শিয়ালদহ দক্ষিণ
রেল অবরোধে অসুস্থ শিশু নিয়ে ভুগলেন মা-বাবা
বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অসুস্থ নবজাতককে নিজের অটোরিকশায় চাপিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে মল্লিকপুর স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছিলেন আকনা গ্রামের ফিরোজ গাজি। কিন্তু সেখানেই আটকে গেলেন ফিরোজ, তাঁর স্ত্রী সালোমা এবং মা আমিরুন বিবি। কারণ, দেরিতে ট্রেন চলার প্রতিবাদে সেখানে রেললাইন অবরোধ চলছে যে!
সকাল ১০টা নাগাদ মল্লিকপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, তখনও আটকে আছেন ফিরোজেরা। সন্তানের চিকিৎসা ক্রমেই বিলম্বিত হচ্ছে। মল্লিকপুর থেকে ট্রেন ধরে শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। ফিরোজ জানান, স্ত্রী এবং মাকে মল্লিকপুর থেকে ট্রেনে তুলে দিয়ে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু অবরোধের জেরে দীর্ঘ ক্ষণ অটোতেই শিশুটিকে নিয়ে বসে থাকেন তাঁর স্ত্রী। এক সময় অধৈর্য হয়ে আমিরুন বিবি অবরোধকারীদের জিজ্ঞাসা করেন, তাঁরা কখন অবরোধ তুলবেন?
প্রশ্ন শুনে রেগে যান অবরোধকারীরা। বেগতিক দেখে শেষ পর্যন্ত স্টেশনের বাইরে চলে যান আমিরুন বিবি। ফিরোজ ঘুরপথে অটো চালিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা হন। ফিরোজের অভিযোগ, সেখানে চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই বলে জানিয়ে দেন চিকিৎসকেরা। শিশুটিকে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ‘রেফার’ করা হয়। অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে ফের দৌড় শুরু হয় ফিরোজদের।
শিয়ালদহ-দক্ষিণ শাখার মল্লিকপুর স্টেশনে ট্রেন অবরোধ।
এই অবরোধের জেরে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। ছবি: পিন্টু মণ্ডল
রেল অবরোধের ফলে ফিরোজের মতো অনেককেই দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে মঙ্গলবার। রেলমন্ত্রী থাকার সময় থেকেই অবরোধের বিরুদ্ধে বারবার সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন তিনি মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু অবরোধের বিরাম নেই।
কয়েক দিন ধরেই দেরিতে ট্রেন চলছিল। তার প্রতিবাদেই অবরোধ। এবং তার জেরে ট্রেন চলাচলে আরও দেরি হল। মল্লিকপুর স্টেশনে এক দল নিত্যযাত্রী সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা রেললাইন অবরোধ করে রাখেন। পরে রেল পুলিশ ও বারুইপুর থানার পুলিশ অবরোধ হটিয়ে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করে। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বেলা সাড়ে ১২টা বেজে যায়। অবরোধের জেরে ওই শাখায় দীর্ঘ ক্ষণ দেরিতে ট্রেন চলাচল করে।
রেল সূত্রের খবর, সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ শিয়ালদহমুখী ডায়মন্ড হারবার লোকাল মল্লিকপুর স্টেশনে ঢোকার পরেই অবরোধ শুরু হয়। এক দল নিত্যযাত্রী ওভারহেড তারে কলপাতা ফেলে দেন। পরে পরিত্যক্ত একটি কাঠের ‘স্লিপার’ ফেলে দেওয়া হয় লাইনে। মল্লিকপুরে অবরোধ চলায় কয়েক ঘণ্টার জন্য শিয়ালদহ থেকে সোনারপুর পর্যন্ত ট্রেন চালানো হয়। যাত্রীদের অভিযোগ, কয়েক সপ্তাহ ধরে ওই শাখার অধিকাংশ ট্রেন ভীষণ দেরিতে চলছে। সময়মতো ট্রেন না-চলায় সকাল থেকেই লক্ষ্মীকান্তপুর-ডায়মন্ড হারবার লোকালে প্রচণ্ড ভিড় হচ্ছে। ট্রেনে ওঠা যাচ্ছে না। ভিড় এড়াতে অফিসের সময়ে কয়েক জোড়া বারুইপুর-শিয়ালদহ লোকাল চালানোর জন্য রেল-কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদনও জানানো হয়েছে। কিন্তু রেল-কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের আবেদনে সাড়া দেননি বলে অভিযোগ।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী বলেন, “ওই শাখায় রেললাইনে মেরামতি চলছে। তাই কয়েক দিন সময়ে ট্রেন চালানো যাচ্ছে না। বিভিন্ন স্টেশনে মাইকে প্রচার করা হয়েছে। নোটিসও দেওয়া হয়েছে সব স্টেশনে। তার পরেও যদি অবরোধ হয়, কী করা যাবে!” সমীরবাবু জানান, বারুইপুর-শিয়ালদহ লোকাল চালানোর অনুমতি দেবে রেল বোর্ড। যাত্রীদের অনুরোধ বোর্ডকে জানানো হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.