রবিবাসরীয় প্রবন্ধ
প্রেম আর রক্তের গান

সে যখন এসে পৌঁছল,
তখন সকলই শেষ।
গোলমাল চুপ
ভিড়টা ভাঙার মুখে।
এক দিকে কিছু ধর্মীয় নেতা
মুখে গম্ভীর দাড়ি
পাগড়িতে আর কালো জোব্বায়
কবরের অনুষঙ্গের বাড়াবাড়ি।
পথিক দাঁড়াল চকটার মাঝখানে।
ছুঁড়ে মারা যত পাথরের স্তুপে
দুজনে আধেক ঢাকা
একটি যুবতী ও এক যুবক
কাদায়, রক্তে মাখা।

কবির নাম: সৈয়দ বাহোদিন মজরু
কবিতার নাম: প্রেমিকদের অট্টহাস্য
বইটা আমার হাতে এসে পৌঁছেছিল, তাইপেই শহরে এক রোদমাখা দিনে। শান্ত সুন্দর এক দুনিয়ায়। সেখানে প্রেমিক-প্রেমিকা স্বামী স্ত্রী বাচ্চারা পার্কে খেলছিল। মনে হচ্ছিল দুনিয়ায় সব ঠিক আছে। আসলে তো আমাদের দুনিয়ার ভেতরে আছে অনেকগুলো দুনিয়া। একটা পার্কে বসে এক টানা কয়েক ঘণ্টায় পড়ে ফেলেছিলাম বইটা। হয়তো তার মলাটের ভেতরের দুনিয়ার সঙ্গে আমার সেই সময়ের চার পাশ এতটাই আলাদা ছিল বলে কী রকম একটা যেন লেগেছিল। বইটার নাম ‘সংস অব লাভ অ্যান্ড ওয়ার: আফগান উইমেনস পোয়েট্রি।’ সম্পাদনা: সৈয়দ বাহোদিন মজরু, অনুবাদ: মারজোলিন ডি জ্যাগার।
আমরা ভারতে থাকি। আফগানদের কথা জানি না, তা তো নয়। আমাদের তো কাবুলিওয়ালা বলে একটা গল্পও আছে। যে গল্পে নিজের মেয়ের কথা মনে করে মিনিকে ভালোবেসেছিলেন রহমত। বাংলা আর হিন্দিতে ছবি বিশ্বাস আর বলরাজ সাহনির রহমত। আফগানিস্তানে কী হচ্ছে তাও আমরা কিছু কিছু জানি। তার অনেকটাই এখনকার রাজনীতির গল্প। সমাজবিদরা আমাদের বলেন নতুন অন্ধত্ব কী ভাবে হাত মেলায় পুরনো অন্ধত্বের সঙ্গে। কী ভাবে নতুন আর পুরনো আগ্রাসন আপাত বিরোধিতার নামে আসলে একই অত্যাচারকে বাড়ায়। কিন্তু আজ থাক।
আজ কচকচি নয়। জানি না, এই সব কচকচি দিয়ে আমরা কত দূর কী করতে পারি। তার চেয়ে এই বইয়ের পাতার রাস্তা ধরে আমরা দেখতে যাই কয়েক কন্যের জীবন। শুনি তাদের গান। সেই গানের তো সুর জানি না। কথাও পৌঁছেছে অন্য ভাষা হয়ে। তবু দেখবেন কী রকম যেন তাঁদের দেখা যায় এই গানে। চোখ বন্ধ করে সম্মান করা যায় তাঁদের। বলা যায়, যদি মরণ আর অত্যাচারের চেয়ে বড় কোনও ঈশ্বর থাকতেন, তবে তোমরাই হতে বিজয়িনী। আপাতত, এক বিশাল যুদ্ধের সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের বোধগুলোকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য সেলাম। হে পাশতুন নারী, আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণ ধূলার পরে।


