তিন রাজ্যর বাইরে পা রেখেই দলের শক্তি বাড়াতে চান কারাট
প্রয়োজনে বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে আপস করে হলেও লম্বা দৌড়ের জন্য সিপিএমকে তৈরি করতে চাইছেন প্রকাশ কারাট। পশ্চিমবঙ্গ-কেরলে দল ক্ষমতাচ্যুত। এই অবস্থায় আগামী পার্টি কংগ্রেসে সিপিএমের নিজস্ব শক্তি বাড়ানোই দলের ‘মূল মন্ত্র’ হতে চলেছে। যদিও সে পথে যে অনেক কাঁটা, সেটা তিনি নিজেও ভাল করে জানেন।
প্রকাশ কারাট আজ বিংশতম পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রস্তাবের খসড়া প্রকাশ করেছেন। তাতে কংগ্রেস ও বিজেপিকে ‘সমান রাজনৈতিক শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তিনি। কিন্তু নিজস্ব শক্তি না থাকলে যে কংগ্রেস-বিজেপির বিরুদ্ধে রণহুঙ্কার ছেড়ে কোনও লাভ নেই, কারাট তা ভালই বুঝতে পারছেন। তাই তৃতীয় বিকল্প হিসেবে অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি দলগুলিকে নিয়ে ‘বাম গণতান্ত্রিক মঞ্চ’ তৈরির কথাও বলতে হচ্ছে তাঁকে। সেখানেও সমস্যা। জয়ললিতা বা মায়াবতীর দলের মতো ‘সুবিধাবাদী’ আঞ্চলিক দলগুলি যে সুযোগ পেলেই বিজেপি বা কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলাবে, তা-ও কারাট জানেন। তবু সংসদের ভিতরে-বাইরে তাদের সঙ্গেই বিষয় বা প্রসঙ্গ ভিত্তিক আন্দোলনে যেতে হবে বা বিভিন্ন রাজ্যে প্রয়োজনে নির্বাচনী সমঝোতা করতে হবে।
কারাটের যুক্তি, এ ছাড়া উপায় নেই। সিপিএম নিজে শক্তিশালী হলে তবেই এই দলগুলিকে নিয়ে মজবুত তৃতীয় বিকল্প গড়ে তোলা সম্ভব। এখন যখন সব থেকে শক্তিশালী দুর্গ পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম ‘আক্রান্ত’, তখন নিজস্ব শক্তি বাড়ানো ও তিন রাজ্যের বাইরে সংগঠনের প্রভাব বিস্তারকেই বেশি জরুরি বলে মনে করছেন তিনি। রাজনৈতিক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনে ভরাডুবি এবং অন্য রাজ্যে এগোতে না পারার ফলে জাতীয় রাজনীতিতে সিপিএমের অবস্থান দুর্বল হয়ে গিয়েছে।’ তাই দলের রাজনৈতিক রণকৌশল হিসেবেই সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে নিজস্ব শক্তি মজবুত করার উপরে।
সিপিএমের ২০০৮-এর পার্টি কংগ্রেস ও আগামী এপ্রিলের কোঝিকোড় পার্টি কংগ্রেসের মধ্যে অনেকটাই ফারাক গড়ে দিয়েছে নির্বাচন। গত লোকসভা ও পশ্চিমবঙ্গ-কেরলের বিধানসভা ভোটের পরে জাতীয় রাজনীতির মানচিত্রে সিপিএম তথা বামেদের অবস্থান আমূল বদলে গিয়েছে। গত পার্টি কংগ্রেসের সময় ৬২ জন সাংসদকে নিয়ে ইউপিএ-কে বাইরে থেকে সমর্থন করছিলেন বামেরা। তাঁরাই ছিলেন জাতীয় রাজনীতির চালিকাশক্তি। কিন্তু সমর্থন প্রত্যাহার ও নির্বাচনী ভরাডুবির পরে সিপিএম তথা বামেরা এখন সব দিক থেকেই কোণঠাসা। কারাট জানেন, দলের কাণ্ডারী হিসেবে এর দায় তিনি এড়াতে পারেন না। সেই নির্বাচনে তাঁর তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এখন আবার ঘুরিয়ে আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে জোট তৈরির কথা বললেও ‘তৃতীয় ফ্রন্ট’ শব্দটাকে এড়িয়েই যেতে চান কারাট। বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে ফাঁপা রণহুঙ্কার না দিয়ে, ধীরে ধীরে দলের শক্তি বাড়ানোর দিকে জোর দিতে চান তিনি।
