রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষ অবসর নিচ্ছেন আগামী ৩১ মার্চ। তাঁর জায়গায় নতুন মুখ্যসচিব কে হবেন, তা নিয়ে নতুন বছরের গোড়া থেকেই রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে জল্পনা শুরু হয়েছে।
মহাকরণের খবর, পরবর্তী মুখ্যসচিব হিসেবে একাধিক নাম ঘোরাফেরা করছে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের তালিকায় আপাতত এগিয়ে রয়েছেন জয়া দাশগুপ্ত। তিনি এখন উন্নয়ন ও পরিকল্পনা দফতরের সচিব। সরকারের এক মুখপাত্রের মতে, রাজ্যের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর মতো প্রথম মহিলা মুখ্যসচিব হওয়ার সম্ভাবনাই সব চেয়ে বেশি। যদিও এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যসচিব সঙ্গে স্বরাষ্ট্রসচিব পদে পরিবর্তনের সম্ভাবনাও প্রবল।
মুখ্যসচিব পদে সমরবাবু এবং স্বরাষ্ট্রসচিব পদে জ্ঞানদত্ত গৌতম নিযুক্ত হয়েছিলেন বাম আমলে। মে মাসে ক্ষমতায় আসার পরে গোড়ায় দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমরবাবুকে নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে কিছুটা অস্বস্তিতে ছিলেন বলে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর। কিন্তু রাজ্য প্রশাসনের সব স্তরের অফিসারদের কাছে এক কথায় ‘দক্ষ’ ও ‘শ্রদ্ধেয়’ প্রশাসক সমরবাবুর সঙ্গে মমতার সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে বেশি সময় লাগেনি। গত কয়েক মাসে একাধিক অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে তাঁর প্রশংসা করতেও দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। |
মমতা চেয়েছিলেন, অবসরের পরেও সমরবাবু মুখ্যসচিব পদে কয়েক মাস থেকে যান। কিন্তু সমরবাবু আর সরকারি পদে থাকতে রাজি নন বলে মহাকরণের খবর। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল জানিয়েছে, অবসরের পর স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালে (স্যাট) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে কাজ করতে আগ্রহী তিনি। এ জন্য আবেদন করেছেন সমরবাবু। মনোনীতও হয়েছেন। রাজ্য সরকার সম্মতি দিলে এবং আরও কয়েকটি প্রশাসনিক স্তরে অনুমোদন পেলে অবসর-পরবর্তী জীবনে সমরবাবুর স্যাটেই যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এই অবস্থায় রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যসচিব হিসেবে জয়া দাশগুপ্তের নাম একেবারে প্রথমে উঠে এসেছে। ১৯৭৮ সালের এই আইএএস অফিসারের অবসর নেওয়ার কথা আগামী বছর। মহাকরণের খবর, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। জয়াদেবী ছাড়া আর যাঁদের নাম আলোচনায় মধ্যে রয়েছে, তাঁদের সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাব খুব ইতিবাচক নয়।
মুখ্যসচিব বদলের সঙ্গে সঙ্গে মমতা স্বরাষ্ট্রসচিব পদেও বদল করতে পারেন বলে খবর। এমনিতে জ্ঞানদত্ত গৌতমের ৩০ সেপ্টেম্বর অবসর নেওয়ার কথা। কিন্তু এই সরকারের প্রায় প্রথম দিন থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল নয়। যত দিন যাচ্ছে, সেই সম্পর্কের আরও অবনতি হচ্ছে। এর জেরে মুখ্যমন্ত্রী অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও সিদ্ধান্ত স্বরাষ্ট্রসচিবকে ছাড়াই নিচ্ছেন। স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে তাঁর দফতরের নিচুতলার অফিসারদের দূরত্বও সুবিদিত।
ফলে সেপ্টেম্বরে অবসরের আগেই স্বরাষ্ট্রসচিব পদ থেকে জ্ঞানদত্ত গৌতমের চলে যাওয়াটা স্বাভাবিক বলেই মনে করা হচ্ছে। জয়াদেবী যদি মুখ্যসচিব হন, তা হলে ‘সিনিয়র’ হয়েও গৌতম কী ভাবে তাঁর অধীনে কাজ করবেন, সেই প্রশ্নও উঠছে। যদিও আইনের দিক থেকে তাতে কোনও বাধা নেই। এবং মুখ্যমন্ত্রীও মনে করেন, ‘যোগ্যতার’ বিচারে ‘জুনিয়র’ কোনও অফিসার উঁচু পদে উঠে আসতেই পারেন।
সরকারের এক মুখপাত্র জানান, আগামী ৩১ জানুয়ারি প্রশাসনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (এটিআই) অধিকর্তার পদ থেকে অবসর নিচ্ছেন মানবেন্দ্রনাথ রায়। গৌতম ওই পদে যোগ দিতে পারেন। ঘনিষ্ঠ মহলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্রসচিব চলে যেতে চাইলে তাঁর আপত্তি নেই। তবে মমতা নিজে থেকে তাঁকে সরিয়ে না-ও দিতে পারেন বলে প্রশাসনের একটি মহলের মত।
পদে জ্ঞানদত্ত গৌতম থাকবেন না ধরে নিয়েই অবশ্য নতুন স্বরাষ্ট্রসচিব নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। মহাকরণের আলোচনায় দু’তিন জনের নাম শোনা যাচ্ছে। এঁদের মধ্যে রয়েছেন স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সচিব অনুপ চন্দ এবং সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের সচিব নুরুল হক। উঠে আসছে নগরোন্নয়ন সচিব দেবাশিস সেনের নামও। যদিও তিনি অনেক ‘জুনিয়র’। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এ ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেননি বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি। |