প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী • কলকাতা |
গোদের উপর বিষফোঁড়া।
একেই পর্যাপ্ত জোগানের অভাবে ক্রমশ মহার্ঘ হয়ে উঠছে কয়লা। যে সমস্যা সামাল দিতে হিমশিম রাজ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থাগুলি। এ বার পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডের খনিতে মাওবাদী হানার জেরে আরও আতান্তরে তারা। কারণ, সম্প্রতি এক বার তার শিকার হওয়ায় ফের মাওবাদী হামলার ভয়ে সেখানে থমকে গিয়েছে এমটা গোষ্ঠীর নতুন খনিতে কয়লা তোলার পরিকল্পনা। অথচ ওই খনিতে কয়লা উত্তোলন শুরু হলে, তা আসার কথা পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের উৎপাদন কেন্দ্রে। ফলে মাওবাদী হামলার আতঙ্কে ঝাড়খণ্ডের ওই খনিতে কয়লা তোলার কাজ আটকে থাকায় আখেরে ক্ষতি রাজ্যেরই।
পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ সচিব মলয় দে-র দাবি, ওই খনিতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে তাঁদের ইতিমধ্যেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ঝাড়খণ্ড সরকার। পুলিশি-নিরাপত্তা জোগানো নিয়ে তৎপর হওয়ার কথা জানিয়েছেন ওই রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব জে বি তুবিদ-ও। কিন্তু এমটা কোল লিমিটেডের সিইও এবং ডিরেক্টর বিকাশ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ঝাড়খণ্ড সরকারের কাছে নিরাপত্তার আর্জি জানালেও, তাদের কাছ থেকে কোনও প্রতিশ্রুতি পাননি তাঁরা। |
সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডে এমটা গোষ্ঠীর পাচওয়ারা (সেন্ট্রাল) খনিতে মাওবাদী হামলায় খুন হয়েছেন এক কর্মী। তার পরই নিরাপত্তার অভাব নিয়ে আশঙ্কায় পাচওয়ারা (উত্তর) খনিতে কয়লা তোলা পিছিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে এমটা গোষ্ঠী। এ প্রসঙ্গে বিকাশবাবু জানান, “উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা না-হলে ওই খনিতে কাজ শুরু করবেন না বলে জানিয়েছেন কর্মীরা। বিষয়টি ঝাড়খণ্ড সরকারের কাছে জানিয়েছি। তাদের কাছে থেকে নিরাপত্তা না-পেলে নতুন খনিতে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে না।”
এই খনিতে কয়লা তোলার কাজ পিছিয়ে গেলে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের সঙ্কট যে আরও বাড়বে, তা মানছে সংশ্লিষ্ট মহল। বিকাশবাবুও জানাচ্ছেন, “ওই খনিতে বছরে দেড় কোটি টন পর্যন্ত কয়লা উৎপাদন হওয়ার কথা। যার পুরোটাই রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমকে সরবরাহ করতে চুক্তিবদ্ধ আমরা। খনি থেকে কয়লা তোলার বিষয়ে যাবতীয় অনুমোদনও চূড়ান্ত হওয়ার মুখে। সব ঠিকঠাক চললে, তিন মাসের মধ্যেই কয়লা উত্তোলন শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু উপযুক্ত নিরাপত্তা না পাওয়ায় উৎপাদন শুরুর ওই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।”
বিকাশবাবুর দাবি, “পাচওয়ারা (উত্তর) খনিতে পুলিশি নিরাপত্তার জন্য ঝাড়খণ্ড সরকারের আর্জি জানিয়েছি। এর জন্য যা খরচ হবে, তা-ও দিতে তৈরি আমরা। কিন্তু এ নিয়ে সব জানানোর পরেও তাদের কাছ থেকে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি পাইনি। তাই এ নিয়ে ফের আর্জি জানাব।” অবশ্য তুবিদের দাবি, “মাওবাদী হামলার পর ইতিমধ্যেই পাচওয়ারা (সেন্ট্রাল) খনিতে পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্য কোথাও নিরাপত্তা নিয়ে কেউ সহযোগিতা চাইলেও আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।”
পাচওয়ারা (উত্তর) খনিতে উৎপাদন শুরু থমকে যাওয়া নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ যে উদ্বিগ্ন, তা স্পষ্ট জানিয়েছেন মলয়বাবু। তিনি বলেন, “ওই খনির কয়লা এ রাজ্যেই আসবে। তাই সেখানকার কর্মী ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা আগ্রহী। ইতিমধ্যেই ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে তারা । |