ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রাণ গেল বাবা-ছেলে সহ ৩ মৎস্যজীবীর। জখম ৭ জন। শুক্রবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী সমুদ্রের ধুবলার চরের কাছে। পুলিশ জানায়, নিহতেরা হলেন দুলাল দাস (৪৫), তাঁর বড় ছেলে সিফন দাস (২৫) ও মনমোহন দাস (২৫)। হতাহতেরা সকলেই কাকদ্বীপের ৮ নম্বর কালীনগর এলাকার বাসিন্দা।
গত ২১ জানুয়ারি কাকদ্বীপ থেকে কয়েকটি ট্রলারে মৎস্যজীবীরা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যান। ওই দলে ছিলেন দুলালবাবু, তাঁর ছেলে এবং মনমোহনবাবু। সমুদ্র থেকে ফিরে মৎস্যজীবীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ দু’টি ট্রলারে জনা পঞ্চাশ দুষ্কৃতী কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে হানা দেয়। মাঝির মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ধরে ‘এফ বি মা জগদ্ধাত্রী’ নামে তাঁদের একটি ট্রলার দুষ্কৃতীরা বাংলাদেশের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সে কথা জানতে পেরে অন্য ট্রলারগুলি ধাওয়া করলে দুষ্কৃতীরা এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। ‘এফ বি বাসন্তী’ ট্রলারে ছিলেন দুলালবাবু এবং সিফন। মনমোহনবাবু ছিলেন অন্য একটি ট্রলারে। দুষ্কৃতীদের গুলিতে তিন জনের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। |
শোকাহত পরিবার। ছবি: দিলীপ নস্কর |
শুক্রবার গভীর রাতে তিনটি মৃতদেহ এবং আহতদের নিয়ে ফেরেন মৎস্যজীবীরা। সঙ্গে করে ‘দুষ্কৃতী’ বলে পাঁচ জনকে নিয়ে এসে তাঁরা পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশের কাছে মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীদের ট্রলারে থাকা ওই পাঁচ জন হামলার সময়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দেয়। দুষ্কৃতীরা চলে গেলে তাদের উদ্ধার করা হয়। কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক বিজন মাইতির দাবি, “১১ জন মৎস্যজীবী-সহ ‘এফ বি তারা মা’ নামে আর একটি ট্রলারও দুষ্কৃতীদের খপ্পরে পড়েছিল। ওই ট্রলারটা এখনও নিখোঁজ। প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।”
আহতদের প্রথমে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় চার জনকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। শনিবার ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পলাশ দাস ও সুভাষ দাস জানান, তাঁরা ছিলেন ‘এফ বি বাসন্তী’ ট্রলারে। দুষ্কৃতীরা বাংলাদেশের দিক থেকে আসে। ঘণ্টা তিনেক ধরে তারা এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে। পলাশবাবুর মাথায় এবং সুভাষবাবুর ডান কাঁধে গুলি লেগেছে। সহ-মৎস্য অধিকর্তা (ডায়মন্ড হারবার) গিয়াসুদ্দিন শেখ বলেন, “ঘটনার কথা প্রশাসনের সব মহলে জানানো হয়েছে।” আজ, রবিবার মৎস্যমন্ত্রী আবু হেনা ডায়মন্ড হারবারে আসবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
এ দিন সকালে কাকদ্বীপ থানায় যান দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কঙ্করপ্রসাদ বারুই। পুলিশের দাবি, জেরায় আটকেরা জানিয়েছে, তাদের নাম মহম্মদ মোস্তাফা, মহম্মদ নুরুল ইসলাম, জাকির খান, হিরু খান, বিষ্ণুপদ বিশ্বাস। সকলে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। তারাও মৎস্যজীবী। দুষ্কৃতীরা তাদের অপহরণ করেছিল। শুক্রবার সুযোগ বুঝে তারা সমুদ্রে ঝাঁপ মারে। সকালেই ওই পাঁচ জনকে কুলপি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) বলেন, “ওই পাঁচ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যাবতীয় অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শুরু হয়েছে।”
বিকেলে আহতদের দেখতে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে যান কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী চৌধুরীমোহন জাটুয়া, সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী শ্যামল মণ্ডল, জেলা সভাধিপতি শামিমা শেখ প্রমুখ। পরে তাঁরা ৮ নম্বর কালীনগরে যান। সেখানে নিহত প্রত্যেকের পরিবারের হাতে ১০ হাজার টাকা করে তুলে দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই টাকা তুলে দেওয়া হল। আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।” সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, “গোটা বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। নিখোঁজদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।” |