ক্ষুব্ধ সিপি-র চিঠি স্বরাষ্ট্রসচিবকে
রং চটে ফেটে যাচ্ছে উর্দি,
পুলিশের কোপে তন্তুজ
কেই দীর্ঘদিন ধরে দুঃসময় চলেছে তন্তুজের। তার উপরে তাদের কাছ থেকে কাপড় কেনার ব্যাপারে বেঁকে বসেছে কলকাতা পুলিশও।
কেন?
কাপড়ের মান অত্যন্ত খারাপ। সাততাড়াতাড়ি চটে যাচ্ছে উর্দির রং। ফেটে যাচ্ছে কাপড়। লোকসমক্ষে হেয় হতে হচ্ছে কলকাতা পুলিশকে।
অথচ সরকারি নির্দেশে তন্তুজের সেই কাপড়েরই উর্দি তৈরি করতে হচ্ছে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে চিঠি দিয়ে সরকারি সংস্থা তন্তুজের কাছ থেকে কেনা উর্দির কাপড়, মোজা ও টুপির মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা। তাঁদের ক্ষোভ এতটাই যে, তন্তুজের ওই কাপড় কেনার ব্যাপারে ২০০৪ সালের নির্দেশ থেকে কলকাতা পুলিশকে ছাড় দেওয়ার আর্জি জানান তিনি।
রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের অধীন তন্তুজের কাছ থেকে পুলিশের উর্দির যাবতীয় সামগ্রী কেনা বাধ্যতামূলক করে বাম আমলে নির্দেশিকা জারি করেছিল অর্থ দফতর। সেই নির্দেশিকার সুযোগ নিয়ে খোলা বাজার থেকে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ‘নিম্ন’ মানের মালপত্র কিনে তন্তুজ ও তন্তুশ্রী তা কলকাতা পুলিশকে সরবরাহ করছে বলে স্বরাষ্ট্রসচিব জ্ঞানদত্ত গৌতমকে লেখা চিঠিতে অভিযোগ করেছেন সিপি। তাঁর অভিযোগ, অর্থ দফতরের ওই নির্দেশিকার শর্ত মেনেই সর্বনিম্ন দরপত্রের থেকে ১০-১৫ শতাংশ দাম বেশি হেঁকেও অগ্রাধিকারের সুবাদে বরাত পেয়ে যাচ্ছে তন্তুজ ও তন্তুশ্রী।
এ বছর বন্যার সময় ত্রাণের জন্য তন্তুজের ধুতি-কাপড় নিয়ে এক অভিযোগ করেছিলেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ খান। দমকল দফতরেরও পোশাক সরবরাহ করে তন্তুজ। সেই পোশাকের মান নিয়ে দমকলকর্তারাও অভিযোগ তুলেছেন। এ বার পুলিশ কমিশনার এক অভিযোগ তোলার পরে দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্য দফতরও ওই সরকারি সংস্থার সরবরাহ করার জিনিসের মান নিয়ে খুশি নয়। হাসপাতালগুলিতে নার্স, জিডিএ-দের পোশাক, তুলো, চাদর, বালিশ সবই সরবরাহ করে তন্তুজ।
তন্তুজ বাইরে থেকে মালপত্র কিনেই ব্যবসা করছে। তা হলে উর্দি, মোজা, বেল্ট প্রভৃতি সরবরাহের জন্য সকলকে সমান শর্তে দরপত্রে সামিল হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না কেন? প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশ কমিশনার নিজেই। তাঁর যুক্তি, সরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে অন্যান্য মিল ও উৎপাদক সংস্থাকে একই শর্তে দরপত্রে সামিল হতে দিলে ঠিক দামে কলকাতা পুলিশের জন্য সেরা মানের জিনিস মিলবে। তাঁর বক্তব্য, পুলিশকর্মীদের কাছে নিজেদের উর্দি
তো নিছক পোশাক নয়। সেটা তাঁদের কাজের মর্যাদারও প্রতীক।
ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের প্রশ্ন, উর্দির কাপড়ের মান যদি এতই খারাপ হবে, তা হলে কলকাতা পুলিশ এত দিন কোনও অভিযোগ করেনি কেন? তারা বলছে, বরাত দেওয়া জিনিস হাতে নেওয়ার সময় তো পুলিশেরও তার মান পরীক্ষা করে নেওয়ার কথা। তবে পুলিশের কাছ থেকে অভিযোগ আসায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতর মান যাচাইয়ের নিজস্ব পরিকাঠামো আরও জোরদার করবে বলে জানিয়েছেন ওই দফতরের এক অফিসার।
আর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মন্ত্রী, কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া বলছেন, নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে মাত্র সাত মাস। যদি তন্তুজ-তন্তুশ্রীর সরবরাহ করা কোনও জিনিস সম্পর্কে কারও অভিযোগ থাকে, তা হলে সেগুলি নিশ্চিত ভাবেই পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে সরবরাহ করা হয়েছিল। বিদায়ী সরকারের অকর্মণ্যতার ফলে তন্তুশ্রী উঠে গিয়েছে। তন্তুজেরও ভগ্নদশা।
এই অভিযোগ আসায় তন্তুজের ভবিষ্যৎ কি আরও সঙ্কটে পড়ল না? মন্ত্রীর মতে, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং সমবায়ের ভিত্তিতে পরিচালিত সংস্থা থেকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি দফতর ও সংস্থার জিনিস কেনা আবশ্যিক করে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারও নির্দেশিকা জারি করেছে। কারণ, এই সব ছোট শিল্পে পশ্চিমবঙ্গে ৫৪ লক্ষ এবং সারা দেশে ছ’কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে তন্তুজকে চাঙ্গা করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে। সরবরাহ করা সামগ্রীর গুণমান নিখুঁত রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে তন্তুজের আধিকারিকদের। সকলের সহযোগিতা নিয়েই তাঁরা তন্তুজ এবং সামগ্রিক ভাবে রাজ্যের ক্ষুদ্র শিল্পকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন মানসবাবু।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.