ধান-আলুর ক্ষতি মেটাবে ফুলচাষ, আশায় চাষিরা
প্রতি বছরই শীত পড়তেই পূর্বস্থলীতে শুরু হয়ে যায় ফুল চাষ। লাভও হয় ভালই। তবে ধান ও আলু চাষে বিপর্যয়ের পরে লাভের মুখ দেখতে এ বছর অনেক বেশি পরিমাণ জমিতে ফুলচাষ করছেন চাষিরা। এ বার ৩০০ বিঘার জায়গায় প্রায় ৮০০ বিঘা জমিতে ফুলচাষ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
বিস্তীর্ণ এলাকায় বিভিন্ন রঙের ফুলের চারা। জমির আশপাশে ভিড় খরিদ্দারদের। জমি থেকে ফুল-সমেত চারা তুলে নীচের অংশ খবরের কাগজে মুড়ে তোলা হচ্ছে বিভিন্ন গাড়িতে। গাড়িবোঝাই ফুলের চারা পাড়ি দিচ্ছে ওড়িশা, অসম-সহ বিভিন্ন রাজ্যে। ঝুড়িতে করে ফুলের চারা মাথায় নিয়েও যাচ্ছেন অনেকে। বিকল্প চাষ হিসেবে পূর্বস্থলীর পলাশফুলি গ্রামে এ ভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ফুলের চারার চাষ।
পূর্বস্থলী পঞ্চায়েতের ওই গ্রামটির বাসিন্দারা মূলত চাষবাদারে উপর নির্ভরশীল। অনেকে তাঁত শিল্প, কুয়োর পাড় তৈরির সঙ্গেও যুক্ত। গ্রামবাসীরা জানান, দু’দশক আগেও ধান, পাট, আলু ইত্যাদি গতানুগাতিক ফসলের চাষ হত। কিন্তু এর মধ্যে একমাত্র পাট চাষেই লাভের কিছু নিশ্চয়তা ছিল। আস্তে আস্তে এলাকার মানুষ ফুলের চাষ শুরু করেন। লাভ হচ্ছে দেখে সেই চাষ এখন এলাকার চাষিদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। চাষিদের দাবি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এই চাষে লাভ নিশ্চিত। যদিও এ বারের টানা বৃষ্টিতে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে ফুলচাষে।
নিজস্ব চিত্র।
গ্রামের শেষ প্রান্তে রয়েছে মাঠ। সেখানে চারাগাছে ফুটে রয়েছে লাল, নীল, হলুদ, কমলা-হ নানা রঙের ফুল। মাঠের মাঝে ডিজেল-চালিত শ্যালো পাম্প। চাষিরা জানান, প্রথমে হলুদ, লাল ও রক্ত গাঁদা দিয়ে চাষ শুরু হয়। এখন প্রায় পঞ্চাশ রকমের চারা তৈরি হয়। এই সব চারার মধ্যে রয়েছে গোলাপ, অ্যাসটার, ব্যবিডল, ভারব্যালা, মাছি গাঁদা, শৌখিন লঙ্কা, গেজেনিয়া, আলভিয়া, সুটেলিয়াম, হ্যালেকিষান, অ্যান্টেনিয়াম ইত্যাদি। চাষিরা জানান, দুর্গাপুজোর আগেই শুরু হয়ে যায় এই চাষের জন্য জমি তৈরির কাজ। অধিকাংশ চাষিই বীজ কেনেন নদিয়ার কৃষ্ণনগর থেকে। দুর্গাপুজোর পর থেকেই শুরু হয় চারা গাছের ব্যবসা। তা প্রথম দফায় চলে সরস্বতী পুজো পর্যন্ত। প্রথম দফায় ফুলচারা চাষের শেষে পাটের চাষ করা হয়। জমি থেকে পাট উঠে গেলে ফের ফুলচারা চাষের কাজে নামা হয়।
তবে সমস্যা হয় নিম্নচাপ বা স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া থাকলে। সেক্ষেত্রে চারা পচে যায়। তা না হলে অবশ্য এই চাষ বেশ লাভজনক বলেই জানাচ্ছেন চাষিরা। ফুলচাষি সনৎ ঘোষ, গৌতম শীল বলেন, “ধান, আলু চাষে নিশ্চয়তা ক্রমশ কমছে। চাষ করার আগে জানা যায় না বছরটা কেমন যাবে। সে দিক থেকে ফুলের চাষে নিশ্চয়তা রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে বিঘা প্রতি জমিতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হয়।” পলাশফুলি ছাড়াও পূর্বস্থলী ২ ব্লকের পারুলিয়া, কালেখাঁতলা, বিদ্যানগর, চুপি-সহ বেশ কয়েকটি এলাকার নার্সারিগুলিও ফুলের চারা তৈরি করে আসছে দু’দশক ধরে।
বিহার, ওডিশা, রাঁচি, আসানসোল-সহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা মাঠে গিয়ে ফুলের চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আসানসোলের ফুলচারা ব্যবসায়ী রমেশ অগ্রবাল বলেন, “পূর্বস্থলীর বেলে-দোঁয়াশ মাটিতে যে চারা তৈরি হয় তা অনেক বেশি সতেজ। ফুলও হয় তাড়াতাড়ি। তবে এখানকার গাঁদা ফুল গাছের চাহিদা সবথেকে বেশি।” তবে চাষিদের দাবি, “চাহিদা থাকলেও এলাকায় এখনও তেমন বাজার নেই। তাই ভিন্ রাজ্যের ক্রেতাদের উপরেই নির্ভর করতে হয়। এলাকায় বাজার তৈরি হলে ফুলচাষে লাভের নিশ্চয়তা আরও বাড়বে।”
পূবর্স্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “চাষিরা এই সমস্যার কথা এখনও লিখিতভাবে জানাননি। তবে হর্টিকালচার দফতরে ফুলচাষিদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.