ধান বিক্রি করতে না পারা চাষিদের অবরোধের জেরে যানজটে হাজার-হাজার যাত্রীর সঙ্গে ঘটনাচক্রে আটকে পড়ছিলেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকও। চার দিন বিশেষ শিবির করে ধান কেনা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিলে চাষিরা রাস্তা ছাড়েন।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ বর্ধমানের গলসি থানার পারাজের কাছে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন চাষিরা। সঙ্গে ছিলেন কংগ্রেসের স্থানীয় নেতারা। চাষিদের আত্মহত্যা এবং ঢেকলাপাড়া চা বাগানে শ্রমিক-মৃত্যুর প্রতিবাদে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১টা থেকে ২টো পর্যন্ত রাজ্য জুড়ে পথ অবরোধের ডাক দিয়েছে বিজেপি-ও।
নিজের শহর আসানসোলে প্রজাতন্ত্র দিবস কাটানোর পরে সকালে কলকাতায় যাচ্ছিলেন মলয়বাবু। পানাগড়ে পুলিশ তাঁর কনভয় অন্য দিক দিয়ে ঘুরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু মন্ত্রী তাতে রাজি হননি। পরে অবরোধের জেরে যানজটে গাড়ি আটকালে তিনি নেমে এক দলীয় সমর্থকের মোটরবাইকে চেপে ঘটনাস্থলে যান। ডেকে নেন জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনাকেও। |
চাষিদের অভিযোগ ছিল, সকালে তাঁরা এলাকার একটি চালকলে ধান বিক্রি করতে গেলে তারা জানায়, এক মাসের আগে ধান কেনা হবে না। পরে কেনা হলেও দাম দেওয়া হবে তিন মাস পরের তারিখের চেকে। ইতিমধ্যে চালকলের দেওয়া চেক ‘বাউন্স’ করার ঘটনাও ঘটেছে। কংগ্রেসের জেলা নেতা সিরাজুল হক মণ্ডল বলেন, “বোরো চাষ শুরুর আগে খরিফ ধান বিক্রি না হলে চাষিদের সমস্যা হবে। কিন্তু চালকলের মালিক কিছুই শুনতে চাননি।”
আইনমন্ত্রী বলেন, “অবরোধে সামিল চাষিরা অভিযোগ করেন, এলাকার চালকলগুলি বাইরে থেকে ধান কিনছে। জেলাশাসককে ডেকে এ বিষয়ে জানতে চাই।” জেলাশাসক জানান, সেখানে দাঁড়িয়েই সরাসরি খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ফোন করেন মলয়বাবু। তাঁর সঙ্গে আলোচনার পরে তিনি ঘোষণা করেন, ওই এলাকায় ৩১ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিবির করে ক্ষুদ্র চাষিদের ধান কিনবে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিগম। এর পরেই অবরোধ উঠে যায়।
তবে চালকলের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগের নিরসন হয়নি। চাষিদের ক্ষোভ, বাইরে থেকে চাল কিনছে বলেই কলগুলি নিয়মানুযায়ী চাষিদের থেকে ধান কেনার তালিকা টাঙাচ্ছে না। জেলাশাসক অবশ্য দাবি করেন, এলাকার ১৬টি চালকল ঘুরে দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক প্রায় সর্বত্রই তালিকা দেখতে পেয়েছেন। স্থানীয় রামপুর গ্রামের সঞ্জয় চন্দ্রের নামে চালকলের দেওয়া দু’টি চেক বাউন্স করা নিয়েও চাষিরা ক্ষুব্ধ। গলসি ১-এর বিডিও নিরঞ্জন কর অবশ্য বলেন, “ব্যাঙ্ক চেক ভাঙাতে না চাওয়ায় আমি সংশ্লিষ্ট চালকলকে জানাই। তারা চেক পাল্টে দেয়। পরে ব্যাঙ্ক জানায়, ওই চেক না ভাঙানো তাদেরই ত্রুটি।”
এ দিনই নদিয়ার চাকদহে চাঁদুরিয়া গ্রামের চাষি মদন সাধুখাঁর চেক বাউন্স করে। চালকলের অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকাতেই ওই ঘটনা বলে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শিমুরালি শাখা জানিয়েছে। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের বক্তব্য, “চাষি ও শ্রমিকদের দুরবস্থার জন্য জন্য দায়ী রাজ্য সরকারের ভ্রান্ত নীতি। তাই আমরা পথ অবরোধ কর্মসূচি নিতে বাধ্য হয়েছি।” |