শিল্পীদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার তালিকায় শীর্ষে কলকাতা। ‘পাবলিক পারফরমেন্স লাইসেন্স’ বাবদ টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা সমস্ত বড় শহরের পেছনে। ‘ইন্ডিয়ান পারফর্মিং রাইট সোসাইটি’-র অভিযোগ, কমপক্ষে ৪০% টাকা মার যায় বছরে। অর্থাৎ লোকসানের অঙ্ক কোটি টাকার বেশি।
১৯৫৭-র কপিরাইট আইনের ৩৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী ১৯৬৯-এ তৈরি হয় ‘ইন্ডিয়ান পারফর্মিং রাইট সোসাইটি’ (আইপিআরএস)। যাদের প্রধান কাজ গায়ক, গীতিকার ও সুরকারদের হয়ে কপিরাইট আইন মানা হচ্ছে কি না, তার উপর নজরদারি করা। অনুষ্ঠান-সহ শপিং মল, রেস্তোরাঁ, ডিস্কো, ক্লাব ইত্যাদি জায়গায় যে কোনও গান বাজানোর জন্য লাইসেন্স ফি নেয় কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ মন্ত্রক অনুমোদিত এই সোসাইটি। ফি বাবদ টাকা দেওয়ার আইনের আওতায় আছে হাসপাতাল, চিকিৎসকের চেম্বার থেকে জিমন্যাসিয়াম, বিউটি পার্লার, সব।
আর লাইসেন্স ফি হিসেবে আদায় করা ওই টাকা থেকে শিল্পীরা রয়্যালটি পান। সোসাইটির দাবি, সলিল চৌধুরি, ও পি নায়ার, গুলজার থেকে এ আর রহমান, গুরদাস মান-সহ অধিকাংশ শিল্পী তাদের সদস্য। সোসাইটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান অভিষেক বসু জানান, মৃত্যুর ৬০ বছর পর পর্যন্ত শিল্পীর পরিবারকে রয়্যালটি দিতে হয়। কিন্তু ফি ফাঁকির ওই প্রবণতা বজায় থাকলে সেই টাকার অঙ্ক কখনওই বড় হবে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, “মুম্বই, দিল্লি বা বেঙ্গালুরু থেকে আদায়ের অঙ্ক ১০ কোটি ছাড়ালেও সাংস্কৃতিক রাজধানী কলকাতা বহু পেছনে।”
এ ছাড়াও আছে সচেতনতার অভাব। শিল্পীরা জানেনই না, সোসাইটি-র সদস্য হলে নিজের সৃষ্টির মালিকানা বজায় রাখা ও তা থেকে আয় করা সম্ভব। যেমন জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। যাঁর গাওয়া ‘এ কোন সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার’ রেকর্ড কোম্পানির ক্যাশ বাক্সে টাকা ভরে এখনও। তিনি বলেন, “সোসাইটি -র সদস্য হওয়ার আগে রয়্যালটি বলতে মাঝে মধ্যে দু’-চারশো টাকার চেক আসত। পরে বিষয়টি জানতে পেরে গানগুলি নথিভুক্ত করি। এখন বছরে কয়েক বার রয়্যালটি পাই।” শিল্পমহলের অভিযোগ, সুরকার ও গীতিকাররা বেশি মার খান। কারণ রেকর্ড সংস্থার সঙ্গে চুক্তি না-থাকলে, এককালীন টাকা ছাড়া রয়্যালটি পাওয়া দুষ্কর। কারণ তা নির্ভর করে রেকর্ড সংস্থার উপরেই। প্রয়াত গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুত্র পিয়াল বন্দ্যোপাধ্যায় এই সচেতনতার অভাবের কথা স্বীকার করে বলেন,“ বিষয়টি জানা ছিল না। বাবার মৃত্যুর এক বছর পরে ফিল্মের বাইরের ১,২০০ গান নথিভুক্ত করাই। ফিল্মের গান নথিভুক্তি করছি এখন।” সঙ্গে অর্থ লাভের কথাও বলেন তিনি। এ প্রজন্মের শিল্পীরা অবশ্য বেশ সচেতন। যদিও ফাঁক আছেই বলে মত সুরকার-গায়ক দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়ের। তাঁর দাবি, সোসাইটিকে আরও এগিয়ে আসতে হবে। শিল্পীদের বোঝাতে হবে বিষয়টি। সোসাইটি অবশ্য মনে করে কপিরাইট আইন সংশোধন হলে ছবিটা বদলাবে। আইনের প্রয়োগ বেশি হবে। বাড়বে সচেতনতাও। |