পরপর অপরাধের ঘটনা ঘটছে দক্ষিণ শহরতলি ও তার লাগোয়া এলাকায়। কখনও বিকেলেই মহিলার উপর চড়াও হচ্ছে ছিনতাইবাজরা। কখনও বাড়ির তালা ভেঙে লুঠ হচ্ছে গয়না। দুষ্কৃতীরা ধরা না পড়ায় উঠছে প্রশ্ন। ব্যর্থতার অভিযোগ খণ্ডন করলেও পুলিশকর্তারাই মানছেন, দক্ষিণ শহরতলির সংযোজিত এলাকার থানাগুলি সামলানোর ক্ষেত্রে তাঁদের তরফেও কিছু ফাঁকফোকর রয়েছে। ঘাটতি আছে পরিকাঠামোয়। আর তার ফলেও ঘটছে একের পর এক অপরাধের ঘটনা। শনিবার পূর্ব যাদবপুর থানার পূর্বালোকে ডাকাতির ঘটনা যে তালিকায় নবতম সংযোজন।
এ দিন ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ ৪-৫ জন দুষ্কৃতী চড়াও হয় পূর্বালোকের সুদর্শন নস্কর ও সুস্মিতা নস্কর নামে এক দম্পতির বাড়িতে। সামনের দরজার তালা ভেঙে ভিতরে ঢোকে তারা। বন্দুক দেখিয়ে কেড়ে নেয় আলমারির চাবি। তার পরে দু’জনকেই চাদর দিয়ে বেঁধে শুরু করে লুঠপাট। ওই দম্পতি জানিয়েছেন, নগদ ৭৩ হাজার টাকা ও বেশ কয়েক ভরি সোনার গয়না হাতিয়ে টাটা সুমোয় চেপে চম্পট দেয় ডাকাতরা। শেষ মুহূর্তে সুদশর্নবাবু এক ডাকাতকে জাপটে ধরলে তাঁর মাথায় রিভলভারের বাঁট দিয়ে আঘাত করা হয়। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ডাকাতরা বাংলায় কথা বলছিল। সবারই মুখ ঢাকা থাকায় কাউকেই চিনতে পারেননি ওই দম্পতি।
গত মঙ্গলবার কসবায় বিদ্যা দেশাই নামে এক মহিলার হার ছিনতাই করে পালানোর সময় তাঁকে গুলি করে পালায় মোটরসাইকেল আরোহী দুষ্কৃতীরা। চার দিনেও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি এই ঘটনায়। বুধবার ভরদুপুরে ঢাকুরিয়া ব্রিজের তলায় একটি মেয়ের দেহ উদ্ধার হয়। কিনারা হয়নি তারও। অভিযোগ উঠছে, দক্ষিণ শহরতলির বিস্তীর্ণ এলাকায় একের পর অপরাধের ঘটনা ঘটলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশ অপরাধীদের ধরতে পারছে না। লালবাজারের কর্তারা এই অভিযোগ মানতে নারাজ। কিন্তু একই সঙ্গে নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনার কথাও তাঁরা শোনাতে পারেননি।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ শহরতলির বিস্তীর্ণ এলাকা কলকাতা পুলিশের আওতায় আনা হয়। থানা চালুর পাঁচ মাস পরেও পরিকাঠামো নিয়ে সমস্যা রয়েই গিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই যথেষ্ট পুলিশকর্মী নেই। নতুন থানা চালু হওয়ার সময় লালবাজারের কর্তারা জানিয়েছিলেন, তিন মাসের মধ্যে ওই থানাগুলিতে প্রয়োজনীয় ‘ফোর্স’ পাঠানো হবে। পুলিশকর্মীরা বলছেন, ঘোষণার পাঁচ মাস পরেও তা বাস্তব রূপ পায়নি।
লালবাজারের এক পুলিশকর্তার মতে, নয়া এলাকায় নিয়ে সমস্যা রয়েছে। সেখানকার থানাগুলির চরিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। নতুন থানাগুলি চালানোর মতো দক্ষতা কলকাতা পুলিশের বেশির ভাগ অফিসারের নেই। তড়িঘড়ি নতুন থানায় বদলি হওয়ায় অনেকেই সমস্যায় পড়ছেন। এ ছাড়াও, সংযোজিত এলাকার আইন-শৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার করার দিকে বাড়তি নজর দিতে গিয়েও অপরাধ দমনে কিছুটা ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। অপরাধ জগতের খবরাখর দেওয়ার মতো ‘সোর্স’-ও ঠিক মতো তৈরি হয়নি। ফলে গোয়েন্দা-তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, “গোয়েন্দা বিভাগের কর্মী ও পরিকাঠামোর যা অবস্থা, তাতে নতুন এলাকায় নজরদারির ফাঁক থেকেই যাচ্ছে।”
তবে ওই বিস্তীর্ণ এলাকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য কয়েকটি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভেবেছে পুলিশ। কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল কমিশনার শিবাজি ঘোষের কথায়, “ওই এলাকায় অপরাধ দমনে বিশেষ টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হবে।” তবে এতেই যে চটজলদি সমস্যা মিটে যাবে, এমন আশা করছেন না তিনিও। |