চার মাস হয়ে গেল, রাজ্যের সব জেলায় মানবাধিকার আদালত চালু হয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত মামলা দায়ের হয়েছে শুধু একটা! মালদহে।
কেন এই হাল? রাজ্যের আইন ও বিচারমন্ত্রী মলয় ঘটকের ব্যাখ্যা, “১৯টি জেলাতেই যে মানবাধিকার আদালত খুলেছে, মানুষ তা জানেন না। সে ভাবে প্রচারও হয়নি। খুব তাড়াতাড়ি আমরা সেই ঘাটতি পূরণ করব।”
জেলায় জেলায় মানবাধিকার আদালত গড়ে তুলতে বছর ছয়েক আগেই রাজ্য সরকারগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্র। বামফ্রন্ট জমানার শেষ দিকে এ নিয়ে কিছুটা নাড়াচাড়া হলেও বাস্তবে তা দানা বাঁধেনি। রাজ্যে নতুন সরকার আসার দু’মাসের মধ্যে, ২০১১-র ১৫ জুলাই মানবাধিকার আদালত তৈরি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিচার বিভাগ। তাতে মানবাধিকার আদালতের বিচারকের দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা জজকে। আইন দফতরের এক কর্তার কথায়, “দেশের অধিকাংশ মানবাধিকার কমিশনে মামলার পাহাড় জমছে। বিচার পেতে সাধারণ মানুষকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এরই সুরাহায় কেন্দ্র মানবাধিকার আদালত তৈরি করতে বলেছে।”
এর বিশেষত্ব কী? রাজ্যের ডিরেক্টর (প্রসিকিউশন) তাজ মহম্মদ বলেন, “সরকারের পক্ষে মামলা লড়বেন সরকারি আইনজীবী, এটাই দস্তুর। তবে মানবাধিকার আদালতে সরকারি কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলে অভিযোগকারীর পক্ষে সরকারি কৌঁসুলি মামলা লড়বেন। এবং এর জন্য বাদী পক্ষকে কোনও ফি দিতে হবে না।” কিন্তু ঘটনা হল, এই সুবিধার কথা সে ভাবে প্রচার না-পাওয়ায় এখনও অধিকাংশ মানুষ সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনেই যাচ্ছেন। যেমন কাকদ্বীপের সুবীর পাখিরা। সম্প্রতি তিনি ভবানী ভবনে কমিশনের অফিসে এসেছিলেন ভূমি দফতরের এক কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে। সুবীরবাবুর মন্তব্য, “জেলায় যে এমন কোর্ট হয়েছে, জানি-ই না!” রানাঘাটের এক দম্পতির অভিযোগ, মেয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্তে পুলিশ ‘গা করছে না’ বলে মাস সাতেক আগে করা নালিশ সম্পর্কে কমিশন এখনও কিছু জানায়নি।
এখন ওঁদের প্রশ্ন, এ সব নিয়ে মানবাধিকার আদালতের দ্বারস্থ হওয়া যাবে কি? তাজ মহম্মদ বলেন, “সুবিচার দেওয়াই এই আদালত গঠনের উদ্দেশ্য। কমিশনের সুপারিশ অভিযোগকারীর অপছন্দ হলে, বা বিচার পেতে দেরি হলে তিনি মানবাধিকার আদালতে যেতেই পারেন।” বস্তুত মানবাধিকার কমিশনে চার-পাঁচশো অভিযোগ জমেছে। দীর্ঘদিন স্থায়ী চেয়ারম্যান নেই, কমিশনের সদস্য বিচারপতি নারায়ণচন্দ্র শীল দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। কমিশন-সূত্রের খবর: ২০০৯-এ নথিভুক্ত কিছু অভিযোগের শুনানি চলছে। শীল বলেন, “তদন্তের প্রক্রিয়াটাই তো দীর্ঘ! তা-ও মামলার বোঝা আগের চেয়ে কমেছে। ২০১১-র শুনানি চলছে।” |