কুপিলার ‘মন পেতে’ পুলিশের ভলিবল
মাস তিনেক আগে যাঁদের হাতেই নিগৃহীত হন পুলিশকর্মীরা, সেই গ্রামবাসীরাই মঙ্গলবার হাততালি দিয়ে অভ্যর্থনা জানালেন তাঁদের। ডোমকল মহকুমা পুলিশ ও গ্রামবাসীরা মিলিত ভাবে মঙ্গলবার ভলিবল ম্যাচ খেলেন। শেষ পর্যন্ত গ্রামবাসীদের কাছে পুলিশের দল ম্যাচ হেরে যায়। তবু গ্রামবাসীদের কাছে বিজয়ীর সম্মানই পান তাঁরা। বিপুল হাততালির মধ্য দিয়ে ম্যাচ শেষে ভলিবল কোর্ট ছাড়েন পুলিশের দল। ওই ম্যাচ দেখতে গ্রামবাসীরা সকাল থেকেই মাঠ ভরিয়ে তোলেন।
কুপিলা উন্নয়ন সংঘ তিন দিনের যে ‘সম্মিলনী উৎসব’-এর আয়োজন করেছে, এদিন ছিল তার সূচনা। উদ্বোধন করেন সাংসদ মান্নান হোসেন। কুপিলা সিনিয়র মাদ্রাসা ময়দানে ২৫-২৭ জানুয়ারি সকাল থেকে প্রায় সারা দিন ধরে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে আয়োজক সংস্থা। এ দিন সকালে চাকা নিয়ে কচিকাঁচাদের দৌড় প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। ছিল গ্রামের মহিলাদের নিয়ে শীতলপাটি বোনা প্রতিযোগিতা এবং গ্রামের কৃষিজীবী মানুষকে নিয়ে ক্যুইজ। তবে পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীদের ভলিবল ম্যাচকে ঘিরে মানুষের আগ্রহ ছিল বেশি।
ভলিবল ম্যাচের এক দিকে ডোমকল মহকুমা পুলিশ অফিসার ও তাঁর দল। বিপক্ষ দলে এলাকার সাংসদ মান্নান হোসেন ও গ্রামবাসী। শেষ পর্যন্ত মান্নান হোসেন ও তাঁর দলের কাছে ১৫-৮ পয়েন্টে পুলিশের দল হেরে যায়। কিন্তু গত ২রা নভেম্বর ‘নিগ্রহের’ ঘটনায় গ্রামবাসী-পুলিশের সম্পর্কের যে অবনতি হয়েছিল, এই ম্যাচের মধ্য দিয়েই তার উন্নতি ঘটেছে। সেকথা স্বীকারও করেন ডোমকলের এসডিপিও দেবর্ষি দত্ত। তাঁর কথায়, “ওই ঘটনা এখন অতীত। কুপিলা গ্রামে কিছু সমস্যা ছিল। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে ওই সমস্যা দূর করার চেষ্টা করি এবং তাতে কিছুটা সফল হয়েছি তার প্রমাণ সম্মিলনী উৎসব। এখন গোটা গ্রামের পরিবেশ পাল্টে গিয়েছে।”
কুপিলা গ্রামে ১০ হাজার মানুষের বাস। প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গ্রামে সাক্ষরতার হার ৪০ শতাংশ। এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। এক সময়ে কুপিলায় ছোটখাটো যে কোনও ঘটনায় বোমাবাজি, খুন-সন্ত্রাস লেগেই থাকত। রাজনৈতিক দলাদলির কারণে বিশেষ করে নির্বাচনের আগে কুপিলা গ্রাম অশান্ত হয়ে উঠত। সাংসদ মান্নান হোসেন বলেন, “কুপিলা সম্বন্ধে সাধারণ মানুষের ধারণা ভাল নয়। এখন অবশ্য পরিবেশের বদল ঘটেছে। সর্ব স্তরের মানুষ একজোট হয়ে যে ভাবে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন, তা দেখার মতো।’’
সাংসদের কথায়, “সেই সঙ্গে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হিসেবে বিড়ি বাঁধা-গুলতি দিয়ে বেলুন ফাটানো-শীতলপাটি বোনা থেকে ক্যুইজে উঠে এসেছে কৃষি বিষয়ক প্রশ্ন, যা গ্রামবাসীদের জীবনের সঙ্গে জড়িত। ফলে সাধারণ গ্রামবাসীরাও ওই প্রতিযোগিতার সঙ্গে একাত্মতা বোধ করছেন। তাঁরাও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পিছপা হচ্ছেন না।”
কুপিলা উন্নয়ন সংঘের সম্পাদক মাহফুজুর রহমান বলেন, “আমাদের গ্রাম সম্বন্ধে বেশ কিছু রটনা রয়েছে, যার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই। তবে এটা ঠিক, সংকীর্ণ রাজনৈতিক আবহাওয়ার কারণে গ্রামের মানুষের মধ্যেও দূরত্ব বাড়ছিল। গ্রামের সর্বস্তরের মানুষকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার উদ্দেশ্যেই এই সম্মিলনী উৎসবের আয়োজন।”
ওই উৎসবের অঙ্গ হিসেবে বাকি দু-দিনও রয়েছে বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তার মধ্যে টেরাকোটা, ফেব্রিক, ক্রিস্টাল পাথরের উপরে কর্মশালা রয়েছে। উৎসব উপলক্ষে পাট ও বাঁশের তৈরি হাতের কাজের এক প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.