আত্মহত্যা কিংবা গান
ইসকুলে এদের কেউ পাঠায় না। বাইরের কাব্য এসে পৌঁছয় না জানালায়। তাই এই কবিতা জন্ম নেয় একেবারে নিজের জীবন থেকে রস টেনে, আকাশের উস্কানিতে, আর বাতাসের খুনসুটি কাঞ্চনজঙ্ঘায় এসে ঘা মারার শিরশিরানি থেকে। এই কবিতা আবৃত্তির জন্যে নয়, এর ছন্দ কেবলই গাইবার জন্যে। এই গানে দেহাতীতের কোনও ব্যাপার নেই। যা আছে তা হল এক জন মেয়ের রক্ত মাংসের কামনা বাসনা। আর আছে পাহাড়, নদী, জঙ্গল, সকাল আর সন্ধে নেমে আসা, রাতের সেই জাদু মাখা প্রহর, যুদ্ধ, সম্মান, লজ্জা আর প্রেম আর রূপ আর মরণ।
চেনা কবিতা থেকে এই কাব্য আলাদা কারণ এই কাব্যে মেয়েরা কোনও পুরুষ কবির আরাধ্যা নয়, তারা নিজেরাই কবি। দু’লাইনের ছোট্টো কবিতা, ‘লান্ডে’। পুরুষদের লেখা লান্ডে থেকে একেবারে আলাদা এই মেয়েদের কবিতা। রোজ বিকেলে মেয়েরা যখন জল আনতে যায়, কিংবা বিয়ের উৎসবে বা মেয়েদের নিজেদের আসরে, তৈরি হয় নতুন নতুন এই লান্ডে। সেরাগুলো মুখে মুখে ঢুকে যায় স্মৃতি সমবায়ে।
পাশতুন সমাজে মেয়েদের অবস্থান একটু কঠিন। পুরুষদের তৈরি করা সম্মানের অনুশাসনে সমাজ চালিত হয়। পৌরুষের বড্ড বাড়াবাড়ি। মেয়েরা গোটা বছর ধরে বাড়ির কাজ করে ভোরের আগে থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত। দিনে দু’বার অনেক দূর থেকে জল নিয়ে আসতে হয়। বাচ্চা দেখা, রান্না, শস্য গুঁড়ো করে রুটি বানানো, সেলাই ফোঁড়াই, ঘুঁটে দেওয়া, খেতে জল দেওয়া সব দায়িত্ব তার।
এর চেয়েও অনেক বড় কষ্ট হল জন্ম থেকেই দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে বেঁচে থাকা। ছেলে হলে বাপ গিয়ে আনন্দে বন্দুক ফাটায়, আর মেয়ে হলে মা মরে লজ্জায়। সারা জীবন কাটে এই ভাবে। স্বামী তার সঙ্গে খেতেও বসে না, এমনই সে ব্রাত্য।
কী হয় তার প্রতিক্রিয়া? আপাত নজরে পুরোপুরি মেনে নেওয়া ছাড়া আর কী-ই বা করার আছে তার? অনেক মেয়েই আত্মহত্যা করে। এটাও এক করুণ বিদ্রোহ, তার জীবনের বিরুদ্ধে, পুরুষের দমন কানুনের বিরুদ্ধে। সাধারণত মেয়েরা আত্মহত্যা করে বিষ খেয়ে বা জলে ডুবে। বন্দুকের গুলি নয়, ফাঁসির দড়ি নয়। ওই সব পুরুষের ব্যবহার করা জিনিস সে বোধ হয় ছুঁতে চায় না। মরে গিয়ে সে শাস্তি দিতে চায় তার সমাজকে। কিন্তু আর একটা উত্তর আছে তার হাতে গান।


ছোট্ট বিভীষিকা
নারীর জন্যে প্রেম করা এক বিশেষ অপরাধ। অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের মেলামেশা নিষেধ, ভালোবাসা নিষেধ, পছন্দ করে বিয়ে করা নিষেধ। প্রেম এক অপরাধ যার শাস্তি মৃত্যু। দু’জনকেই অথবা এক জনকে মেরে দেওয়া হয় সেই এক জন সব সময়েই মেয়েটি। প্রেম কোনও গোষ্ঠীই মেনে নিতে রাজি নয়। কারণ, যুবতীরা বিনিময়যোগ্য পণ্য। বিয়ের মধ্যে দিয়ে দেনা-পাওনা বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে এক প্রচলিত প্রথা। এতে সেই যুগলের অনুভূতির কোনও গল্প নেই। তাই লান্ডে গানে আমরা সব সময় পাই বিচ্ছেদের সুর। হয় প্রেমিকটি দূরে চলে গিয়েছে, নয় সে আছে, কিন্তু তার বাপ-দাদারা তাকে পাহারা দিয়ে রেখেছে। আর এই দেনা-পাওনার বিয়েতে অনেক সময় মেয়েটির বিয়ে হয় কোনও শিশু বা বৃদ্ধের সঙ্গে। গানে মেয়েটি এই স্বামীকে বর্ণনা করে ‘ছোট্ট বিভীষিকা’ বলে। সে শিশু বলে অথবা কামরহিত বৃদ্ধ বলেই হয়তো ‘ছোট্ট’! একটিও লান্ডে নেই যাতে দাম্পত্য প্রেম বা স্বামীর প্রতি ভালোবাসার কোনও আবেগ আছে। এই গানে গানে প্রেম আর ‘সতীত্ব’ কেবল প্রেমিকের জন্যেই সংরক্ষিত। এই ভাবে এক কন্যে তার দুর্ভাগ্যের গান গেয়েছে:
কপাল আমায় এনে দিল কচি সোয়ামি, তাকে মানুষ করব আমি
সে যখন লম্বা জোয়ান মদ্দ হবে, থুড়থুড়ে বুড়ি আমি, হায় অন্তর্যামী

