পুস্তক পরিচয় ১...
কবির রূপান্তরের দিশা
পূরবী-র (১৯২৪) পাণ্ডুলিপি থেকেই কাটাকুটির মধ্যে চিত্ররচনা প্রথম ব্যাপক ভাবে শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ। জীবনের শেষ পর্ব পর্যন্ত কবির এই বিষয়ে কোনও ক্লান্তি ছিল না। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের চিত্রাবলি যে গুরুত্ব পেয়েছে, পাণ্ডুলিপি-চিত্র সে ভাবে সংকলিত বা বিশ্লেষিত হয়নি। প্রাগৈতিহাসিক জীবজন্তু, বিচিত্র পাখি, নানা রকম মুখ, অজস্র নকশা উঁকি মারে ধূসর পাণ্ডুলিপির হাজারো পৃষ্ঠা থেকে। কেন এ সব ছবি? কবির মনে হত, পাণ্ডুলিপির কাটাকুটি, রদবদল সৃষ্টির পথে কাঁটার মতো বাধা হয়ে দাঁড়ায়, অশান্তি জাগায়। তাই সেগুলিকে তিনি ছন্দে বাঁধতে চেয়েছেন, আবর্জনাকে পরিণত করতে চেয়েছেন অলঙ্কারে। এ থেকেই কি কবির রূপান্তরের দিশা মেলে চিত্রশিল্পীতে? সমালোচকরা স্বভাবতই নানা মত। এই সার্ধশতজন্মবর্ষে হাতে এল উইংস অব মিসটেকস/ডুডলস অব রবীন্দ্রনাথ টেগোর (নির্বাচন ও ভূমিকা: নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ ও পুনশ্চ, ২২৯৫.০০)। এতে আছে ১৮৩টি পাণ্ডুলিপি-চিত্র।
‘নিঃসন্দেহে বলা যায় গানের ক্ষেত্রে বিশ্বে অতুলনীয় রবীন্দ্রনাথ। এখানে দেশে ও বিদেশে, অতীতে ও বর্তমানে, কেউ তাঁর কাছে আসতে পারে না।... তুলনায় এত বড়ো জাঁকালো ইংরেজি সাহিত্যও কী দরিদ্র! স্বয়ং শেক্সপিয়র গান বেঁধেছেন, আশ্চর্য সে-গান, কিন্তু সংখ্যায় আর ক’টি!’ কবিকে নিয়ে এমন দুর্লভ মন্তব্য আর-এক কবি বুদ্ধদেব বসুর। বুদ্ধদেব বসুর অগ্রন্থিত গদ্য ‘কবিতা’ থেকে/দ্বিতীয় খণ্ড/রবীন্দ্রনাথ বেরল বিকল্প (৩০০.০০) থেকে দময়ন্তী বসু সিং-এর সম্পাদনায়। এ তো শুধু রবীন্দ্রসৃষ্টির সমগ্রতা নিয়ে লেখা নয়, বুদ্ধদেবের অতুলনীয় গদ্যও বটে!
‘মূলত স্বাক্ষর-শিকারী ও অনুরাগীদের আবদারে’ রবীন্দ্রনাথ নানা সময়ে ছোট ছোট কবিতা লিখেছেন। ১৯২৬-এ জার্মানি সফরে গিয়ে হাতের লেখা হুবহু মুদ্রণের একটি যন্ত্রের (রোটা প্রিন্টার) হদিশ পেয়ে উৎসাহিত হয়ে এমন অনেকগুলি ছোট কবিতা হাতে কপি করেন কবি। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় লেখন (১৯২৭)। এই লেখন-এই প্রিয়ম্বদা দেবীর কয়েকটি কবিতা অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয় রবীন্দ্রনাথকে। রবীন্দ্রভবনে রক্ষিত লেখন-এর একটি কপিতে রবীন্দ্রনাথ পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেছিলেন, কিন্তু তা মুদ্রিত হয়নি। বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগের সহায়তায় ‘পুনশ্চ’ প্রকাশ করেছে লেখন/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর/কবির সংশোধিত প্রতিলিপি সংস্করণ (সম্পা. নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, ৪৯৫.০০)।
‘সাধনা আমার হাতে কুঠারের মতো, আমাদের দেশের বৃহৎ সামাজিক অরণ্য ছেদন করবার জন্যে একে আমি ফেলে রেখে মরচে পড়তে দেব না একে আমি বরাবর হাতে রেখে দেব।’ লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেই ‘সাধনা’ পত্রিকার চুলচেরা বিচার অমিত্রসূদন ভট্টাচার্যের সাধনা পত্রিকা ও রবীন্দ্রনাথ (পুনশ্চ, ১৭৫.০০)। আটটি অধ্যায়ে পত্রিকাটিতে প্রকাশিত রবীন্দ্ররচনা ও অন্যান্য রচনার খতিয়ান তো আছেই, উপরন্তু আছে রবীন্দ্রনাথ-সম্পাদিত সব পত্রিকার সব সংখ্যার সূচি।
