উত্তর ২৪ পরগনা নতুন প্রজন্মের নেতা তুলে
আনতে ব্যর্থ সি পি এম
জেলা কমিটির অধিকাংশ সদস্যের গড় বয়স ৬০ বছরের বেশি। বিগত তিনটি সম্মেলনে নতুন প্রজন্মের নেতাও তুলে আনতে ‘ব্যর্থ’ দল। জেলা সম্পাদক পদে সর্বসম্মত ভাবে কোনও নেতাকে এখনও ‘পছন্দ’ করেও উঠতে পারেনি আলিমুদ্দিন। এই পরিস্থিতিতে একাধিক বার জেলা সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি-চাওয়া ৮০ বছরের অমিতাভ বসু ওরফে ‘বড়দা’ই কি আবার জেলা সম্পাদক হতে চলেছেন? আজ, বৃহস্পতিবার থেকে দমদমে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলন শুরুর আগে এই প্রশ্নই বড় হয়ে উঠছে।
‘বড়দা’র পরিবর্তে সম্পাদক হিসাবে যে তিনজনের নাম দলীয় মহলে শোনা যাচ্ছে, তাঁরা হলেন দমদমের প্রাক্তন সাংসদ অমিতাভ নন্দী, ব্যারাপুরের প্রাক্তন সাংসদ তড়িৎ তোপদার এবং বারাসত-বনগাঁর কৃষক নেতা হিসাবে পরিচিত রণজিৎ মিত্র। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য এই তিন নেতার গড় বয়সও অবশ্য ৬৫-র বেশি। লোকসভা ভোটে হারের পর দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নতুন জেলা সম্পাদক করা হয় নতুন প্রজন্মের নেতা সুজন চক্রবর্তীকে। কিন্তু দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি-চাওয়া প্রায় ৮০ বছরের রঘুনাথ কুশারীকেই এ বারও কলকাতায় জেলা সম্পাদক পদে রেখে দেওয়া হয়েছে। পার্টির একাংশ অবশ্য বলছেন, পার্টি কংগ্রেসের পরে রঘুনাথবাবুর পরিবর্তে নতুন কাউকে জেলা সম্পাদক করতে পারে সিপিএম। বিধানসভা ভোটে পরাজয়ের কারণ হিসাবে সিপিমের জেলা নেতৃত্ব অন্যান্য কারণের মধ্যে বয়স সংক্রান্ত যে দুটি কারণ চিহ্নিত করেছেন তা হল নতুন প্রজন্মের সক্রিয় কর্মী ও নেতৃত্ব তুলে আনতে না-পারা। এবং তা করতে না-পেরে বার বার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি-চাওয়া নেতাদের হাতেই আবার ক্ষমতা তুলে দেওয়া।
লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে জেলায় ভরাডুবির পর সংগঠনের কাজে অমিতাভ নন্দীকে জেলার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ছুটে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকেও তিনিই নিচ্ছেন ‘মুখ্য ভূমিকা’। তা নজর এড়ায়নি আলিমুদ্দিনের। কিন্তু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং জেলার অন্যতম নেতা তথা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেব দু’জনেই অমিতাভ নন্দীকে জেলা সম্পাদক করার বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ‘ভাবমূর্তি’ নিয়ে। কিন্তু গত আট মাস জেলায় বিরোধী নেতা হিসাবে অমিতাভ নন্দীকেই সব ব্যাপারে এগিয়ে দিয়েছে সিপিএম। তাঁর জেলা সম্পাদক হওয়ার জল্পনার মধ্যেই অমিতাভ নন্দী বলছেন, “বিধানসভা ভোটের পর জেলা জুড়ে আমাদের কর্মীদের উপরে তৃণমূল ও পুলিশ পরিকল্পিত হামলা করছে। দলের নির্দেশেই আমি সে সব জায়গায় গিয়ে কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছি।” তাঁর ঘনিষ্ঠদের মতে, বুদ্ধ-গৌতম যা-ই বলুন, তৃণমূলকে টক্কর দিতে অমিতাভ নন্দীর মতো নেতারই প্রয়োজন।
দলের একাংশের আবার অভিমত, অমিতাভ নন্দীর তুলনায় ‘জনপ্রিয়’ ও ‘স্পষ্টবক্তা’ তড়িৎবাবুকে দলের দায়িত্ব দিলে ভাল হবে। একদা জেলায় ক্ষমতাসীন প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তী গোষ্ঠীর অন্যতম নেতা গৌতমবাবুও সমর্থন করেন তড়িৎবাবুকে। জেলা রাজনীতিতে তাঁরা দু’জনে একই গোষ্ঠীভুক্ত। তড়িৎ-বিরোধী গোষ্ঠীর নেতারা বলছেন, আট মাসে বামেদের আন্দোলনে তেমন দেখা যায়নি এই বর্ষীয়ান নেতাকে। প্রাক্তন শিক্ষক তড়িৎবাবু শ্রমিক নেতা হিসাবে পরিচিত। বনগাঁ-বারাসত এলাকার নেতারা চাইছেন রণজিৎবাবুকে। তাঁদের মতে, ঘুরে দাঁড়াতে হলে কৃষক নেতার হাতে দলের দায়িত্ব দেওয়া উচিত।
জেলা সম্মেলনের আগে বয়স নিয়ে কর্মীদের ক্ষোভের পাশাপাশি রয়েছে নতুন কর্মীদের দলীয় সদস্য পদ না-দেওয়া নিয়ে টালবাহানার বিষয়টিও। ছাত্র, যুব নেতা, মহিলা কর্মী বা মধ্যবয়সী কর্মীদের এখনও দলের সদস্য হতে না-পারা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। জেলায় ২২টি জোনাল কমিটি রয়েছে। তার মধ্যে বসিরহাট মহকুমাতেই রয়েছে ৭টি জোনাল কমিটি। বনগাঁ মহকুমায় রয়েছে মাত্র একটি জোনাল কমিটি। বনগাঁ, বাগদা, গাইঘাটা, গোপালনগর, গোবরডাঙার মতো বিশাল এলাকা একটি জোনাল কমিটির মধ্যে। আশির দশক থেকে এই জোনাল কমিটি ভাঙার প্রস্তাব এলেও তা কার্যকর হয়নি। লোকাল কমিটিতে নয়া সদস্য না-নিয়ে ক্ষমতা ‘কুক্ষিগত’ করে রাখার অভিযোগ রয়েছে। এখন দেখার, আলোচনার মাধ্যমে কী সিদ্ধান্ত নেয় সিপিএম।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.