(ভাল কথা, আমাদের কারও কারও একটা অভ্যেস আছে, বিদেশি ভাষায় কিছু পড়লে সঙ্গে সঙ্গে মনে মনে বাংলায় গুনগুন করা। এই লেখার সব অনুবাদ কিন্তু তার চেয়ে বেশি গুণমান দাবি করে না।)
আর এক জনের গল্পটা উল্টো:
ঘাটের মড়া বর আমাকে খাটে নিয়ে যায়
আমি মাথার চুল ছিঁড়ি, কাঁদি, আর কী করি হায়!
এই অসমবয়সি সঙ্গীর সঙ্গে রাত যে আর কাটে না:
হায় ভগবান, আবার তুমি পাঠালে সেই রাত
ঘেন্নার সেই বিছানা যাই, কাঁপে পা, আর হাত।

অথবা,
হায় ভগবান, আবার তো সেই লম্বা, একা রাত
‘ছোট্ট বিভীষিকা’ আমার, কখন ঘুমে কাত।

আবার কখনও এক অসম্ভবের স্বপ্নে কন্যে তার সেই অপারগ বরকেই ডাকে:
নয় একবার ঝাঁপিয়ে এলে, ভয় নেই এক রতি
ভাঙলে ‘ছোট্ট বিভীষিকা’, করব মেরামতি।
ব্যাঙ্গটা কিন্তু পরিস্কার। কারণ, সে কম্মো যে সম্ভব নয়, তা জানা ভাল ভাবেই। কখনও আবার দয়িতকে এক অসম্ভবের প্রতিশ্রুতি। কারণ, অসম্ভব না ভাবলে তো বাঁচা যাবে না:
তুমি আমার বাড়ি এলে ‘ছোট্ট’-টা যায় চটে
দরজা ফাঁকে তুমি বরং এসো আমার ঠোঁটে।

যত সে তার প্রেম আর কামনাকে লুকিয়ে রাখতে বাধ্য হয়, ততই গানে গানে তার আবরণ যায় ঘুচে। এই গানে আমরা পাই এক জান্তব সততা, এক নির্ভয় কামনার উচ্চারণ, যার সাহস দেখলে শিউরে উঠতে হয়। এই গানে মেয়েরা পুরুষদের ধাক্কা দিতে, তাদের সব ধারণাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে তৈরি। সে কিছু লুকোয় না। পৌরুষকে যেন বলে, ‘চ্যালেঞ্জ নিবি না শালা’:
ভালবাসি। ভালবাসি। লুকোবো না। করব না অস্বীকার।
তাতে যদি আমার রূপ টুকরোও করে তোমার ছুরির ধার।

কিংবা:
আহা কী প্রেমের রাত কাল কাটালাম, প্রেমিকের সাথ
জড়োয়া গয়না পরে, ওর কোলে, ঘণ্টার মতো বাজলাম, গোটা রাত।

আবার:
রাখো মুখ আমার এই মুখে
ঠোঁটটাকে ছেড়ে রেখো, যাতে বলতে পারি কথা

কখনও বা:
আমার মুখটা তোমার, নির্ভয়ে খাও
এ তো চিনির নয় যে গলে যাবে, ভয় কেন পাও?

