এই সপ্তাহটা শুরু হয়েছিল সুভাষচন্দ্র স্মরণের ছুটি দিয়ে। তারপরেই বৃহস্পতিবার প্রজাতন্ত্র দিবস। মাঝখানে কেবল একটা শুক্রবার। আবার দু’টি ছুটির দিন। তার মধ্যে শনিবার সরস্বতী পুজো। বেড়াতে যাওয়ার জায়গাগুলিতে পা ফেলার জায়গা নেই। নবদ্বীপে ভিড় উপছে পড়ছে। হোটেল ব্যবসায়ীদের রাজ্য সংগঠনের সম্পাদক প্রসেনজিৎ সরকার বলেন, “মাঝে মাঝে বৃষ্টির জন্য শীতের পর্যটন এ বার তুলনায় মার খেয়েছে। ভরা মরসুমের সেই ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে এই ছুটিটা। সমস্ত পর্যটন কেন্দ্রের সব হোটেলেই লোক ভর্তি।” তাঁর কথায়, “পর্যটন এমন একটা ব্যবসা যার ফলে আরও অনেক ব্যবসায় তার প্রভাব পড়ে। তাই এই সময়ে এই লাভের অঙ্ক গোটা অঞ্চলেরই আর্থিক উন্নতি ঘটাবে।” তবে নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সম্পাদক গোকুলবিহারী সাহা বলেন, “সরস্বতী পুজোর ফলে ভিড় বরং কমে গিয়েছে। পুজো না থাকলে এই সময়ের টানা ছুটিটা উপভোগ করতে অনেক বেশি পর্যটক আসতেন। শুক্রবার রাত থেকে ভিড় পাতলা হয়ে যাবে বলেই আমাদের ধারণা।”
কিন্তু বাজারে প্রায় সব জিনিসেরই দাম বেড়ে গিয়েছে। সরস্বতী পুজোর বাজার করতে গিয়ে নবদ্বীপের গৃহশিক্ষক অয়ন সাহা। দু’টি ইঞ্চি চারেক লম্বা যবের শিস এবং দু’টো পলাশ ফুল কিনে দেখেন দাম চাওয়া হচ্ছে ২৫ টাকা। তখনই জানা গেল, শুকনো পলাশের কেজি বারোশো টাকা। পলাশপ্রিয়ার পুজোয় শুধু পলাশই নয়, সব রকমের পুজোর উপকরণেরই দাম একরকম আকাশছোঁয়া। আমের মুকুল চড়া দামে বিকোচ্ছে। শীতকালীন সব্জি বা মরসুমী গাঁদা ফুলের দাম এক লাফে বেশ খানিকটা চড়ে গিয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, মূল্যবৃদ্ধির জেরে কমছে বিক্রির পরিমাণ। বেশিরভাগ লোকই নিয়মরক্ষার জন্য যতটুকু দরকার, ততটুকু কিনছেন। ফলে বিক্রেতারাও ভরসা করে খুব বেশি জিনিস কিনছেন না।” ফলের বাজারে আপেল, ন্যাসপাতি, বেদানা ১০০ টাকা থেকে ৮০ টাকা প্রতি কেজি। শাঁখালু ২০-২৫ টাকা। শসা ২৫-৩০ টাকা। কলা ৫-৬ টাকা জোড়া। কুল ৩০-৪০ টাকা। বাজারে খুব কম পাওয়া যাচ্ছে জোড়া কুল বা আমের মুকুল। পূর্বস্থলীর সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “আমের মুকুলের জন্য যে ধারাবাহিক কড়া ঠান্ডাটা দরকার, তা এ বার পাওয়া যায়নি। যার ফলে এই সময় গাছে যেমন মুকুল আসার কথা, তেমন হয়নি। এই সময়ে পলাশ সহ অন্য সব ফুলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা দরকার হয়।”
নবদ্বীপের বড় বাজারের ব্যবসায়ী প্রতাপ সাহা বলেন, “মূল্যবৃদ্ধির ফলে ক্রেতারাও জিনিসপত্র কম করে কিনছেন। তাই বাজারের হালল খুবই খারাপ।” সব থেকে বেশি দাম বেড়েছে প্রতিমার। হাতে তৈরি ফুট খানেকের একটি প্রতিমা ২০০ টাকা থেকে শুরু। তারপরে আকার আয়তন বুঝে দাম বাড়ছে। সচারচর যে মাঝারি মাপের প্রতিমা দেখা যায়, তার দাম ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। ছাঁচের প্রতিমা ১০০ টাকা থেকে শুরু। একটু নামী কারিগরের প্রতিমা ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকার নীচে মিলছে না। গোকুলবিহারীবাবু অবশ্য বলেন, “যে কোনও পুজোর আগেই বাজারের দাম বাড়াটা একটা স্বাভাবিক প্রবণতা। ব্যবসায়ীদের পরিভাষায় এটাকে বলা হয় ‘লগনসা’। মূল্যবৃদ্ধির ফলে ক্রেতাদের মতো বিক্রেতাদেরও সমস্যা হয়। তখন কিছুটা অন্তত লাভ করার জন্য তাঁরা হিসেব কষেই দাম সামান্য বাড়ান। বরং অন্য বারের চেয়ে এ বারে সব্জির দাম কম।”
তাই ছোট ছোট অজস্র পুজোর যে আয়োজন সরস্বতী পুজোর বৈশিষ্ট্য, তাতে এ বার ভাঁটার টান। |