নিজস্ব সংবাদদাতা• শিলিগুড়ি |
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বাধার মুখে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে আবর্জনা ফেলতে না-পারায় ভাগাড় সমস্যা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শিলিগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার চম্পাসারি গ্রাম পঞ্চায়েতের সুকান্তপল্লি এলাকায় পুরসভার গাড়ি জঞ্জাল ফেলতে গেলে সেখানকার বাসিন্দারাও বাধা দেন। তাদের একাংশ জঞ্জালের ট্রাক ভাঙচুর এবং গাড়ির চালকে মারধর করেছে অভিযোগে থানায় নালিশ জানিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। ইস্টার্ন বাইপাসে ডাম্পিং গ্রাউন্ড এলাকার সচেতনতা জাগরণ কমিটির বাধায় গত ৪ দিন ধরে পুরসভার সাফাইয়ের গাড়ি জঞ্জাল ফেলতে পারছে না। সমস্যার মেটাতে এ দিন পুরসভায় মেয়র পারিষদদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয় সাফাই এবং পরিবেশ বিভাগের তরফে। ঠিক হয়েছে সমস্যা মেটাতে আজ, বুধবার পুরসভায় সর্বদল বৈঠক হবে। বৈঠক হবে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গেও। ২৭ জানুয়ারি সচেতনতা জাগরণ কমিটির সদস্যদের নিয়েও আলোচনায় বসবেন পুর কর্তৃপক্ষ। সুযোগ বুঝে সরব হয়েছেন পুরসভার বিরোধী বামেরাও। বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলামের অভিযোগ, “পুরসভার সাফাই বিভাগের পরিষেবা কার্যত ভেঙে পড়েছে। ৪ দিন ধরে শহরের জঞ্জাল সাফাই হচ্ছে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেবে। পুরসভার মেয়র, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী সকলেই ডাম্পিং গ্রাউন্ডের সমস্যা মেটাতে আশ্বাস দিয়েছিলেন। দ্রুত ব্যবস্থা না-নেওয়া হলে আমরা বাসিন্দাদের নিয়ে আন্দোলনে নামব।” |
নুরুলবাবু জানান, সেচপুলের গাড়ির পরিষেবাও ৪ দিন ধরে বন্ধ হয়ে পড়েছে। বিরোধীরা জঞ্জাল ফেলা নিয়ে নোংরা রাজনীতি করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ডেপুটি মেয়র রঞ্জনশীল শর্মা। তিনি বলেন, ‘‘ডাম্পিং গ্রাউন্ডে আবর্জনা ফেলতে যাঁরা বাধা দিচ্ছেন তাঁদের সঙ্গে বামেদের লোকজন রয়েছেন। রয়েছে সিপিএমের যুব এবং ছাত্র সংগঠনের লোকজন। সঙ্গে কিছু অসাধু প্রমোটার, তাদের দালালরা। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটাতে পুর কর্তৃপক্ষ নমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছে। তাতে কেউ যদি মনে করেন এ ভাবে পুরসভাকে বিপাকে ফেলছেন তা হলে ভুল করবেন। সমস্যা মেটাতে সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়েছে। বিরোধী এবং বাসিন্দা সকলের সঙ্গেই আলোচনা করা হচ্ছে।” পুরসভার সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ দুলাল দত্ত জানান, ডাম্পিং গ্রাউন্ডের সমস্যা মেটাতে আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ তৈরির প্রকল্প তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে জন্য কিছুটা সময় তো লাগবেই। বাসিন্দাদের যাতে সমস্যা না হয় ডাম্পিং গ্রাউন্ড সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। অথচ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে জঞ্জাল ফেলতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। দুলালবাবু বলেন, “সমস্যার মুখে আশিগড়ের মোড়ের কাছে এক ব্যক্তির জমিতে এবং সুকান্তপল্লিতে অস্থায়ী ভাবে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এ দিন সুকান্তপল্লিতে পুরসভার জঞ্জালের গাড়িতে ভাঙচুর করা হয় এবং গাড়ির চালকে মারধর করা হয়েছে। ১ নম্বর বরোর তরফে পুলিশকে অভিযোগ জানানো হয়েছে। ডাম্পিং গ্রাউন্ডে আবর্জনা ফেলতে গেলেও বাসিন্দারা লাঠি নিয়ে তাড়া করায় গাড়িগুলিকে ফিরে আসতে হয়েছে। সুকান্তপল্লি এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য তথা সিপিএম নেত্রী শোভা মৈত্র জানান, আমাদের এলাকায় আবর্জনা ফেলা নিয়ে বাসিন্দাদের আপত্তি রয়েছে। তাঁরা বাধাও দিচ্ছেন। তবে তৃণমূলের কিছু লোক পঞ্চনই নদীর ধারে আবর্জনা ফেলে জায়গা ভরাট করে তা বিক্রি করতে চাইছে। তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের লোকজনও এলাকায় আবর্জনা ফেলতে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছেন। পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে ১৯৪৮ সালে ইস্টার্ন বাইপাসে ওই জমি কিনে ডাম্পিং গ্রাউন্ড করা হয়। ধীরে ধীরে বসতি এলাকা গড়ে ওঠায় এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে। পুঁটিমারিতে বিকল্প ব্যবস্থা করতে বামেদের জমানায় পুর কর্তৃজ্ঞপক্ষ সচেষ্ট হলেও বাসিন্দাদের বাধা দেয়। বর্তমান পুর বোর্ড ডাম্পিং গ্রাউন্ডে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরির প্রকল্প গড়ে সমস্যা মেটাতে চাইছে। ডাম্পিং গ্রাউন্ড লাগোয়া বৈকুন্ঠপল্লি, চয়নপাড়া, ফাপড়ি ও জ্যোতিনগরের বাসিন্দারা সচেতনতা জাগরণ কমিটি তৈরি করে ভাগাড় সরানোর দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এলাকার বাসিন্দা সুগ্রীব রায়, বিনোতা রায়রা বলেন, “ভাগাড় থেকে এলাকার বাড়িগুলিতে নোংরা-আবর্জনা ছড়াচ্ছে। এলাকা মশা ও মাছিতে ভরে গিয়েছে। দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছে। ছড়াচ্ছে দূষণ। সমস্যা মেটাতে মন্ত্রী, মেয়ররা আশ্বাস দিলেও কিছু না-হওয়ায় নোংরা ফেলার গাড়ি ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।” |