কিন্তু গত কয়েক দশকে সিপিএম পশ্চিমবঙ্গ-কেরল-ত্রিপুরার বাইরে দাঁত বসাতে পারেনি। হিন্দি বলয়ে জাতপাতের রাজনীতির সামনে সিপিএমের ‘শ্রেণি সংগ্রামের আদর্শ’ পাল্লা দিতে পারছে না। কারাট নিজে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে ছিলেন। সেখানে সংগঠন এতই দুর্বল যে পার্টি-ক্লাসের জন্যও টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয় না অনেক ক্ষেত্রে। উত্তরপ্রদেশ ও পঞ্জাবে এ বারের বিধানসভা নির্বাচনেও যে সিপিএম বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারবে না, আজ তা-ও স্বীকার করে নিয়েছেন কারাট। তা হলে কী ভাবে দল তিন রাজ্যের বাইরে পা ফেলবে? তার কোনও দিশা আজ দেখাতে পারেননি কারাট। তবে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, হিন্দি বলয়ে জাতপাত তথা জাতিসত্তা-ভিত্তিক রাজনীতি করে শক্তি বাড়াতে চায় না সিপিএম। বরং রাজনৈতিক প্রস্তাব বলছে, দলের মূল জনভিত্তি, শ্রমিক ও কৃষকদের মধ্যে জমি ও জীবনধারণের অধিকার নিয়ে আরও বেশি করে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাঁর বক্তব্য, “হিন্দি বলয়ে শক্তি বাড়ানোর প্রসঙ্গটি নিয়ে পার্টি কংগ্রেসের সাংগঠনিক রিপোর্টে বিস্তারিত বলা থাকবে।”
শুধু তিন রাজ্যের বাইরে সংগঠন ছড়ানো নয়, পশ্চিমবঙ্গ-কেরল-ত্রিপুরাতেও দলের হারানো শক্তি ফিরে পাওয়ার দিশা এই রাজনৈতিক প্রস্তাবে রয়েছে কি না, তা নিয়ে দলের একটা বড় অংশের মনে প্রশ্ন রয়েছে। কারাট-শিবিরের বক্তব্য, লোকসভা নির্বাচনের পর বিজয়ওয়াড়ায় বর্ধিত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকেই একটি রাজনৈতিক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। তারপরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিশেষ বদল হয়নি। তাই বিজয়ওয়াড়ার দলিলের সঙ্গে পার্টি কংগ্রেসের খসড়া রাজনৈতিক প্রস্তাবের বিশেষ কোনও পার্থক্য না থাকাই স্বাভাবিক। বিজয়ওয়াড়া থেকে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলে বাম সরকার রক্ষার ডাক দিয়েছিল সিপিএম। ওই দুই রাজ্যে বাম দুর্গ পতনের পর এখন সর্বশক্তি দিয়ে ত্রিপুরার বাম-সরকারকে রক্ষা করার ডাক দিচ্ছে সিপিএম।
শুধু তৃতীয় বিকল্প গড়ে তোলা নয়, বাম ঐক্য বজায় রাখার ক্ষেত্রেও সিপিএম বারবার ব্যর্থ হচ্ছে বলে শরিক দলগুলি মনে করছে। সিপিআই পশ্চিমবঙ্গে ভরাডুবির জন্য সিপিএমের দাদাগিরিকে দায়ী করেছে। কেরলে হারের জন্যও সিপিএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে দায়ী করেছে তারা। এ নিয়ে কারাটের বক্তব্য, “প্রধান শরিক হিসেবে আমরা ব্যর্থতার দায় নিতে রাজি। কিন্তু ৩৪ বছরের সাফল্যের কৃতিত্ব ক্ষেত্রেও একটা ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন।” কেরল নিয়ে কারাটের যুক্তি, “সিপিএম ও বাম জোটে ঐক্য থাকায় আমরা বিধানসভায় খুব ভাল করেছি। মাত্র ৩টি আসন কম থাকায় বামেরা সরকার গড়তে পারেনি।” সিপিআইয়ের সঙ্গে বাকযুদ্ধ সত্ত্বেও দলের একক জোর না থাকায় বাম ঐক্য আরও মজবুত করার কথা বলতে হচ্ছে কারাটকে। বাস্তবের সঙ্গে সমঝোতা করেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.