রবীন্দ্রচর্চায় উষারঞ্জন ভট্টাচার্য বহু দিন ধরেই বিশিষ্ট নাম। বছর পাঁচেক আগে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর বই নীল-সোনালির বাণী: রবীন্দ্র-অসম সম্পর্ক। সে বইয়ের একটি পরিবর্ধিত সংস্করণ প্রকাশিত হল প্যাপিরাস থেকে (২৫০.০০)। ইতিমধ্যে আরও বিস্তৃত অঞ্চল-পরিসরে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে গবেষণা চালিয়ে গিয়েছেন লেখক। তা নিয়েই তাঁর সাম্প্রতিক বই, উত্তর-পূর্ব ভারতে রবীন্দ্রচর্চা (আনন্দ, ২০০.০০)। বিশেষ উল্লেখযোগ্য পঞ্চাশ বছর আগে গুয়াহাটি শহরে প্রতিষ্ঠিত ‘রবীন্দ্র-পরিষদ’-এর রবীন্দ্রচর্চা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রবন্ধটি।
চার দশকেরও বেশি রবীন্দ্রচর্চা করছেন অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য। তা থেকেই নির্বাচিত পঞ্চাশটির সংকলন প্রবন্ধ পঞ্চাশৎ: প্রসঙ্গ রবীন্দ্রনাথ (আনন্দ, ৫০০.০০)। ‘স্বপ্ন সৃজন সাধনা’, ‘অন্যোন্য দর্শন’, ‘সম্পর্ক: অন্যান্য ব্যক্তিত্ব’, ‘সম্পর্ক: স্ত্রী পুত্র কন্যা’, ‘কেমন করে লিখতেন’, ‘পাঠ পাঠান্তর পাণ্ডুলিপি’, ‘প্রসঙ্গ সাময়িকপত্র’, ‘প্রকাশন ও বিপণন’ এবং ‘বিবিধ’ বিভাগে সংকলিত প্রবন্ধগুলির বেশ কয়েকটি অগ্রন্থিত।
‘আমি আদ্যন্ত একজন গানের মানুষ।’ ঘোষণা করেছেন সুধীর চক্রবর্তী। তৎসহ মৃদু এবং মধুর অভিমানও। এই অভিমান যে, তাঁর নামে ‘লোকসংস্কৃতিবিদ’-এর একটা তকমা লেগে গেছে। এই অভিমান কতখানি সঙ্গত, তা বোঝা যায় তাঁর চারটি লেখা এবং তিনটি সাক্ষাৎকারের সঙ্কলন একান্ত আপন (পত্রলেখা, ২২০.০০) পড়লে। বাংলা গানের জগৎ নিয়ে, সেই জগতের রথী-মহারথীদের নিয়ে কত অভিজ্ঞতা, কত গল্প যে এই মানুষটির ঝাঁপিতে! সুধীরবাবুর ছত্রে ছত্রে নিহিত থাকে গানের প্রতি এক অসামান্যতর বোধ আর মমতা। এবং তাকে ভারসাম্য দেয় একটি গ্রহিষ্ণু, আধুনিক, নির্মোহ মন। বঙ্গসমাজে অধুনা যে ভারসাম্য বিরল।
‘ভারতবাসী সম্বন্ধে এই ছিল ইংরেজদের মোটামুটি মনোভাব। আমরা যেন সত্যি নই, আমরা যেন ছায়াবাজির লোক।’ ফেলে আসা পুরনো জীবনটাকে মণীন্দ্র গুপ্ত দেখেন নিজের তৈরি ক্যালিডোস্কোপে। সেখানে তাঁর জীবনের অকিঞ্চিৎকর ভাঙা সব টুকরো ছবির পর ছবি সাজায়। তিন পর্বে একত্রিত তাঁর অখণ্ড অক্ষয় মালবেরি (অবভাস, ২২০.০০) প্রচলিত আত্মজীবনী নয়, উপন্যাস নয়, একজন দুঃখী-না সুখী-না মানুষের চিহ্নপত্র।
এক সময় প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই কিশলয়-এ অন্নদাশঙ্কর রায়ের ‘তেলের শিশি ভাঙল বলে...’ কবিতাটি ছিল। কিন্তু পরের সংস্করণে কবিতাটি বাদ দিতে হয়েছিল। কারণ প্রবল প্রতিবাদ উঠেছিল এই বলে যে ও কবিতায় নাকি দেশের বড় বড় নেতাদের ‘বুড়ো খোকা’ বলে অপমান করা হয়েছে। প্রাক্কথনে ঘটনাটি জানিয়ে রসচর্চার এমনই আপদ সম্পর্কে উৎপল রায় লিখেছেন, ‘এই আপদ এড়াবার উপায় নেই’। কিন্তু সুখের কথা তাঁর আলাপচারিতার নেপথ্যে (পারুল, ৩০০.০০) আপদে বিপন্ন হয়নি, ছুঁয়ে-যাওয়া স্মৃতিমূলক আখ্যানমালা উপহার দিয়েছে।

রামানন্দের পাখির জগৎ
‘একই বৃত্তের ওলট পালটের মধ্যেই সমস্ত পাখির জগৎ লুকিয়ে আছে।’ বহু দিন আগে ছোটদের আঁকা শেখাতে গিয়ে লেখেন রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাঁর শিল্পীমনের নীড়ের পাখিগুলি উড়াল পেল দুটি সংকলনে, ফ্লাইং ১৯৯৫ (৪০০.০০) আর ফ্লাইং ২০০৭ (৩০০.০০)। দুটিরই প্রকাশক প্রতিক্ষণ। ১৯৯৫ আর ২০০৭ এই দুই বছরে একের পরে এক পাখি এঁকেছিলেন রামানন্দ, অধিকাংশ জলরঙের সেই কাজগুলিরই সংকলন এ দুটি। আর ‘আনন্দমেলা’ পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে ছোটদের আঁকা শেখানোর যে কলামটি প্রকাশিত হত রামানন্দের রেখা-ছবিতে তারই উজ্জ্বল উদ্ধার আঁকা শেখো (লালমাটি, ১০০.০০)।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.