রাস্তা চওড়া হয়েছে। বাড়ছে যানবাহনের গতিও। পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে সড়ক দুর্ঘটনাও। তাতেই উদ্বিগ্ন দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা পুলিশ-প্রশাসন। ২০১১ সালে জেলায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৮৬টি। মৃত্যু হয়েছে ১২৬ জনের। জখম হয়েছেন ৩২৯ জন। তার আগের বছরে মৃতের সংখ্যা ছিল ৯০ জন। দুর্ঘটনা ঘটেছিল ২৫০টি। সেই তুলনায় ২০০৯ সালে সারা বছরে পথ দুর্ঘটনায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। দুর্ঘটনা উত্তরোত্তর বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার চিরন্তন নাগও। তিনি বলেন, “গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর অবধি জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনায় ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যান্য রাস্তায় দুর্ঘটনায় মারা যান ৬২ জন। রাস্তা সম্প্রসারণ হওয়ায় যানবাহনের গতি বেড়েছ। তবে চালকদের সচেতনতা বাড়েনি।” পুলিশ সূত্রের খবর, রাস্তায় ডিভাইডার এবং গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আন্ডারপাস না থাকায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। ট্রাফিক সচেতনতার ও নজরদারির মাধ্যমে সমস্যা মোকাবিলার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় যে রাস্তা চওড়া হচ্ছে তার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, দুই লেনের রাস্তায় ডিভাইডার দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। তার পরেও হাসপাতাল, বাসস্ট্যান্ড-সহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ডিভাইডার তৈরি করা হয়েছে। জেলা পুলিশের তথ্য অনুসারে, গত ২০১০ সালে জেলায় ২৫০ টি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ৯০ জনের। জখম হন ১৫০ জন। ২০১১ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ২৮৬টি। মারা যান ১২৬ জন। জখমের সংখ্যা ৩২৯ জন। এশিয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক তহবিলের টাকায় জেলার হিলি থেকে গাজল পর্যন্ত প্রায় ১১০ কিলোমিটার রাজ্য সড়ক ডবল-লেন তৈরির কাজ গত বছর শেষ হয়েছে। ২০০৮ এবং ২০০৯ সালে এ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১০ এবং ১৫ জন। |
পূর্ত দফতরের জেলার নির্বাহী বাস্তুকার ফয়েজ আহমেদ বলেন, “দু-লেনের রাস্তায় কংক্রিটের ডিভাইডার তৈরি করা যায় না। এতে গাড়ি ওভারটেক করতে সমস্যা হবে। রাস্তা পারাপারের সময়ে পথচারীদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। ব্লক স্তরে মানুষের মধ্যে ট্রাফিক সচেতনতা বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে।” দক্ষিণ দিনাজপুরের যোগাযোগের মূল ভিত্তি এখনও সড়ক নির্ভর। ২০০৪ সালে জেলায় বালুরঘাট-একলাখি রেলপথ চালু হয়। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকটি ট্রেনে মালদহ, শিলিগুড়ি ও কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তবে জেলার আটটি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষকে সড়ক পথের উপর নির্ভর করতে হয়। বাসিন্দারা জানান, বাস স্টপ সহ বিশেষ কিছু জায়গা ছাড়া রাস্তায় আলোর কোনও ব্যবস্থা নেই। অন্ধকার রাস্তায় দূর থেকে গাড়ির হেড-লাইট দেখে গতি বুঝতে না পেরে অনেকে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন বলে পুলিশের একাংশের অনুমান। বাস, ট্রাক সহ অনেক চালকেরা গাড়ির গতির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েও চওড়া রাস্তায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন। জেলা পরিষদের সভাধিপতি মাগদালিনা মুর্মু অভিযোগ, “বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর বিরুদ্ধে পরিবহন দফতরের নজরদারির অভাব রয়েছে। পঞ্চায়েত স্তরে ট্রাফিক সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।” পুলিশ সুপার জানান, জেলার দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলি চিহ্নিত করা হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমে যানবাহন পরীক্ষা ও জনবহুল এলাকায় গতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। |