পদের সংখ্যা ১২। কাজ করছেন ১৩ জন! একটি পদের অস্তিত্ব নেই। তবু সেই পদে কর্মরত এক অফিসার। রাজ্য মৎস্য দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করে ‘অস্তিত্বহীন’ ওই পদে কর্মরত ত্রয়োদশ ব্যক্তির বেতনও সুনিশ্চিত করেছে।
গোটা ঘটনার মধ্যে যে একটা ‘গণ্ডগোল’ রয়েছে, তা মানছেন মৎস্যমন্ত্রী আবু হেনা। তাঁর কথায়, “ওই বিজ্ঞপ্তির কথা আমি জানি না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।” দফতরের অধিকর্তা ভরতচন্দ্র সাহা অবশ্য নিজের দেওয়া ‘নোট’-এর উল্টো পথে হেঁটে বলেছেন, “১২টি পদে ১২ জনই রয়েছেন। ১৩ জন নয়।”
মৎস্য দফতরের উপ অধিকর্তার অনুমোদিত পদের সংখ্যা যে ১২টি, গত ৩ জানুয়ারি সচিবকে চিঠি দিয়ে সে কথা জানিয়েছেন ভরতবাবু। সব ক’টি পদেই যে অফিসার রয়েছেন (এক জন সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদে ডেপুটেশনে গিয়েছেন), তা-ও জানিয়েছেন অধিকর্তা।
তা হলে সমস্যা কোথায়?
চিঠিতে বলা হয়েছে, পিএসসি থেকে সরাসরি নিয়োগপত্র পেয়ে ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে উপ-অধিকর্তা (মেরিন) পদে যোগ দেন সন্দীপ মণ্ডল। এর প্রায় আড়াই মাস পর মৎস্য দফতরের এক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, উপ-অধিকর্তা (মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড প্যারাসাইটোলজি বা এমঅ্যান্ডপি) পদটির বিলোপ ঘটিয়ে উপ-অধিকর্তা (মেরিন) পদ তৈরির জন্য অর্থ দফতরের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেই প্রস্তাবে এখনও সায় দেয়নি অর্থ দফতর।
এখানেই শেষ নয়। অস্তিত্বহীন উপ-অধিকর্তা (মেরিন) পদে কর্মরত সন্দীপবাবুর বেতন সুনিশ্চিত করতে তাঁকে উপ- অধিকর্তা (এমঅ্যান্ডপি)-র অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। মাসখানেক আগে সেই অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফলে বর্তমানে সন্দীপবাবু কেবল উপ-অধিকর্তা (মেরিন)।
চিঠিতে অধিকর্তা লিখেছেন, ‘যে-হেতু উপ-অধিকর্তা (মেরিন) বলে অনুমোদিত কোনও পদ নেই এবং সদর দফতরে উপ-অধিকর্তার অন্য কোনও পদ খালি নেই, তাই ওই পদের ভিত্তিতে সন্দীপবাবুকে বেতন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।’
এই ‘কঠিন’ সমস্যার সমাধান করতে অবশ্য বেশি সময় নেয়নি দফতর। গত ২৪ জানুয়ারি দফতরের উপসচিব সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্দেশ দিয়েছেন, জনস্বার্থে উপ-অধিকর্তা (মেরিন) সন্দীপ মণ্ডলের জন্য যে কোনও উপ-অধিকর্তার শূন্য পদের নামে বেতনের ব্যবস্থা করতে হবে। যদিও কোনও পদ খালি নেই বলে সচিবকে জানিয়েছেন অধিকর্তা।
এমন নির্দেশের কথা শুনে শনিবার মন্ত্রী বলেন, “বিষয়টি দেখব। তবে কেউ ডেপুটেশনে গেলে তাঁর জায়গায় কাউকে নেওয়া যায় না।” গোটা বিষয়টি আগের আমল থেকে চলে আসছে বলে জানান তিনি। অন্য দিকে, ‘পদের-অতিরিক্ত’ লোক নেই বলে দাবি করলেও অধিকর্তা নিজের চিঠির প্রসঙ্গে বলেন, “এমন চিঠির কথা আমার স্মরণে নেই। পরে দেখব।” |