নিজস্ব সংবাদদাতা • চুঁচুড়া |
হুগলি জেলার প্রধান হাসপাতাল ইমামবাড়ায় সমস্যা অনেক। বাম জমানা থেকেই পরিকাঠামো এবং পরিষেবাগত ত্রুটি-বিচ্যুতির ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে এখানে।
মঙ্গলবার জেলা সদর চুঁচুড়ায় প্রাচীন এই হাসপাতালের সার্বিক পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে গেলেন রাজ্যের সদ্যনিযুক্ত স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টার্চায। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই তিনি এই হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছেন বলে জানালেন। সব দেখেশুনে হাসপাতালের ‘রোগ’ সারানোর প্রতিশ্রুতিও দিলেন।
এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ ইমামবাড়া হাসপাতালে ঢোকেন চন্দ্রিমাদেবী। প্রথমেই তিনি সুপারিন্টেন্ডেন্টের ঘরে যান। সেখানে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক উন্মেষ বসু এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। মিনিট পনেরো সেখানে আলোচনার পরে একে একে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন মন্ত্রী। শিশু বিভাগ থেকে শুরু করে মহিলা বিভাগ, পুরুষ বিভাগ সর্বত্রই রোগী এবং তাঁদের বাড়ির লোকজনের অভাব-অভিযোগ শোনেন। সময়মতো চিকিৎসক আসেন কী না, খাবারের মান কী রকম এই সমস্ত বিষয় রোগীদের জিজ্ঞাসা করেন মন্ত্রী।
হাসপাতালে পরিকাঠামো এবং পরিষেবার সমস্যার কথা মেনে নিলেও চন্দ্রিমাদেবী এর দায় চাপিয়েছেন পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের ঘাড়ে। তাঁর বক্তব্য, “সব রকমের ত্রুটি-বিচ্যুতি, ভাল-খারাপ সব দেখে গেলাম। মুখ্যমন্ত্রীকে সবিস্তারে রিপোর্ট জমা দেব। তবে, ৩৪ বছরের বাম জমানায় স্বাস্থ্য পরিষেবা যে রকম বেহাল হয়ে পড়েছিল, তাকে চাঙ্গা করতে কিছুটা সময় লাগবে।” মন্ত্রীর কথায়, “এই হাসপাতালেও অনেক ত্রুটি-বিচুতি আছে। নানা অভাব-অভিযোগ শুনেছি। সেগুলোকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হবে।” |
হাসপাতাল সূত্রের খবর, মন্ত্রীকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, রোগীর তুলনায় এখানে চিকিৎসকের সংখ্যা বেশ কম। জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে রোগী এখানে আসেন। ফলে স্থান সঙ্কুলানের অভাব হয়। মেঝেতে রেখেও অনেককে চিকিৎসা করাতে হয়।
তবে, একশ্রেণির স্বাস্থ্যকর্মী এবং চিকিৎসকদের নিয়ে নানা অভিযোগ শোনা যায় হাসপাতালে কান পাতলেই। অভিযোগ, হাসপাতালে ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও বাইরের প্যাথলেজিক্যাল সেন্টারগুলি থেকে রোগীদের রোগ নির্ণয় পরীক্ষা করিয়ে আনতে বলেন এক শ্রেণির চিকিৎসক। হাসপাতালে আসা রোগীকে নার্সিংহোমে চিকিৎসা করানোর ‘পরামর্শ’ দেওয়ার ঘটনাও আকছার ঘটে। গরিব মানুষের প্রাণান্তকর অবস্থা হয়।
অভিযোগ, এ সবই হয় চিকিৎসকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্যাথলজিক্যাল সেন্টার এবং নার্সিংহোমগুলির ‘গোপন বোঝাপড়া’য়। এ ছাড়াও, দালালদের ‘রাজত্বে’ রোগীর বাড়ির লোকের প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার মতো ‘পুরনো রোগ’ও সমানতালে চলছে বলে অভিযোগ।
এই সমস্ত ‘পুরনো রোগ’ নতুন রাজ্য সরকার কতটা প্রশমিত করতে পারে, তার উপরেই নির্ভর করছে হুগলির সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা। |