রাজ্যের হিসে বেই ১১০০ সরকারি বাসের মধ্যে এখন রাস্তায় বেরোচ্ছে মাত্র ৪৫০টি। এই অবস্থায় পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র মঙ্গলবার বললেন, ‘‘আমার সাফ কথা, বাস বার না-করলে বেতন হবে না।” পরিবহণের হাল ফেরাতে এই ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে মেন্টর গ্রুপ গঠন এবং আরও কিছু পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছেন মন্ত্রী। জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও মতেই ভাড়া বাড়ানো হবে না।
সংস্কারের স্বার্থে পরিবহণ নিগমগুলির ভর্তুকি বন্ধ করে দিয়েছে রাজ্যের নতুন সরকার। তার জেরে ওই নিগমগুলির কর্মীদের বেতন অনিয়মিত হয়ে গিয়েছে। অনিয়মিত হয়ে পড়েছে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশনও। আর এই অবস্থা যে এখনই মিটছে না, এ দিন তা জানিয়ে দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী।
মদনবাবু বলেন, “নিগমগুলিতে মাসের প্রথমে মাইনে হচ্ছে না কেন, এই মুহূর্তে সরকারের কাছে তার উত্তর নেই।” মদনবাবুর কথায়, “নিগমকে ভর্তুকি দেওয়ার জায়গায় নেই সরকার। টাকা কোথা থেকে আসবে!” সেই সঙ্গেই নিগমগুলির লোকসানের কারণ হিসেবে দুর্নীতিকেই চিহ্নিত করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “পরিবহণে ব্যাপক দুর্নীতি রয়েছে। সেই কারণেই প্রচুর পরিমাণে ক্ষতি হচ্ছে। পাঁচটি পরিবহণ নিগমে মিলিয়ে প্রায় ১৮ হাজার কর্মী আছেন। তাঁদের বেশির ভাগই কাজ করেন না।” তার পরেই রাস্তায় বেরোনো বাসের সংখ্যা ভীষণ ভাবে কমে যাওয়ার কথা তোলেন মন্ত্রী। বলেন, “সরকারি বাস তো আছে ১১০০। মাত্র ৪৫০ বাস চলবে কেন? এক-এক জন আছেন, মাত্র দু’দিন বাস চালিয়ে পুরো মাসের মাইনে নেন।” এটা যে আর বরদাস্ত করা হবে না, তা জানিয়ে দেন মন্ত্রী। বলে দেন, মাইনে পেতে হলে বাস নামাতে হবে রাস্তায়।
পরিবহণকর্মীদের বেতন ও পেনশন অনিয়মিত হয়ে পড়ার বিষয়টি ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। সরকারপক্ষের আইনজীবী এ দিন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল এবং বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চকে জানান, ২৫ জানুয়ারি বিভিন্ন নিগমের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকে বসার কথা ছিল। বিভিন্ন নিগমের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল ওই বৈঠকেই। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ব্যস্ত থাকায় বৈঠকটি পিছিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি করা হয়েছে। সরকারের বক্তব্য শুনে ডিভিশন বেঞ্চ ১৪ ফেব্রুয়ারি ওই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে।
ছয় দাওয়াই
• ভাড়া বাড়বে না
• হাল ফেরাতে মেন্টর গ্রুপ
• পরামর্শ চেয়ে নাগরিক সম্মেলন
• অভিযোগ শুনতে মহাকরণে কন্ট্রোল রুম
• দুর্নীতি রোধে ডিপো পরিদর্শন
• দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনে
আইন বদল |
ভর্তুকি না-দিলেও কোনও অবস্থাতেই যে বাসের ভাড়া বাড়ানো হবে না, তা আগেই জানিয়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী। এই অবস্থায় কী ভাবে পরিবহণ সংস্থাগুলিকে লাভজনক করা যায়, তা স্থির করতে একটি মেন্টর গ্রুপ করার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। পরিবহণের উন্নয়নের জন্য সাধারণ মানুষ এবং দীর্ঘদিনের পরিবহণকর্মীদের পরামর্শও নেবে সরকার। মন্ত্রী জানান, এই লক্ষ্যে দুর্গাপুর, কলকাতা, শিলিগুড়ি ও মেদিনীপুরে চারটি নাগরিক সম্মেলনও করবে তাঁর দফতর। তিনি বলেন, “কোথাও অনিয়ম বা দুর্নীতি হতে দেখলে সাধারণ মানুষ যাতে তা জানাতে পারেন, সেই জন্য মহাকরণে পরিবহণের জন্য একটি পৃথক কন্ট্রোল রুম খোলার কথাও ভাবছি আমরা।”
দুর্ঘটনা রোধেও সরকার যে কঠোর হচ্ছে, তা-ও জানিয়ে দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী। তিনি বলেন, “প্রতিটি দুর্ঘটনার তদন্ত হবে। কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে দোষীদের। সরকারি বাসের চালকদের সঙ্গে সঙ্গে সাসপেন্ড করা হবে।” মদনবাবু জানান, বর্তমান আইনের আওতায় কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কী সুযোগ রয়েছে, সরকার তা দেখছে। প্রয়োজনে আইন বদলও হতে পারে বলে জানিয়ে দেন তিনি।
পরিবহণ পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিটি ডিপো এবং নিগমের অফিস তিনি ঘুরে দেখবেন বলে জানান মন্ত্রী। চলতি মাসের শেষ থেকে পরিবহণের সর্বত্র ব্যাপক অভিযান শুরু হবে। ২৮ তারিখ থেকে পরিবহণের বিভিন্ন ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। তবে ইউনিয়নগুলির বাড়াবাড়ি কোনও ভাবেই সহ্য করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন মন্ত্রী। বলেছেন, এ ব্যাপারে তিনি নিজের দলের ইউনিয়নকেও রেওয়াত করবেন না। |