আবার ঢাকাঢুকির বিরুদ্ধে তার বিদ্রোহ:
যারা আমার প্রেম চায় কাল তারা দুঃখ যাবে ভুলে
কারণ, কাল আমি গ্রাম পেরিয়ে হেঁটে যাব মুখ খুলে, খোলা চুলে।

কখনও সে বলে:
এসো আমার কাছে এসো, জান
যদি তোমার লজ্জা করে
তবে নয় আমিই মারি টান।

আবার কখনও:
আচ্ছা এ গ্রামে কি এক জনও উন্মাদ নাই?
আমার পাজামা জ্বলে যাচ্ছে, আগুনে পুড়ছে দুই থাই।

বলা বাহুল্য ভোর হওয়াটা আমাদের কন্যের কাব্য-স্বপ্নে একেবারে না-পসন্দ:
আবার সেই মুখপোড়া মোরগটার শুরু হল কোঁকোর কো।
আমার মরদটা আহত পাখির মত চলে গেল গো।

একটা লক্ষণীয় ব্যাপার হল যে এই কবিতায় ফুটে ওঠা প্রেমের ছবিতে মেয়েরা কিন্তু তাদের প্রেমিকদের কাছে টানার জন্যে কোনও ‘নারীসুলভ’ কমনীয়তা ইত্যাদির ধার ধারছে না। আবার তারাই কিন্তু সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নিচ্ছে। কারণ, এ ধরনের যে সম্পর্কগুলো বাস্তবে হয় সেখানে ছেলেটির আত্মরক্ষা করতে পারার সামাজিক সম্ভাবনা মেয়েটির থেকে অনেক বেশি। ধরা পড়লে সামাজিক বিচারে গুলি বা পাথরের আঘাতে খুন হওয়াটাই মেয়েটার এক মাত্র ভবিতব্য। তবু ‘আমায় আশ্রয় দাও’ জাতীয় কোনও কাকুতির গল্প নেই। সে যেন সব জেনেশুনেই ঝুঁকি নেওয়ার মন তৈরি করছে। এই বিপদের কথা সে জানে না বা পুরুষের সম্ভাব্য কাপুরুষতার কথাও সে ভাবে না, তা কিন্তু নয়:
তোমার পাশে আমি, আমার হাত বাড়ানো, ঠোঁট ফাঁক,
তুমি দেখোনি।
কারণ, কাপুরুষের মতো তোমার দু’চোখে জমাট বেঁধেছে
ভয়ের ঝিমুনি।

কখনও মেয়ে বলে:
আমার বাহু বন্ধনের সুখ যদি চাও তবে মরণের ঝুঁকি নিতে হবে।
যদি নিরাপত্তার ভিখারি হও, প্রেম না চেয়ে ধুলোয় চুমু খাও তবে।

আবার নির্ভীক উচ্চারণ:
এসো হাত ধরাধরি করে দু’জনে মাঠে গিয়ে দাঁড়াই
ভালবেসে এক সাথে উদ্যত ছুরির দিকে পা বাড়াই।

মরণ যে বড় কাছে সব সময়। তাই তার উপস্থিতি এই কবিতায় বারবার:
চট করে এসো, তোমাকে একটা চুমু দিয়ে যাই
মৃত্যু ঘুরছে গ্রামে, আমাকে নিয়ে যাবে কিনা, তাই।
নির্বাসনের গান
গত কয়েক দশকের যুদ্ধে ছারখার হয়ে গেছে আমাদের প্রতিবেশী এই দেশটা। এই যুদ্ধ যেন নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধেই। সীমান্ত অঞ্চলে বসবাসকারী বলে পাশতুনদের ভুগতে হয়েছে খুব। লক্ষ লক্ষ পাশতুন উদ্বাস্তু হয়ে পালিয়ে গেছেন পাকিস্তানে। নির্বাসনেও কিন্তু কাব্য বন্ধ হয়নি। পুরুষ ও নারী লিখে চলেছেন বহু বহু লান্ডে। মেয়েদের নির্বাসনের জীবন থেকে লেখা লান্ডের কথা পুরুষ-রচিত লান্ডে থেকে আলাদা। মেয়েদের গানে ধর্মের কথা অনেক কম। তুলনামূলক ভাবে মূল ভূখণ্ডে বসে লেখা লান্ডের চটুলতা, শারীরিকতাও কম। এই নির্বাসিত গানের মূল গাওন দূরত্ব আর বিচ্ছেদ নিয়ে। বিচ্ছেদ যেন এক যুদ্ধের ক্ষত। পায়ের নীচে যে নেই সেই চেনা জমি।
হে বাতাস, ভেসে এলে সেই পাহাড়ের থেকে, যা আজ প্রিয়র রণভূমি
কি বার্তা বয়ে আনো তুমি?
বাতাস উত্তর দেয়:
তোমার প্রিয়র বার্তা শুধু বারুদের ঘ্রাণখানি
ধ্বংসস্তূপের ধুলো তার সাথে আমি বয়ে আনি।
এই গান জুড়ে থাকে যুদ্ধের আলো ঢাকা ডানা।
সুরে মাখা একাকিত্বের ছাপ:
এখানে বসন্ত আসে, নতুন পাতার সুখে গাছ আচ্ছন্ন
শত্রু গুলির ঝড়ে আমার দেশের বন নগ্ন, বিপন্ন।
****

