এক বছরের বেশি হয়ে গেল, মেলেনি বার্ধক্যভাতা। আর কাগজেকলমে সেই প্রমাণ পেয়ে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনকে দ্রুত সেটা নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিলেন কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ।
বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিয়েছিলেন বলরামপুরের মাওবাদী উপদ্রুত ঘাটবেড়া-কেরোয়া পঞ্চায়েতের ঘাটবেড়া ও মণ্ডল কেরোয়া গ্রামে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্য গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত দফতরের আধিকারিক এবং জেলা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। সকাল ৯টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা ওই দুই গ্রামে ছিলেন তিনি। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে চান বছরে ১০০ দিন কাজের প্রকল্প, বার্ধক্যভাতা, ইন্দিরা আবাস যোজনার মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির হালহকিকত। অযোধ্যা পাহাড় ঘেঁষা ঘাটবেড়া গ্রামে গিয়ে সামাজিক বনসৃজনের কাজ দেখার পরে মণ্ডল কেরোয়া গ্রামে যান মন্ত্রী। সেখানে ১০০ দিন প্রকল্পে রাস্তা সংস্কার পরিদর্শন করেন। ইন্দিরা আবাসের আওতায় নির্মিত একটি বাড়ি দেখেন কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত মন্ত্রী। খুঁটিয়ে জানতে চান, কী কাজ করে ওই পরিবার। জমি আছে কি না বা ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায় কি না। |
এর পরেই জয়রাম রমেশ যান বৃদ্ধা মালা মণ্ডলের বাড়িতে। মালাদেবীর কাছে তিনি জানতে চান, বার্ধক্যভাতা ঠিকমতো পান কি না। সদুত্তর মেলার পরেও মন্ত্রী মালাদেবীর বার্ধক্যভাতা সংক্রান্ত নথিপত্র দেখতে চান। নথিতে দেখা যায়, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে শেষ ভাতা পেয়েছিলেন ওই বৃদ্ধা। এর পরেই মন্ত্রী সঙ্গে থাকা প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাছে দীর্ঘ এক বছর ভাতা না মেলার কারণ জানতে চান। বলরামপুর ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিক মন্ত্রীকে জানান, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অর্থ সময়মতো না আসাতেই ভাতা পেতে দেরি হয় প্রাপকদের। ২০১১ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ভাতার টাকাও জেলা প্রশাসনের কাছে সম্প্রতিই এসেছে।
কিন্তু ঘটনা হল, এত প্রয়োজনীয় ভাতা দিতে দেরি হওয়ায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সমালোচনা শুনতে হয়েছে প্রশাসনকে। জয়রাম বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসে নিয়মিত এই ভাতা উপভোক্তাদের দিতেই হবে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে উপভোক্তা প্রতি ২০০ টাকা বরাদ্দের কাজ যাতে কেন্দ্র দ্রুততার সঙ্গে করে, তা আমি দেখব। তবে রাজ্য সরকারেও তার বরাদ্দের অংশ দ্রুততার সঙ্গে জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠাতে হবে।” মন্ত্রীকে সামনে পেয়ে বার্ধক্য ভাতা না মেলার বিষয়ে অভিযোগ করেন ওই গ্রামের দুলু মণ্ডলও। বাড়িতে আজও বিদ্যুৎ না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মাতানট্যাড় গ্রামের টুকি হাঁসদা, বাসন্তী মান্ডিরা। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
ঘাটবেড়া-কেরোয়ার মতো মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায় থেকে উন্নয়নের কাজ করার জন্য মন্ত্রীর প্রশংসাও পান বলরামপুরের বিডিও অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশ সুপার সুনীলকুমার চৌধুরী এলাকায় মাওবাদী নাশকতা ও প্রভাবের বিষয়ে মন্ত্রীকে জানান। বিডিও-র কাছে মন্ত্রীর প্রশ্ন, “এই উপদ্রুত এলাকায় কী ভাবে উন্নয়নের কাজ করেন? কর্মীরা কি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন না?” অরিন্দমবাবুর জবাবে দৃশ্যতই খুশি দেখায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাঁকুড়া থেকে পুরুলিয়ায় এসে জেলা পরিষদের সভাগৃহে জেলার উন্নয়ন নিয়ে প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে যে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সেখানেও জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে উন্নয়ন ঘটিয়ে মাওবাদী সমস্যার মোকাবিলা করার উপরে বিশেষ গুরুত্ব দেন জয়রাম রমেশ। বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানান, জাপানের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পুরুলিয়ায় জল-প্রকল্প গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁর মন্ত্রক। প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় পিচ রাস্তার পাশাপাশি ঢালাই রাস্তা নির্মাণের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীর কথায়, “জঙ্গলমহল এলাকায় কাঁচা ও পিচ রাস্তা ল্যান্ড মাইন দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার কথা মাথায় রেখেই নিরাপত্তাজনিত কারণে ঢালাই রাস্তা তৈরি করা যাবে বলে আমরা ঠিক করেছি।” বুধবার সকালে বলরামপুর যাওয়ার আগে পুরুলিয়া শহরের সাহেববাঁধ জাতীয় সরোবর পরিদর্শন করেন মন্ত্রী।
পুরোদস্তুর সরকারি কর্মসূচিতে এলেও দলের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে বলরামপুরের কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন, তৃণমূল এলাকায় পঞ্চায়েত ও সরকারি কাজে দুর্নীতি করছে। প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাস চালাচ্ছে। ঘাটবেড়া গ্রামে এই অভিযোগ করেন কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি সুভাষ দাস। তবে মন্ত্রী এ বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে বিশদে আলোচনায় যাননি। পরে তিনি বলেন, “এই বিষয়গুলি জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকে দেখতে বলেছি।” |