পরিত্যক্ত খনি এলাকায় ঘরের ছাদ ধসে গুরুতর জখম হল এক কিশোর। রবিবার দুপুরে জামুড়িয়ার শ্রীপুর এরিয়ায় একটি বন্ধ খনিতে এই ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, লোহা চুরি করতে গিয়েই এমন দুর্ঘটনা। পুলিশ এবং সিআইএসএফ ঘটনাস্থলে গেলে এলাকায় অবৈধ খনন ও লোহার কারবার বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভও দেখান তাঁরা। |
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইসিএলের পরিত্যক্ত ওই খনির ওয়ার্কশপ ঘরে বেশ কিছু কেব্ল ও লোহা রয়েছে। এ দিন দুপুরে সেখানে যায় পাঁচ কিশোর। তারা ওই ঘরে ঢোকার কিছু পরেই ছাদ ধসে পড়ে। চাপা পড়ে যায় তিন জন। দু’জনকে সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার করেন আশপাশের এলাকার লোকজন। কিন্তু এক জনকে উদ্ধার করা যায়নি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ এবং সিআইএসএফ। এলাকার লোকজন সিআইএসএফ-কে ঢুকতে বাধা দেন। তাঁরা অভিযোগ করতে থাকেন, ওই এলাকার অদূরেই সিআইএসএফ ক্যাম্প থাকা সত্ত্বেও অবাধে চলছে অবৈধ কয়লা খনন ও লোহা চুরি। বছরখানেক আগেই এই বন্ধ কোলিয়ারিতে খনিগর্ভে ঢুকে আর ফিরে আসেনি দুই কিশোর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন বাসিন্দার অভিযোগ, ইসিএল এবং সিআইএসএফের গাফিলতিতেই বারবার এমন ঘটছে। এলাকার মুকারি মহল্লায় একটি বড় অবৈধ লোহার কাঁটা চলে। শ্রীপুর ৩ নম্বর ও মোসনাবাদেও দু’টি লোহার কাঁটা তৈরি হয়েছে। পরিত্যক্ত কোলিয়ারিতে লোহা, কেব্ল ও অন্য যন্ত্রাংশ দিনের আলোতেও পাচার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের কোনও নজর নেই।
সন্ধ্যায় ওই কিশোরকে উদ্ধার করে গুরুতর জখম অবস্থায় আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মাসখানেক আগে এই এলাকাতেই লোহা চুরির অভিযোগে তার দাদা মহম্মদ মুন্নাকে গ্রেফতার করা হয়। সে এখন জেল হাজতে রয়েছে।
জামুড়িয়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি পূর্ণশশী রায়ের দাবি, এক বছর আগেই ইসিএল এবং পুলিশকে লোহা চুরির বিষয়টি নিয়ে সতর্ক থাকার আবেদন জানিয়েছিলেন তাঁরা। খনি কর্তৃপক্ষকে হয় জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা অথবা দরপত্র ডেকে সব লোহা বিক্রি করে দেওয়ার আবেদনও জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোলিয়ারি কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেননি বলে তাঁর অভিযোগ। তাঁর কথায়, “দিনের বেলায় থাকেন শুধু মহিলা নিরাপত্তারক্ষী। রাতে মাত্র দু’জন পুরুষ নিরাপত্তাকর্মী। সামনেই সিআইএসএফ ক্যাম্প। অথচ অবৈধ লোহার কারবার বেড়ে চলেছে।” |
সিপিএমের অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক মনোজ দত্তের আবার অভিযোগ, “যখন কয়লা কারবার বন্ধ করতে অভিযান হয়, তখন লোহা কারবার চলে রমরমিয়ে। সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরে এমনটা বারবারই দেখা যাচ্ছে। ইসিএল, সিআইএসএফ এবং পুলিশ এই লোহা কারবারে মদত দিচ্ছে। মাঝে মাঝে নজর ফেরানোর জন্য অভিযান হয় বটে, তবে তাতে বড় চোরেরা কেউ ধরা পড়ে না।”
ইসিএলের শ্রীপুর এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার সুজিতকুমার দাস জানান, নজরদারি চালানোর জন্য তাঁরা শ্রীপুর পুলিশ ফাঁড়িকে একটি মোবাইল ভ্যান দিয়েছেন। সিআইএসএফ-কেও একটি মোটরবাইক ও দু’টি গাড়ি দেওয়া হয়েছে। ইসিএলের নিরাপত্তারক্ষী এবং সিআইএসএফ রাতের দিকে টহলও দেয়। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় আবার জানান, মাসখানেক আগেও পুলিশ ও সিআইএসএফ-কে নজরদারি আরও বাড়ানোর জন্য বলেছিলেন তাঁরা।
আসানসোলের এডিসিপি ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “এক কিশোর চাপা পড়েছিল। কিন্তু এখনও কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত হবে।” লোহার কাঁটা চলার ব্যাপারে নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই তাঁরা তদন্ত করবেন বলে আশ্বাস এডিসিপি-র। |