বিএসএফের চৌকিতে হামলা চালাল বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা। জখম হয়েছেন এক জওয়ান। সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে স্বরূপনগরের হাকিমপুর সীমান্তে।
পুলিশ ও বিএসএফ সূত্রে জানানো হয়েছে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বিথারি-হাকিমপুর পঞ্চায়েতের এই এলাকায় গরু পাচার নতুন ঘটনা নয়। ইদানীং তা আরও বেড়েছে। রবিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ১৫২ নম্বর ব্যাটালিয়নের জওয়ানদের কাছে খবর আসে, শ’দুয়েক পাচারকারী প্রচুর গরু নিয়ে সামীন্ত পেরোচ্ছে। এই এলাকায় দু’দেশের সীমান্তে আছে সোনাই নদী। সে নদীতে বছরের বেশির ভাগ সময় জল থাকে না। হেঁটেই পেরোনো যায়। না হলে সরু নদীতে দু’টি নৌকো পর পর রেখে দিলেও নদী টপকানো কোনও শক্ত কাজ নয়। হাকিমপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে আছে বিএসএফের একটি চেকপোস্ট। সেখানে কর্তব্যরত চার জন জওয়ান তাড়া করে তিনটি গরু ধরে ফেলেন। এরপরেই দুষ্কৃতীদের দল চড়াও হয় ওই চেকপোস্টে। ভাঙচুর চালিয়ে কার্যত গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় সেটি। কাগজপত্র তছনছ করা হয়। জওয়ানদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। পাশে দাঁড়ানো তিনটি বাসেও ভাঙচুর চালানো হয়। কাছেই কইজুড়িতে জওয়ানদের আর একটি চৌকি আছে। সেখানকার জওয়ানেরাও পাচার হতে দেখে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁদের উপরেও হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। |
ইটের ঘায়ে জখম হন এক জওয়ান। খবর পেয়ে আশপাশের এলাকা থেকে আরও জওয়ানেরা আসেন। বিএসএফের তরফে পুলিশের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এ দিন সরেজমিনে এসেছিলেন পুলিশ ও বিএসএফ কর্তারা। বিএসএফের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড্যান্ট মনোজ কুমার বলেন, “পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হবে।”
বিএসএফের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ইদানীং গরু পাচার বাড়ার কারণ দফতরেরই কিছু নিয়মাবলী। সাম্প্রতিক সময়ে দু’দেশের সুসম্পর্কের নিরিখে বিএসএফের উপরে গুলি চালানোর ব্যাপারে কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া কোনও পরিস্থিতিতেই গুলি চালানো যাবে না বলা হয়েছে। ফলে, দুষ্কৃতীরাও এই ‘সুযোগ’কে কাজে লাগাচ্ছে। বাড়ছে পাচার ও অনুপ্রবেশ। লাঠি এবং বাঁশের চটার ঢাল নিয়ে চেকপোস্টে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে বিএসএফকে। অনেকের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকলেও তা ব্যবহার করা নিয়ে কার্যত ‘তটস্থ’ জওয়ানেরা।
এ দিন বিকেলে বিএসএফ, পুলিশ, স্থানীয় পঞ্চায়েত ও এলাকার লোকজন বৈঠকে বসেন। পাচার ঠেকাতে সব পক্ষকে তৎপর হতে হবে বলে সেখানে সিদ্ধান্ত হয়। স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আনিসুদ্দিন গাজি বলেন, “গ্রামের লোক গরু পাচারকারীদের হাতে চরম অত্যাচারিত। বিঘের পর বিঘে জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। সীমান্তের ও পাড়ের দুষ্কৃতীরা তো আছেই, স্থানীয় কিছু লোকও তাদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে। সকলে যদি এই সমস্যার সমাধানে তৎপর না হয়, তা হলে সমস্যা কমার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।” |