নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) প্রাক্তন চেয়ারম্যান জি মাধবন নায়ার সহ চার বিজ্ঞানীর বিরুদ্ধে কেন্দ্রের নজিরবিহীন শাস্তিমূলক ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়ে গেল। সরকার তথা প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় নিজেদের অবস্থানে এখনও অটল। কিন্তু মাধবনের সমর্থনে সরব হয়েছেন বিজ্ঞানী ও দক্ষিণের আমলাদের একাংশ। এমনকী সরকারের বিরুদ্ধে আজ তোপ দেগেছেন প্রধানমন্ত্রীর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা সি এন রাও। তাঁর মন্তব্য, “নায়ারকে আবর্জনার মতো ছুড়ে ফেলা হয়েছে। এর পর আর কোনও বিজ্ঞানীই সরকারের সংস্থায় কাজ করতে চাইবেন কি?’’
স্বাভাবিক ভাবেই রাওয়ের সমালোচনার পর কংগ্রেস তথা সরকারের কিছুটা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। কিন্তু সরকারের তরফে এই বার্তাই দেওয়া হচ্ছে যে, নায়ার চাইলে আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু তা তিনি করছেন না কেন? আসলে ইসরোর চেয়ারম্যান পদে থাকাকালীন একটি বেসরকারি সংস্থাকে এস ব্যান্ডের স্পেকট্রাম পাইয়ে দেওয়ার ঘটনায় যে অনিয়ম হয়েছিল তা অস্বীকারের উপায় নেই। অন্য দিকে কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “স্পেকট্রাম বণ্টনে অনিয়মের তদন্ত করতে সরকার কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী কেন্দ্র পদক্ষেপ করেছে।” |
 |
 |
জি মাধবন নায়ার |
সি এন রাও |
|
ইসরোর চেয়ারম্যান পদে থাকার সুবাদে তার বাণিজ্যিক শাখা অ্যানট্রিক্সের কর্ণধারও ছিলেন মাধবন। তাঁর আমলেই বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছিল অ্যানট্রিক্স। ওই চুক্তি নিয়ে পরে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পরে মাধবনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করে কেন্দ্র। জানিয়ে দেয়, কোনও সরকারি সংস্থার দায়িত্ব আর নিতে পারবেন না তিনি।
কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ নিয়ে মাধবন আগেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। গত কাল তিনি পটনা আইআইটি-র চেয়ারম্যান পদ থেকেও ইস্তফা দেন। সেই সঙ্গে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তের পর নৈতিক ভাবে তিনি আর কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে থাকতে চান না।
কিন্তু মাধবনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বিজ্ঞানীরা। নলেজ কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান পি এম ভার্গব গত কাল গোটা ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন। আর আজ কেন্দ্রের সমালোচনা করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা।
নায়ারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের প্রতিমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী বলেছিলেন, “বিজ্ঞানীদের শিক্ষা দিতে কেন্দ্র এই পদক্ষেপ করেছে।” তাঁকে সরাসরি আক্রমণ করে রাওয়ের বক্তব্য, “বিজ্ঞানীদের সম্পর্কে এই ধরনের মন্তব্য করা উচিত নয়। দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকদের সঙ্গে এই ধরনের ব্যবহার করা হয়নি। তা হলে বিজ্ঞানীদের এ রকম হেনস্থা করা হচ্ছে কেন?”
তবে সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, গোটা ঘটনার নেপথ্যে বৃহত্তর বিষয় রয়েছে। ইসরোর চেয়ারম্যান পদে মাধবনের নিয়োগ বা প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসাবে রাওয়ের নিয়োগের পিছনে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের প্রাক্তন প্রধান সচিব টি কে নায়ারের ভূমিকা ছিল। নায়ার দক্ষিণের আমলাদের গোষ্ঠী তৈরি করেছিলেন বলেও অভিযোগ। তা ছাড়া অ্যানট্রিক্স-ডেভাস চুক্তিকেও সমর্থন করেছিলেন তিনি। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে নায়ারের ডানা ছাঁটার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের প্রধান সচিব পদের দায়িত্ব নিয়েছেন গাঁধী পরিবারের আস্থাভাজন পুলক চট্টোপাধ্যায়। নায়ার ও তাঁর অনুগামীদের সরানোর প্রক্রিয়াও চলছে।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক কর্তার কথায়, তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই মাধবন নায়ারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর পর তাঁর যা মনে হয় তিনি মন্তব্য করতেই পারেন। কিন্তু কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ হয়ে গেলে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে। তবে মাধবন ও তাঁর সহকর্মীরা যে বসে নেই, তাও এখন পরিষ্কার। ফলে আরও গড়াতে পারে বিতর্কের জল। |