জমি সমস্যায় থমকে সবংয়ের মাদুর-প্রকল্প
মি নিয়ে সমস্যা। ফলে, শিলান্যাসেই থমকে রয়েছে সবংয়ের মাদুর বৈচিত্র্যকরণ প্রকল্পের কাজ। অথচ, এই প্রকল্প চালু হলে এলাকার বহু মাদুর-শিল্পী উপকৃত হতেন। শিল্প-সামগ্রী বিপণনের নতুন সুযোগ তৈরি হত। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, জমির সংস্থান না-করেই তড়িঘড়ি এই প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয়েছিল। যার ফলেই সমস্যা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প না-হলে কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দকৃত টাকা ফেরত যাওয়ারও আশঙ্কা। তবু কাজ এগোচ্ছে না বলেই অভিযোগ। জেলা পরিষদের অবশ্য বক্তব্য, কাজ শুরুর চেষ্টা চলছে। জমি নিয়ে যে সমস্যা রয়েছে তা কাটানোরও চেষ্টা চলছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “বিষয়টি নজরে রয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি-সহ সংশ্লিষ্ট সব আধিকারিকের সঙ্গে কথা হচ্ছে। যত শীঘ্র সম্ভব কাজ শুরু করার চেষ্টা চলছে।” কেন জমির সংস্থান না-করেই তড়িঘড়ি প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয়েছিল, সেই প্রশ্নের সদুত্তর অবশ্য সভাধিপতির কাছেও মেলেনি।
পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের বহু মানুষ মাদুর তৈরির সঙ্গে যুক্ত। মাদুর-কাঠির জন্য এই এলাকা বিখ্যাত। সবংয়ের বহু মানুষ মাদুর বুনেই সংসার চালান। কিন্তু অনেক সময়েই তাঁরা ন্যায্য দাম পান না। এর পিছনে অবশ্য কয়েকটি কারণও রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। দিন বদলেছে। কিন্তু এখানকার বহু শিল্পী আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সড়গড় হতে পারেননি। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণেরও অভাব রয়েছে। সরকারি উদ্যোগে শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে তাঁরা আধুনিক প্রযুক্তি রপ্ত করতে পারেন। আরও ভাল মানের মাদুর বুনতে পারেন। বাজারে যার ভাল দামও মিলবে। এ-সব বিবেচনা করেই সবংয়ে মাদুর বৈচিত্র্যকরণ-প্রকল্প তৈরির উদ্যোগ শুরু হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে।
এ জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেন পাঁশকুড়ার (অধুনা ঘাটালের) সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত। ২০০৭ সালের জুনে কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রামোন্নয়ন দফতর প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য ৬ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করে। তিন বছরের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে, এই শর্তে অর্থ মঞ্জুর করে কেন্দ্র। তড়িঘড়ি প্রকল্পের শিলান্যাস হয়। পুরো প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন ছিল ৫ একর জমির। শিলান্যাসের জন্য রুইনান মৌজায় মাত্র ২৪ ডেসিমেল জমি কেনে জেলা প্রশাসন। বাকি জমির সংস্থান না-হলেও ২০০৯-এর ১ ফেব্রুয়ারি মাদুর-প্রকল্পের শিলান্যাস হয়। শিলান্যাস করেন গুরুদাসবাবুই। স্থানীয় মানুষের একাংশের অভিযোগ, লোকসভা ভোট এসে পড়েছিল। তাই প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান না-করেই তড়িঘড়ি প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয়েছিল। জেলা প্রশাসন অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সেই সময়েই মাদুর-প্রকল্পের জমি নিয়ে ‘বিতর্কে’র সূচনা। প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ৪ একর ৬০ ডেসিমেল জমি স্বেচ্ছায় দান করতে চেয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়ক, অধুনা মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। জমি দেওয়ার বিষয়টি ২০০৮-এ তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে লিখিত ভাবেও জানান তিনি। কিন্তু মানসবাবুর প্রস্তাব গ্রহণ করেনি বামফ্রন্ট সরকার। এ দিকে, শিলান্যাসের পরে ২৪ ডেসিমেল জমির উন্নীতকরণ ও সমতলীকরণের কাজ শুরু হয়। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ১৫ লক্ষ টাকা খরচও হয়। কিন্তু, ওই পর্যন্তই। কিন্তু বাকি জমি নিয়ে দেখা দেয় সমস্যা। প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে এমন জমির কয়েক জন মালিক জমি দিতে চাইছেন না। এর ফলেই সমস্যা। সবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চন্দন গুছাইত অবশ্য বলেন, “প্রশাসনিক স্তরে বৈঠক হচ্ছে। সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে।”
প্রকল্প ঘিরে আশায় রয়েছেন এলাকার মানুষ। স্থানীয় মাদুর-শিল্পী নারায়ণ পড়্যা-র কথায়, “এখানে প্রশিক্ষণ ও বিপণন ব্যবস্থা গড়ে উঠলে সকলেই উপকৃত হবেন। বিশেষ করে মহিলাদের স্ব-সহায়ক দলগুলি।” জয়ন্ত সামন্ত বলেন, “প্রস্তাবিত প্রকল্প আগেই হওয়া উচিত ছিল। মাদুর ফেরি করেই আমাদের সংসার চলে। বাজার গড়ে উঠলে বিক্রি বাড়বে।” সবংয়ের কংগ্রেস নেতা বিকাশ ভুঁইয়া-রও বক্তব্য, “স্থানীয় মানুষের কথা ভেবে দ্রুত প্রকল্প রূপায়ণ জরুরি।” তবে, কাজ যে ভাবে এগোচ্ছে তাতে এই মাদুর-প্রকল্প ঘিরে সংশয় বাড়ছেই। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, “শুনেছি শিলান্যাস অনুষ্ঠানে প্রায় ২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল। কী দরকার ছিল জমির সংস্থান না-করেই ঘটা করে ঘতড়িঘড়ি শিলান্যাস করার!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.