|
|
|
|
|
|
গড়চুমুক |
নব সাজ কবে |
শান্তনু ঘোষ |
পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু জেলা পরিষদ ও বন দফতরের চাপানউতোরে তা কার্যকর হচ্ছে না। ফলে ক্রমশ গুরুত্ব হারাচ্ছে গড়চুমুক। বন দফতরের অভিযোগ, জেলা পরিষদ সহযোগিতা করছে না। আবার জেলা পরিষদ জানাচ্ছে, রাজ্য বন দফতর থেকে এখনও কোনও লিখিত প্রস্তাব আসেনি।
হাওড়া জেলার শ্যামপুর থানা এলাকায় দামোদর ও গঙ্গার মোহনার কাছে ৫৮ গেটের পাশে অবস্থিত গড়চুমুক। অন্যতম বেড়ানোর জায়গা। ঘুরতে বা বনভোজনে এসে ‘মিনি জু’তে হরিণ, নীলগাই, শজারু, ময়ূর দেখে নেওয়া যায়। তবে অভিযোগ উঠেছে, জায়গাটি অপরিচ্ছন্ন। রয়েছে পরিকল্পনার অভাবও। অবস্থা পাল্টাতে ইকো ট্যুরিজম সেন্টার ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে জেলা বন দফতর। বন দফতর সূত্রে খবর, কয়েক মাস আগে এ বিষয়ে রাজ্য বন দফতরের কাছে একটি প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু গড়চুমুকে অধিকাংশ জমিই জেলা পরিষদের। তাদের অনুমোদন এখনও মেলেনি। তাই পরিকল্পনাটি এখন বিশ বাঁও জলে। |
|
রাজ্যের বনমন্ত্রী হীতেন বর্মণ বলেন, “গড়চুমুককে সুন্দর করে সাজিয়ে উন্নতমানের পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলায় আমরা উৎসাহী। তবে জেলা পরিষদ জমি না দিলে কিছুই হবে না। তাই জেলা বন দফতরের প্রস্তাব পেয়েও কিছু করা যাচ্ছে না। স্থানীয় বিধায়কও বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসক, জেলা পরিষদ-সহ অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন।” যদিও হাওড়ার জেলা সভাধিপতি মিনা ঘোষমুখোপাধ্যায় বলেন, “ইকো ট্যুরিজমের প্রস্তাব নিয়ে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু গড়চুমুক নিয়ে আলোচনা বা সমীক্ষার বিষয়টি আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। স্থানীয় বিধায়ক, জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা-সহ অনেকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও লিখিত প্রস্তাব পাইনি।”
বন দফতরের এক কর্তা জানান, গড়চুমুকে দু’টি নদীর মাঝে বনাঞ্চল। সেখানেই অবস্থিত ‘মৃগদাব’ ইতিমধ্যেই মিনি জু হিসেবে ঘোষিত। প্রতি বছরই নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত চুটিয়ে বনভোজন চলে। পর্যটকদের ভিড়ও হয় প্রচুর। এর থেকে জেলা পরিষদের আয়ও হয়। কিন্তু গড়চুমুকের পরিকাঠামোর বিশেষ উন্নয়ন হয়নি। বনাঞ্চলের চার দিক নোংরা আবর্জনা। রয়েছে আগাছাও।
বন দফতর সূত্রে খবর, গড়চুমুকে সামান্য জমি বন দফতরের। সেখানে বন দফতরের নিজস্ব অতিথিশালা ও ছোট বাগান রয়েছে। তবে মৃগদাব জেলা পরিষদের জমিতে হলেও রক্ষণাবেক্ষণ করে বন দফতর। মৃগদাবে এখন ১১৭টি হরিণ, একটি কৃষ্ণসার হরিণ, একটি নীলগাই রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে তিনটি শজারু ও পাঁচটি ময়ূর। কিন্তু জায়গার অভাবে মৃগদাব থেকে ৫০টি হরিণ, একটি নীলগাই এবং কৃষ্ণসার হরিণটিকে অন্যত্র সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাওড়া বন দফতরের কর্তৃপক্ষ। জেলার বনাধিকারিক গৌতম চক্রবর্তী বলেন, “গত দু’বছরের মধ্যে হরিণের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু জায়গা বাড়েনি। সঙ্কীর্ণ জায়গায় এত হরিণ রাখা সম্ভব নয়। তাই কিছু প্রাণীকে সল্টলেকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” |
|
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা পরিষদ মৃগদাবর জন্য আরও সাত একর জমি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু গৌতমবাবু বলেন, “ওই অতিরিক্ত জায়গা হরিণ প্রকল্পের উপযোগী করে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। শেষ হতে কিছু সময় লাগবে। কিন্তু ওখানে ১১৮টি হরিণ রাখা সম্ভব নয়।” কিছু দিন আগেই নীলগাইয়ের তাড়া খেয়ে কয়েকটি হরিণ পালিয়েছিল। স্থানীয় মানুষ ও বনকর্মীদের সহযোগিতায় সেগুলি ধরা পড়ে।
গৌতমবাবু জানান, গড়চুমুকের প্রায় ৪০ একর জমিতে একটি ইকো ট্যুরিজম সেন্টার এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা যায়। আলাদা বনভোজনের জায়গাও তৈরি হবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে জায়গাটির গুরুত্ব আরও বাড়বে। কিন্তু অধিকাংশ জমির মালিকই যেহেতু জেলা পরিষদ, তাই তারা অনুমতি না দিলে কোনও কাজই করা যাবে না। গৌতমবাবু বলেন, “হাওড়া জেলা পরিষদের কাছে জমিটি চেয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সম্মতি পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রীয় জু অথরিটি ইতিমধ্যেই গড়চুমুকের মৃগদাবকে মিনি জু হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু যতক্ষণ না জমির মালিকানা বন দফতরের হচ্ছে ততক্ষণ কেন্দ্রীয় জু অথরিটি কোনও অনুদান দেবে না। ফলে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে না।”
দক্ষিণ উলুবেড়িয়া কেন্দ্রের বিধায়ক তৃণমূলের পুলক রায় বলেন, “বিধায়ক হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই জেলা পরিষদ এবং জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে প্রস্তাবটি জানিয়েছিলাম। কিন্তু জেলা পরিষদ কোনও উত্তর দেয়নি।” বনমন্ত্রী হীতেনবাবুর অভিযোগ, “জেলা পরিষদ নিজেরাও জমিটি ঠিকমতো ব্যবহার করছে না। আবার উন্নয়নের স্বার্থে বন দফতরকেও দিচ্ছে না। যদি জেলা পরিষদ নিজে কিছু করতে চায় সে ক্ষেত্রে বন দফতরের সাহায্য চাইলে আমরা রাজি আছি।” যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা সভাধিপতি মীনাদেবী বলেন, “ইকো ট্যুরিজমের বিষয়টি পুরোপুরি রাজ্য সরকারের। তাই জেলা বনাধিকারিক লিখিত প্রস্তাব দিতে পারেন না। স্থানীয় বিধায়ক, বিরোধী দলনেতার সঙ্গে আলোচনার সময়েই বলেছিলাম, বনমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করতে চাই। তা হলে সুবিধা হত। কিন্তু ওঁরা এখনও সেই ব্যবস্থা করেননি।”
|
ছবি : হিলটন ঘোষ |
|
|
|
|
|