জমি অধিগ্রহণ হোক বা খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর ‘বামপন্থী’ অবস্থানেই বেঁধে রেখে বিপাকে ফেলতে চান সিপিএম নেতৃত্ব। পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক দলিলে জমি অধিগ্রহণ-বিরোধিতার সেই কট্টর লাইন নেওয়ার কথাই বলেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। পশ্চিমবঙ্গে সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের রাশ হাতে নিয়ে ৩৮ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে কট্টর অবস্থান নিয়ে মমতাকেই বিপাকে ফেলতে চাইছে সিপিএম। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রাজ্যে শিল্পায়ন করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু রাজ্যবাসীর যে শিল্পায়নের প্রত্যাশা রয়েছে, তা সিপিএম নেতৃত্ব জানেন। সেই প্রত্যাশা পূরণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাতে হাততালি কুড়োতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে এ বার মমতার থেকেও কড়া অবস্থান নিচ্ছে সিপিএম।
মমতার আপত্তিতে কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণ বিল পাশ হয়নি। সিপিএমের রাজনৈতিক প্রস্তাবেও বিল নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে। পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘প্রস্তাবিত বিলে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ-পুনর্বাসন যথেষ্ট না হওয়ায় কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না। বেসরকারি শিল্পের জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনও শর্ত বাধ্যতামূলক করা হয়নি।’
রাজনৈতিক প্রস্তাবের যে খসড়া আজ কারাট প্রকাশ করেছেন, তাতে পশ্চিমবঙ্গের জন্য নতুন দিশা-নির্দেশ রয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাহাড়ে সংগঠন ধরে রাখতে পাহাড়বাসীর জাতিসত্তা বা আত্মপরিচয়ের রাজনীতি মেনে নিতে চাইছেন দলের একাংশ। কিন্তু রাজনৈতিক প্রস্তাবের খসড়ায় জাতিসত্তার রাজনীতির বিরুদ্ধেই মত দেওয়া হয়েছে। মমতার অবস্থান, কৃষকদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে জমি নেওয়া যাবে না। জমির একশো শতাংশই বেসরকারি সংস্থাকে সরাসরি কিনে নিতে হবে। শিল্পমহলের চাপে ও শিল্পায়নের সুবিধায় মমতা যাতে এই অবস্থান থেকে নড়তে না পারেন, তার জন্য তাঁর থেকেও কড়া অবস্থান নিয়েছে সিপিএম। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, ওড়িশা, অন্ধ্র ও মধ্যপ্রদেশেও কৃষকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে সিপিএম লড়বে বলে রাজনৈতিক দলিলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-নিরুপম সেনরা যে অবস্থান নিয়েছিলেন, এই অবস্থান তার একেবারে উল্টো। কারাট এই অবস্থান নিয়ে আলিমুদ্দিনের নেতাদেরই সুবিধা করে দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ বিধানসভা ভোটের আগে মমতা যে রকম ‘কৃষক-দরদী’ অবস্থান নিয়েছিলেন, এখন তার থেকেও বেশি ‘কৃষক-দরদী’ অবস্থান নিতে পারবে সিপিএম। ফসলের দাম না পেয়ে ও ঋণের দায়ে কৃষক আত্মহত্যার অভিযোগ ওঠায় সেই পথ সুগম হয়ে গিয়েছে।
শুধু জমি নয়, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতা বা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো রক্ষার প্রশ্নেও সিপিএমের সঙ্গে এক মেরুতে অবস্থান মমতার। তিনি যেমন খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ আটকেছেন, তেমন যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর আঘাত আসবে বলে লোকপাল বিলে বাদ সেধেছেন। কলকাতায় সিপিএমের সভায় গিয়ে মমতার প্রশংসাও করেন কারাট। আজও তাঁর মন্তব্য, “কেন্দ্রে সরকারে থেকেও ওঁরা যদি এই অবস্থান নেন, তা হলে ভাল কথা।” |