সাঁইথিয়া কলেজে সরস্বতী পুজো মণ্ডপেও ভাঙচুর
ছাত্র পরিষদ-টিএমসিপি সংঘর্ষে জখম একাধিক
রস্বতী পুজোর ঠাকুর দেখাকে ঘিরেও এ বার ছাত্র সংঘর্ষ। শনিবার রাতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) এবং ছাত্র পরিষদের মধ্যে ওই সংঘর্ষে অশান্তি ছড়ায় সাঁইথিয়া অভেদানন্দ মহাবিদ্যালয়ে। দু’পক্ষেরই বেশ কয়েক জন জখম হন। টিএমসিপি-র তিন সমর্থক সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি। সংঘর্ষের জেরে ওই রাতেই কলেজের সরস্বতী পুজোর মণ্ডপে ভাঙচুর চালানোর ঘটনাও ঘটেছে।
এর জের চলে রবিবারও। এ দিন প্রকাশ্যে ছাত্র পরিষদের এক সমর্থককে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ ওঠে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। গুরুতর আহত ওই যুবককে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন কলেজের সামনে কিছু ক্ষণ পথ অবরোধ করে ছাত্র পরিষদ। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে সাঁইথিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। স্থানীয় কংগ্রেস ও তৃণমূল নেতৃত্বও এই ঘটনায় চাপান-উতোরে জড়িয়েছেন। বীরভূমের পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা বলেন, “পুলিশ অভিযোগ পেয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।”
মণ্ডপে ভাঙচুর।
অভেদানন্দ মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে ঘিরেই এই অশান্তির সূত্রপাত। ছাত্র সংসদটি ছাত্র পরিষদের দখলে ছিল। টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, এ বার ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্র পরিষদের ‘সন্ত্রাস’-এর জন্য এবং ছাত্র-পরিষদ ও কলেজ কর্তৃপক্ষের ‘যোগসাজশ’-এ টিএমসিপি সমর্থকেরা মনোনয়নপত্র তুলতে পারেননি। এর প্রতিবাদে ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে টিএমসিপি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে। হাইকোর্টের নির্দেশে নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। সত্যজিৎবাবুর দাবি, “সেই রাগেই ছাত্র পরিষদ ফুঁসছিল। শনিবার রাতে ওই কলেজের ছাত্র প্রীতম ঘোষ, সৌমেন রায়, প্রাক্তন ছাত্র নিখিল সিংহ-সহ ৬-৭ টিএমসিপি সদস্য-সমর্থক কলেজে ঠাকুর দেখতে যান। ওঁদেরকে দেখেই কিছু ছাত্র পরিষদ সমর্থক নানা কটূক্তি ও গালিগালাজ করতে থাকে। প্রতিবাদ করায় আমাদের সমর্থকদের রড ও লাঠি দিয়ে মারা হয়। প্রীতম, সৌমেন, নিখিলকে সাঁইথিয়া হাসপাতাল থেকে রাতেই সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।”
সাঁইথিয়া শহর তৃণমূল সভাপতি মানস সিংহের অভিযোগ, “আসলে এখানকার কংগ্রেস নেতৃত্বের মদতেই ছাত্র পরিষদ সমর্থকেরা এ রকম করতে পারছে।” পুলিশের বিরুদ্ধে ‘নিষ্ক্রিয়তা’ ও ‘পক্ষপাতিত্ব’-এর অভিযোগও তুলেছে টিএমসিপি। মানসবাবুর বক্তব্য, “শনিবার রাতেই পুলিশ যদি সময়মতো ব্যবস্থা নিত, তা হলে টিএমসিপি-র ওই তিন সমর্থককে মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হত না।”
টিএমসিপি-র যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি সুরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কোনও সন্ত্রাস হয়নি। বরং টিএমসিপি ওই কলেজের নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি নিজেদের সমর্থক ও সংগঠনের অভাবে।” তাঁর পাল্টা দাবি, “গুটিকতক সমর্থক নিয়ে ছাত্র সংসদের ভোট বানচাল করার জন্য টিএমসিপি নানা ভাবে চেষ্টা করেছিল। কোনও ভাবেই কিছু না করতে পেরে শেষে হাইকোর্টে যায়। সাময়িক ভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের নির্দেশেই ভোট হয়েছে। ছাত্র পরিষদই সেখানে ক্ষমতায় এসেছে। সেই রাগেই শনিবার রাতে কলেজের সরস্বতী মণ্ডপ চত্বরে আমাদের সমর্থকদের উপরে টিএমসিপি-র সদস্যেরা হামলা চালায়। মণ্ডপ, আলো ভেঙে দেয়।”
সিউড়ি হাসপাতালে আহতেরা।
আহত ছাত্র পরিষদ সমর্থকদের সাঁইথিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয় জানিয়ে সুরঞ্জনবাবুর আরও অভিযোগ, রবিবার ফের সোমনাথ মুখোপাধ্যায় নামে তাঁদের এক সমর্থককে শহরের সন্ধানী মোড়ে তাঁর বাড়ির কাছেই রড ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে টিএমসিপি-র সমর্থকেরা। বর্ধমান মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন ওই যুবক সাঁইথিয়া কলেজের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক। সাঁইথিয়ার পুরপ্রধান তথা কংগ্রেস নেতা বীরেন্দ্র পারখও পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দাবি করেছেন, “পুলিশ সঠিক ভূমিকা নিলে শনিবার রাতের ঘটনা এড়ানো যেত। এ দিন সোমনাথের উপরেও এ ভাবে হামলা হত না।” টিএমসিপি নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, মারধর নয়, মোটরবাইক দুর্ঘটনায় জখম হয়েছেন সোমনাথ।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উত্তম মণ্ডল বলেন, “আমি বাইরে আছি। শুনেছি পুজো মণ্ডপে ভাঙচুর হয়েছে। পুলিশকে বলেছি ব্যবস্থা নিতে।” তিনি জানান, ছাত্র সংসদের ২৮টি আসন। গত ১৮ ডিসেম্বর ভোট হওয়ার কথা ছিল। তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রের মামলার ভিত্তিতে হাইকোর্ট নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত করে। গত ১০ জানুয়ারি ফের নির্বাচন প্রক্রিয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। তবে তৃতীয় বর্ষের কলা বিভাগের নির্বাচনের উপরে স্থগিতাদেশ বহাল ছিল। অধ্যক্ষ বলেন, “২৮টি আসনের জন্য ২৬ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তার মধ্যে তৃতীয় বর্ষের চারটি আসন বাদ রাখা হয়েছে।”
কলেজ সূত্রের খবর, বাকি ২২টি আসনে কেবল ছাত্র পরিষদই মনোনয়পত্র দেওয়ায় তাদের জয়ী ঘোষণা করা হয়। ১৪ তারিখ নোটিস দেওয়ার পরে ১৬ তারিখ নতুন ছাত্র সংসদ গঠিত হয়েছে।

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.