|
|
|
|
দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের নালিশ সীমান্তের চাষিদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • করিমপুর |
দিনের পর দিন পদ্মার ওপারের চরের জমি থেকে ফসল কেটে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা। জমির ফসল নষ্ট করে অবাধে চলছে গরু পাচার। অথচ সীমান্তের সুরক্ষা যাদের হাতে, সেই বিএসএফই কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে থাকছে পদ্মার এপারে। এদিকে চাষিরা কোনও প্রতিবাদ করতে গেলেই মিথ্যে অভিযোগ করে ফাঁসানো হচ্ছে তাদেরই। বিএসএফের বিরুদ্ধে এমনই বেশ কিছু অভিযোগ তুলে শুক্রবার থেকে চরের জমিতে কাজে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন হোগলবেড়িয়ার মধুগাড়ি সীমান্তের অন্তত শ’দুয়েক চাষি।
পুলিশ ও স্থানীয়সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে চরের জমি থেকে ফসল কেটে নিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশের কিছু দুষ্কৃতী। সেই সময় চরের মাঠে কাজে যাওয়া কয়েকজন চাষি ওই দুষ্কৃতীদের বাধা দেন। দুষ্কৃতীদের একজনকে হাতেনাতে ধরেও ফেলেন ভারতীয় চাষিরা। এরপরে বাংলাদেশ থেকে আরও কয়েকজন দল বেঁধে এসে ভারতীয় চাষিদের মারধর করে যাকে ধরা হয়েছিল, তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যায় বলে অভিযোগ।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পদ্মার ওপারে দাঁড়িয়ে থেকে বিএসএফ গোটা ব্যাপারটি দেখল অথচ কোনও রকম সাহায্য করল না। এরপরেই ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা বিএসএফের বাউসমারি ক্যাম্পের কোম্পানি কম্যান্ডারের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। সেই সময় গ্রামবাসীরা বিএসএফের গাড়ির কাচ ভেঙে দিয়েছেন বলে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করে বিএসএফ। শুক্রবার দুপুরে সেই অভিযোগের ভিত্তিতে দু’জন গ্রামবাসীকে পুলিশ গ্রেফতারও করে। গ্রামের মানুষ শুক্রবার বিডিও, মহকুমাশাসক ও জেলাশাসকের কাছে গোটা বিষয়টি লিখিত ভাবে জানিয়েছেন।
করিমপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ কংগ্রেসের ইসমাইল বিশ্বাস বলেন, ‘‘এক কথায় সীমান্তের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। প্রতিদিন চরের জমি থেকে বাংলাদেশী দুষ্কৃতীরা ফসল কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের হাতে আক্রান্ত হচ্ছে আমাদের চাষিরা। অথচ বিএসএফ তো কিছু করছেই না। এদিকে গ্রামের মানুষ প্রতিবাদ করলেই বিএসএফ তাদের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যে অভিযোগ করছে। আর পুলিশ তাদের গ্রেফতারও করছে। নিরাপত্তার অভাবেই গ্রামের মানুষ শুক্রবার থেকে চরের জমিতে কাজে যাওয়া বন্ধ রেখে দিয়েছেন।’’ |
|
সীমান্তের পদ্মার ওপারে চরের জমিতে এখন রয়েছে মসুরি, গম, সর্ষে, মটর ও বাদাম। খুব কষ্ট করেই এই সব আবাদ করেন সীমান্তের মানুষ। আর ফি বছরই সেগুলো ঘরে তোলার আগেই বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা তা কেটে নিয়ে চলে যায়। বিএসএফ ও বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডসের মধ্যে মাঝে মধ্যেই তাই নিয়ে ফ্ল্যাগ মিটিং হলেও কাজের কাজ কিছু হয় না। স্থানীয়সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছু দিন ধরেই সীমান্ত দিয়ে চলছে গরুপাচার। মধুগাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সীমান্তে কোনও তারকাঁটার বেড়া নেই। এখানে সীমান্ত নির্ধারণ করে পদ্মা। শীতের পদ্মায় প্রায় জল নেই বললেই চলে। আর সেই সুযোগটাই নিচ্ছে পাচারকারীরা। ফলে গরুর পায়ের চাপে এমনিতেই ফসল নষ্ট হচ্ছে। তার উপরে চরের জমি থেকে দিনে দুপুরে ফসল কেটে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা। সব মিলিয়ে সমস্যায় রয়েছেন সীমান্তের চাষিরা। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বিএসএফ কাজের কাজ কিছুই করছে না উল্টে হেনস্থা করছেন সীমান্তের মানুষকেই।
মধুগাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সিপিএমের মফিজুল মণ্ডল বলেন, “বিএসএফের এই অত্যাচার সত্যিই মেনে নেওয়া খুব কঠিন। দিনের পর দিন নানা ভাবে হয়রান হচ্ছেন চাষিরা। সে বিষয়ে বিএসএফ উদাসীন থাকছে। এদিকে গ্রামের মানুষ কিছু বলতে গেলেই নিরীহ লোকজনদের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যে অভিযোগ করে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। এ সব কিছুর প্রতিবাদেই গ্রামের মানুষ চরের জমিতে কাজে যাওয়া বন্ধ রেখেছেন।”
কাছাড়িপাড়া সীমান্তের বাসিন্দা তথা করিমপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ সিপিএমের শঙ্কর মণ্ডল বলেন, “মধুগাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বেশিরভাগ মানুষের জমি, বাড়ি সব পদ্মার ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে। এখন সেই জেগে ওঠা চরের জমিতে চাষ করে কোনও রকমে দিন গুজরান করেন এই এলাকার মানুষ। অথচ এক দিকে বংলাদেশি দুষ্কৃতীদের অত্যাচার। অন্য দিকে বিএসএফের নিষ্ক্রীয়তার ফলে মানুষের চাষআবাদ করাটাই এখন বিরাট সমস্যা। এরকম একই সমস্যা ছিল নাসিরেরপাড়া সীমান্তে। তারপর সেখানে ওই চরের জমিতে বিএসএফের একটা ক্যাম্প করার পরে সেই সমস্যাটা মিটেছে। আমরাও বহুবার পদ্মার ওপারে চরের জমিতে বিএসএফের একটা ক্যাম্প করার প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু ক্যাম্প করা তো দূরের কথা, বিএসএফ পদ্মার ওপারে যেতেই চায় না। এরকম পরিস্থিতিতে চরের জমিতে কাজে যাওয়া সত্যিই সমস্যা।”
করিমপুরের বিধায়ক সিপিএমের সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “বৃহস্পতিবার ঘটনার পরে ওখানে গিয়েছিলাম। চাষিদের অবস্থা সত্যিই খারাপ। এদিকে বিএসএফও কার্যত কিছুই করছে না। সকলের চোখের সামনেই বাংলাদেশের লোকজন অবাধে ভারতীয় চরের জমি থেকে ফসল কেটে নিয়ে যাচ্ছে। গোটা বিষয়টি জেলাশাসক ও মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব।”
বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে একটা ফ্ল্যাগ মিটিং হয়েছে। চরের জমিতে নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। তেহট্টের মহকুমাশাসক অচিন্ত্যকুমার মণ্ডল বলেন, “খুব শীঘ্রই করিমপুর ১ ব্লকে বিএসএফ , ব্লক প্রশাসন ও চাষিদের নিয়ে একটা বৈঠক করা হবে। সেখানেই সকলের সঙ্গে আলোচনা করে একটা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চরের জমিতে একটা ক্যাম্প করার ব্যাপারেও আমরা বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি।’’ |
|
|
|
|
|