আজ মালদহে স্বাস্থ্য অধিকর্তা
সাড়ে ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে ৩ সদ্যোজাতের মৃত্যুর পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ১৫ শিশুকে অন্যত্র রেফার করে দেওয়ায় আতঙ্ক ছড়াল রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে। রবিবার রাত ৮টা ২০ মিনিট থেকে ১১টা ৪০ মিনিটের মধ্যে ওই ৩টি শিশুর মৃত্যু হয়। তার পরেই দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক নারায়ণচন্দ্র পাল ওই শিশুদের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দেন বলে অভিযোগ। তা দেখে আরও ১১টি শিশুকে অভিভাবকেরা মুচলেকা দিয়ে বাড়িতে নিয়ে যান। বর্তমানে হাসপাতালের ২০ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ৫টি শিশু ভর্তি রয়েছে। তিনটি শিশুর মৃত্যুর পরে সোমবার রাতে মৃতদের অভিভাবকেরা চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে কর্তব্যরত নার্সদের দীর্ঘক্ষণ ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। শিশু বিভাগে গড়ে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫ জন শিশুর চিকিৎসা হয়। শিশু বিভাগের নার্সিং ইনচার্জ ছায়া মন্ডল বলেন, “নারায়ণবাবু নিয়মিত ওয়ার্ডে আসতেন না। ঠিকমতো ওষুধ লিখে দেন না। তাঁর গাফিলতির জেরে সমস্যা হচ্ছে।”
দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের বক্তব্য, যে ১৫টি শিশুকে তিনি রেফার করেছেন, প্রত্যেকের অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল। যে তিনটি শিশু মারা গিয়েছে, তাঁদের অবস্থাও গুরুতর ছিল বলে দাবি করেছেন জেলার ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অজয় চক্রবর্তীও। ওই হাসপাতালে মোট শিশু বিশেষজ্ঞের সংখ্যা ৪। ঘটনাচক্রে হাসপাতালের ৩ জন চিকিৎসকই ছুটি রয়েছেন। ফলে শিশু বিভাগে এখন একমাত্র চিকিৎসক নারায়ণবাবুই। নারায়ণবাবু দাবি করেন, “আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। সরকারি নিয়ম মেনেই দায়িত্ব পালন করেছি।” বিভাগের তিন চিকিৎসক একই সঙ্গে কী ভাবে ছুটিতে গেলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তার কৈফিয়ত তলব করেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তিনজনকেই ডেকে পাঠানো হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা না পৌঁছচ্ছেন, ততক্ষণ একজন বেসরকারি চিকিৎসককে শিশু বিভাগে কাজ করতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী। তিনি বলেছেন, “যে চিকিৎসক অসহযোগিতায় অভিযুক্ত, তাঁর সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনি ডিউটি করছেন।” তবে যে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের সকলের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিল বলে জানান স্বাস্থ্যকর্তারা। হাসপাতাল যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে।
মঙ্গলবার রায়গঞ্জ হাসপাতালে তরুণ দেবনাথের তোলা ছবি।
মঙ্গলবার হাসপাতালে যান রায়গঞ্জে কংগ্রেস বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত, পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলর পবিত্র চন্দ-সহ অন্যরা। মোহিতবাবু বলেন, “স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা সতর্ক করে গেলেও হাসপাতালের বেহাল চিকিৎসা পরিষেবার হাল ফেরেনি।” জেলা রোগী কল্যাণ কমিটির সদস্য তথা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অরিন্দম সরকার বলেন, “রাজ্য সরকারের দুর্নামের চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানানো হচ্ছে।”
মৃত শিশুদের আত্মীয় সন্তোষ বর্মন ও মিঠুন পাল বলেন, “আমাদের শিশুরা হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় পড়ে থেকে মারা গেল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে দোষী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছি।” গৌতম বল, আতাবুল হক, হুসনেরা খাতুনের মতো কয়েকজন অভিভাবক বলেন, “শিশু বিভাগে একের পর এক শিশু মারা যাচ্ছে। মুচলেকা দিয়ে আমাদের শিশুদের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করাব।” হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, অপরিণত অবস্থায় জন্ম হওয়ার কারণে ১টি কন্যা সন্তানের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া অন্য দুটি শিশু জন্ডিস ও সেপটিসেমিয়া নিয়ে সঙ্কটজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদেরও বাঁচানো যায়নি। তবে মালদহের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “এত শিশুকে রেফার করার ঘটনাতেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কেনও এতজনকে রেফার করা হল তা তদন্ত করে দেখছি। কারও বিরুদ্ধে গাফিলতি প্রমাণ হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে, সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকালের মধ্যে ফের মালদহ সদর হাসপাতালে আরও ৪ টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ৮ দিনে মালদহ সদর হাসপাতালে ৩৬ টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশু মৃত্যু রুখতে রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগে ২৪ ঘন্টা একজন করে শিশু বিশেষজ্ঞ থাকার নির্দেশ দেন। কিন্তু, ৪৮ ঘন্টা পরেও তাঁর নির্দেশ এখনও কাযর্কর হয় নি। এ ব্যাপারে এদিন জেলার ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কিংশুক বিশ্বাস বলেন, “মন্ত্রী কি বলেছেন আমি জানি না। এ ব্যাপারে সুপারকে জিজ্ঞাসা করুন।” সদর হাসপাতালের সুপার হিমাদ্রি আড়ি বলেন, “আমি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।” নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীকে সব জানানো হয়েছে। যা ব্যবস্থা নেওয়ার মুখ্যমন্ত্রী নেবেন।” এদিকে সদর হাসপাতালে শিশু মৃত্যু খতিয়ে দেখতে বুধবার রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা মালদহে আসবেন। প্রয়োজনে তিনি রায়গঞ্জ হাসপাতালও পরিদর্শন করবেন বলে জানান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.