সম্পাদকীয় ২...
সাংস্কৃতিক আগ্রাসন
তিব্বতিদের উপর শারীরিক দমন-পীড়ন ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন অব্যাহত। চিনা কমিউনিস্টরা গায়ের জোরে তিব্বত দখল করিবার পর হইতেই ইহা চলিয়া আসিতেছে। ‘তিব্বত চিনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ’ এই অনৈতিহাসিক তথ্যটিকে আন্তর্জাতিক কূটনীতির অপিরবর্তনীয় সত্যে পরিণত করার পর হইতেই তিব্বতিদের উপর এই নিপীড়নের সূচনা। চিনা সেনাবাহিনীর জওয়ানরাই কার্যত তিব্বত শাসন করিয়া থাকে। সামান্যতম প্রতিবাদ বা বিক্ষোভের আঁচ পাইলেই নির্মমভাবে তাহা দমন করা হয়। তবু এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে শান্তিপ্রিয় তিব্বতিরা মাঝে-মধ্যে প্রতিবাদ করিয়া থাকেন। তৎক্ষণাৎ তাঁহাদের উপর নামিয়া আসে পীড়নের খাঁড়া। সম্প্রতি চিনা পঞ্জিকা অনুসারে ঘোষিত ‘ড্রাগনের বছর’ উদ্যাপন না করিয়া তিব্বতিরা নিজস্ব নববর্ষের উৎসব করিতে গেলে সিচুয়ান প্রদেশে তাঁহাদের উপর সেনারা গুলি চালাইয়া ছয় জন তিব্বতিকে হত্যা করিয়াছে। স্বৈরাচারের স্বরূপ এই ঘটনায় উদ্ঘাটিত।
তিব্বতিদের রাজনৈতিক স্বশাসন তো আগেই কাড়িয়া লওয়া হইয়াছে, সেই ১৯৫৯ সালেই। কিন্তু কেবল তাহাতে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি নিশ্চিত হইতে পারিতেছে না। যে সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য তিব্বতি আত্মপরিচয়ের অভিজ্ঞান, তাহা যত দিন না লুপ্ত করা যাইতেছে, তত দিন তিব্বতিরা পুরোপুরি ‘চিনা’ হইয়া উঠিবে না, তিব্বতও চিনের ‘অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ’ হইয়া উঠিবে না। অতএব তিব্বতিদের ধর্ম (যাহা অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান কিংবা পদ্মসম্ভব প্রবর্তিত মহাযান বৌদ্ধ ধর্মেরই একটি শাখা), সংস্কৃতি, ভাষা, সাহিত্য, সঙ্গীত সব কিছুই পরিকল্পিত ভাবে ধ্বংস করা চিনা কমিউনিস্টদের ব্রত। তাঁহারা ছাঁচে-ঢালা চিনা চাহেন, স্বাতন্ত্র্যগর্বিত তিব্বতি নয়। কিন্তু তবু একটি জনগোষ্ঠীকে রাতারাতি আমূল বদলাইয়া ফেলা যায় না। আনাচেকানাচে সেই অপচেষ্টায় অন্তর্ঘাত ঘটিতে থাকে। ২০০৮ সালে এই প্রক্রিয়াতেই তিব্বতের সাবেক রাজধানী লাসায় বিদ্রোহ ধূমাইয়া ওঠে। দৃষ্টান্তমূলক নৃশংসতার সহিত কমিউনিস্ট নেতৃত্ব তাহা দমন করেন। তিব্বতিদের মনের ক্ষোভ তাহাতে প্রশমিত হওয়ার পরিবর্তে দ্বিগুণ জ্বলিয়া উঠিয়াছে। বেজিংয়ের রাজপথে একের পর এক বৌদ্ধ ভিক্ষু, এমনকী ভিক্ষুণীরাও অগ্নিতে জীবন্ত আত্মাহুতি দিয়া তিব্বতিদের দুর্দশার প্রতি বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করিতে চাহিয়াছেন।
কূটনীতির জটিলতা এমনই যে, তিব্বতিদের দুর্দশা লইয়া কথা বলিলেও চিন সরকার সেটাকে তাহার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বাহিরের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ বলিয়া নিন্দা করিবে। তিব্বতিদের মানবাধিকার লঙ্ঘন লইয়া কেহ কথা বলিলেও তাহাকে পাল্টা হুমকি দেওয়া হইবে। আর্থিক ও সামরিক শক্তিতে উত্তরোত্তর বলীয়ান চিন এখন আন্তর্জাতিক রীতিনীতি, জেনিভা কনভেনশন কিছুরই পরোয়া করে না। ভারতে বহু তিব্বতির বাস। দলাই লামার সহিত যাঁহারা চিনা আগ্রাসনের সময় দেশত্যাগ করিয়াছিলেন, তাঁহারা ভারতেরই ধর্মশালায় আশ্রিত বলিয়া চিনের বিড়ম্বনার অন্ত নাই। ভারতীয় ভূখণ্ড অরুণাচল প্রদেশকে সাবেক তিব্বতের অংশ হিসাবে দাবি করিয়া চিন তাহার উপর আপন অধিকার কায়েম করিতে সতত উদ্যত। ভারত সরকারও কূটনৈতিক স্পর্শকাতরতার কারণেই তিব্বতিদের দুরবস্থা লইয়া নীরব। কিন্তু ভারতীয় জনসাধারণের সে-দায় নাই। যে-তিব্বতিরা নিজেদের নববর্ষ উদ্যাপন করিতে আগ্রহী কিংবা চিনা ‘ড্রাগন-বর্ষ’ উদ্যাপনে অনিচ্ছুক, তাঁহাদের প্রতি পূর্ণ সংহতি জানাইবার অধিকার সকল বিশ্ববাসীর আছে। অধিকার আছে সেই বর্বরতার কঠোরতম নিন্দা করিবার, যাহা বিজিত জনগোষ্ঠীকে গায়ের জোরে নিজস্ব সংস্কৃতি ভুলাইয়া বিজেতার সংস্কৃতি গলাধঃকরণ করাইতে চায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.