুরের ৭০টি লাক্ষা পক্রিয়াকরণের ছোট কারখানা। রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম চক্রের বনপাল সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়ে ইতিমধ্যেই আমরা জেলার ১১টি ব্লকের ৩০টি মৌজায় লাক্ষা চাষ শুরু করেছি। ৩২১৭টি পরিবার ওই প্রকল্পে লাক্ষা চাষ করছেন। ইতিমধ্যেই গাছে ১৬,২২০ কেজি লাক্ষা বীজ স্থাপন করা হয়েছে।” বন দফতর জানিয়েছে, বিশদ পরিকল্পনা নিয়ে লাক্ষা চাষ শুরু হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে পাঁচ হাজার পরিবারকে ওই প্রকল্পে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে রাজ্যের অন্যতম পিছিয়ে পড়া জেলা পুরুলিয়ার আর্থিক উন্নতি ঘটবে।
—নিজস্ব চিত্র।
গত বছরের জুলাই মাসে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের সহায়তায় পরীক্ষামূলকভাবে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে লাক্ষা চাষ শুরু করে বনদফতর। ডিএফও (পুরুলিয়া) অজয়কুমার দাস বলেন, “গত জুলাই মাসে সাতশোর বেশি কুসুম গাছে লাক্ষা চাষ শুরু করা হয়। অযোধ্যা পাহাড় লাগোয়া মুরগুমা জলাধারের আশপাশের গ্রামগুলিকে বন দফতর চাষের জন্য চিহ্নিত করে। প্রকল্প রূপায়ণের অন্যতম দায়িত্বে থাকা রঘুনাথপুরের রেঞ্জ অফিসার সোমনাথ চৌধুরী, কাশীপুরের রেঞ্জ অফিসার বলরাম পাঁজা, ঝালদা-২ ব্লকের রেঞ্জ অফিসার ললিতমোহন মাহাতোরা বলেন, “লাক্ষা চাষে পুরুলিয়ার বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত ভাবে লাক্ষা চাষ করার পদ্ধতি তাঁদের জানা ছিল না। আমরা এলাকায় গিয়ে বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যদের নিয়ে হাতেকলমে তাঁদের লাক্ষা চাষের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি শেখাচ্ছি।”
ঝালদা-২ ব্লকের মুরগুমা গ্রামের চাষি লক্ষণপদ মুড়া’র কথা, “আগেও চাষ করতাম, তখন এতটা ফলন হয়নি। এখন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কীভাবে চাষ করতে হয় তা শিখেছি। বনদফতর ৫ কেজি বীজ দিয়েছিল। তা থেকে ভাল ফলন হয়েছে।” ওই গ্রামের চাষি কড়িরাম মাহাতো, ঠাকুরদাস মাহাতোদের কথায়, “আগেও লাক্ষা চাষ করেছি, কিন্তু লাক্ষাতে যে ওষুধ দিতে হয়, তখন ধারণা ছিল না। কী ধরনের ওষুধ দিতে হবে, কখন দিতে হবে তা শিখেছি।” ডিএফও জানান, জুলাই মাসে কুসুমগাছে যে বীজ লাগানো হয়েছিল এ বার তা তোলা হবে। ফের বীজ বাঁধা হবে। দশ হাজারের বেশি পলাশ ও প্রায় পৌনে দু’হাজার কুল গাছেও লাক্ষা বীজ লাগানো হয়েছে। চাষিদের আশা, এবার এক কেজি বীজ থেকে তিরিশ কেজি পর্যন্ত লাক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেজি প্রতি লাক্ষার বাজার দর আড়াইশো থেকে তিনশো টাকা। জেলাশাসক বলেন, “চাষিরা একবার এই সাফল্যের স্বাদ পেলে আর আমাদের ফিরে তাকাতে হবে না।”
লাক্ষা চাষের প্রসারে অন্যতম সমস্যা উন্নত মানের বীজের ধারাবাহিক জোগান। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চাষিরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাঝে মধ্যে ঝাড়খণ্ড, ছত্তীশগঢ় থেকে বীজ নিয়ে এসে আগে চাষ করেছেন। কিন্তু সেখান থেকেও নিয়মিত বীজ পাওয়া যেত না। এই প্রেক্ষিতেই লাক্ষা বীজ উৎপাদন কেন্দ্র গড়তে উদ্যোগী হয়েছে বন উন্নয়ন নিগম। নিগমের এম ডি সম্পদ সিংহ বিস্ট লাক্ষা চাষ সংক্রান্ত একটি কর্মশালায় এসে বলেন, “পুরুলিয়ার কাশীপুর, জয়পুর ও রঘুনাথপুরে তিনটি বীজ উৎপাদন কেন্দ্র গড়া হচ্ছে।” তিনি জানান, বিজ্ঞানসম্মত ভাবে লাক্ষা বীজ তৈরির জন্য তাঁরা ইতিমধ্যেই রাঁচির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ফরেস্ট অ্যাক্টিভিটি কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। বীজ নির্মাণ কেন্দ্র গড়তে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ আর্থিক সহায়তা করছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.