কৃষকদের স্বার্থে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন ব্লকে মাটি পরীক্ষাগার তৈরি করেছিল প্রশাসন। তৈরি হয়েছিল ভবন, কেনা হয়েছিল যন্ত্রপাতি। কিন্তু তৈরি হওয়ার পর থেকেই সেগুলি তালাবন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে! বছরের পর বছর পড়ে থাকতে থাকতে ভবন জীর্ণ হয়েছে, যন্ত্রে মরচে ধরছে। এত দিন পর সেই পরীক্ষাগারগুলিতে প্রাণ সঞ্চারে উদ্যোগী হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন।
এ-রকম ৭টি পরীক্ষাগার সচল করতে প্রায় ১১ লক্ষ টাকার প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। যার মধ্যে ৯০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১০ লক্ষ টাকা দেবে জেলা প্রশাসন। বাকি দশ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা দেবে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি বা বেনিফিসিয়ারি। কৃষি দফতরের মাধ্যমে এই কাজ করা হবে। জেলা পরিকল্পনা ও উন্নয়ন আধিকারিক প্রণব ঘোষ বলেন, “যাতে গ্রামীণ কৃষকেরা নিজেদের এলাকাতেই মাটি পরীক্ষা করার সুযোগ পান, সে-অনুযায়ী চাষের পরিকল্পনা করতে পারেন--সেই লক্ষ্যেই এই পরীক্ষাগারগুলি সচল করার উদ্যোগ।” |
২০০৫-০৬ ও ২০০৭-০৮ আর্থিক বছরে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে জেলার সাতটি ব্লকে মাটি পরীক্ষাগার তৈরি হয়েছিল। ভবন নির্মাণ হয়েছিল। কেনা হয়েছিল বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম। সব কিছু থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষাগারগুলি এত দিন বন্ধ হয়েই পড়েছিল। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এগুলি চালু করার ব্যাপারে কেউই তেমন উদ্যোগী হয়নি। এমনকী এগুলি কোন দফতরের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তা নিয়েও সংশয় ছিল। ফলে পরীক্ষাগার তৈরি হলেও পরবর্তীকালে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনা, টেকনিশিয়ানদের মাইনে দেওয়া নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়। অভিভাবকহীন পরীক্ষাগারগুলি ক্রমে বন্ধ হয়ে যায়। না ব্লক প্রশাসন, না পঞ্চায়েত সমিতি--কেউই তেমন মাথা ঘামায়নি বলে অভিযোগ। অথচ, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে এগুলি তৈরি করা হয়েছিল যাতে ঘরের কাছেই মাটি পরীক্ষার সুযোগ পান কৃষকরা। কিন্তু বছরের পর বছর কোনও কাজ হয়নি। এত দিনে সেগুলি সচল করতে উদ্যোগী হল প্রশাসন।
খড়্গপুর-১, নারায়ণগড়, ঘাটাল, চন্দ্রকোনা-১, গড়বেতা-৩, ঝাড়গ্রাম ও সবংয়ে রয়েছে এই ৭টি মাটি-পরীক্ষাগার। কোনও কোনও পরাক্ষীগার রয়েছে ব্লক অফিসেই, আবার কোনও পরীক্ষাগার রয়েছে কোনও গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে, কোনও পরীক্ষাগার রয়েছে ব্লক শহরের অন্য কোনও জায়গায়। প্রশাসন জানিয়েছে, পরীক্ষাগারগুলি আপাতত তিন বছর সচল রাখার মতো সাহায্য দেওয়া হবে। জেলা ‘ইনোভেশন’ তহবিল থেকে এই টাকা দেওয়া হবে। তিন বছরের মধ্যেই কৃষকদের কাছ থেকে মাটি পরীক্ষা-বাবদ ন্যূনতম অর্থ নিয়ে স্বনির্ভর হয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। যাতে তিন বছরে যে অর্থ জমবে তা দিয়েই টেকনিশিয়ানের মাইনে, রি-এজেন্ট কেনার খরচ উঠে আসে। পঞ্চায়েত সমিতিও অবশ্য এই দায়িত্ব নিতে পারে। কোনও গ্রাম পঞ্চায়েতও নিতে পারে, আবার কোনও স্ব-সহায়ক দলও পরীক্ষাগার চালাতে পারে। পরীক্ষাগারগুলি সচল হলে ব্লকের চাষিরা উপকৃত হবেন। |