বন্ধুরা, কোনটাকে বেছে নিই বল?
শোক আর নির্বাসন দু’জনেই দরজায় দাঁড়িয়ে।
এত কাণ্ডের মধ্যেও ‘ছোট্ট বিভীষিকার’ ওপরে রাগ কিন্তু যায়নি। সে যে সব রকমের কাপুরুষতার প্রতীক, আর সব যুদ্ধ তাই একাকার হয়ে যায়:
ছোট্টটি কিছুই করে না, না যুদ্ধ, না তো ভালবাসা
খাটে উঠে ভোরতক ঘুম, তার আগে খেয়ে পেট ঠাসা।
অনামী মেয়েদের এই গানে ফুটে ওঠে এক অনুভূতি, আমাদের চেনা পুরুষালি দেশপ্রেমের ব্যাকরণে যাকে হয়তো আমরা চিনতে পারব না। তবু চোখ বুজে কথাগুলোকে নিয়ে নড়াচড়া করলে কী এক অজানা সুর আর কী রকম একটা বোধ যেন আমরাও খুঁজে পেতে পারি:

নির্বাসিতা মেয়েদের মৃত্যু তো রোজ, বারো মাস।
ওর মুখটা ঘুরিয়ে দিয়ো দেশের দিকে, নিতে পারে যাতে শেষ শ্বাস।



সৈয়দ বাহোদিন মজরু
এই মেয়েদের গানগুলি সংগ্রাহক সৈয়দ বাহোদিন মজরুর জন্ম হয়েছিল ১৯২৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। তিনি পেশোয়ারে খুন হন ১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। মজরু ইউনিভার্সিটি অব মন্টপেলিয়ার থেকে দর্শনে ডক্টরেট করেছিলেন। খৈয়াম, রুমির ঘরানায় সুফি কাব্যের যোগ্য উত্তরসূরি বলে মজরুকে মনে করা হয়। কাব্য ছাড়াও আফগানিস্তানের প্রতিরোধ আন্দোলনের সঙ্গে মজরুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
‘সংস অব লাভ অ্যান্ড ওয়ার’ বইটিতে সংগৃহীত লান্ডেগুলি মজরু আফগানিস্তানের নানা উপত্যকা আর পাকিস্তানে পাশতুন উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেন। এই গানগুলো যেন স্বদেশি-বিদেশি নানান অত্যাচার আর হিংস্রতার মুখে দাঁড়িয়ে মেয়েদের এক আশ্চর্য সাহসী জীবন-উচ্চারণ।
এই গানের সংগ্রহের কাজে মজরুর নিজের জীবনবোধ আর বিশ্বাস এক বিশাল ভূমিকা পালন করেছিল। যারা ‘পরকে আপন করে মরণেরে পর’, যারা ‘মরণেরে করে চির জীবন নির্ভর’, তাদের এক জন না হলে এই গান চেনা যায় না।
সংগ্রহও করা যায় না। শোনা যায়, আততায়ীরা যখন পেশোয়ারে তাঁর বাড়ির দরজায় আসে, মজরু তাদের দরজা খুলে ভেতরে আসতে বলেন, কারণ মেহমানকে তো বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা যায় না। সে যদি মরণ হয়, তাই হোক। আগে থেকেই মরে থাকবে কে? কেন?

সূত্র: সংস অব লাভ অ্যান্ড ওয়ার,
সম্পাদনা: সৈয়দ বাহোদিন মজরু, আদার প্রেস, নিউ ইয়র্ক


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.