গ্র্যান্ড স্লামে আবার রাফা বনাম রজার মহাযুদ্ধ নির্দিষ্ট হয়ে গেল। রড লেভার এরিনায় ভিআইপি এনক্লোজারে বসা স্বয়ং রড লেভারের সামনে রাফায়েল নাদাল এক সেট পিছিয়ে পড়েও নিজের হাঁটুর যন্ত্রণা আর সপ্তম বাছাই প্রতিপক্ষ টমাস বার্ডিচের চ্যালেঞ্জকে মেলবোর্নের রাত বারোটায় জয় করলেন। ৬-৭ (৫-৭), ৭-৬ (৮-৬), ৬-৪, ৬-৩। নিটফল, অস্ট্রেলীয় ওপেন সেমিফাইনালেই মুখোমুখি নাদাল-ফেডেরার। গ্র্যান্ড স্লামে এই নিয়ে ১০ বার। সব মিলিয়ে ২৭ বার। নাদাল মহাযুদ্ধে ১৭-৯ এগিয়ে থাকলেও এই মুহূর্তে মেলবোর্ন পার্কে পাঁচটি ম্যাচে একটিও সেট না হারানো ফেডেরার ফর্মের বিচারে শুক্রবারের লড়াইয়ে অবশ্যই এগিয়ে কোর্টে নামবেন।
টেনিসজীবনের হাজারতম ম্যাচ তিরিশ বছর বয়স পেরনো ফেডেরার জিতলেন নিজের মধ্যগগনের ফর্মের ঝলসানিতে! ৮১৪তম জয় পেতে ঘণ্টাদুয়েকেরও কম সময় নিলেন। বছর তিনেকের পুরনো গ্র্যান্ড স্লাম চ্যাম্পিয়ন দেল পোত্রোকে স্ট্রেট সেটে ছিটকে দিলেন ৬-৪, ৬-৩, ৬-২। ফেডেরারকে ফাইনালে হারিয়েই ২০০৯-এ যুক্তরাষ্ট্র ওপেন জেতেন সাড়ে ছ’ফুটের আর্জেন্তিনীয়। তার পরের দেড় বছর কব্জির অস্ত্রোপচারের জেরে যিনি র্যাঙ্কিংয়ে ২৫৭ নম্বরে নেমে গেলেও গত কয়েক মাসের ধারাবাহিক ভাল পারফরম্যান্সে আবার প্রথম এগারোর মধ্যে উঠে এসেছেন। সে কারণে অসাধারণ টেনিস খেলেও ফেডেরার বলেছেন, “সত্যিই একটা গ্রেট মাইলস্টোন ছুঁলাম। আমিও মানছি। সবাই জানে ও (দেল পোত্রো) কী জোরে হিট করে! বিকেলের পড়ন্ত রোদ আড়াআড়ি স্টেডিয়ামে ঢুকে কোর্টের অর্ধেকটা আলো, অর্ধেকটা অন্ধকার করে রেখেছিল। ওই অবস্থায় মনে হয় পাওয়ার টেনিসের বিরুদ্ধে আমি নিখুঁতই খেলতে পেরেছি। আমি খুশি।” টানা ৩১টা গ্র্যান্ড স্লাম কোয়ার্টার ফাইনাল খেললেন ফেডেরার। হেরেছেন মাত্র তিনটে। এ দিন উঠলেন কেরিয়ারের ৩০তম গ্র্যান্ড স্লাম সেমিফাইনালে। জিমি কোনর্সের সর্বকালের রেকর্ড (৩১)-এর থেকে মাত্র একটি কম। |
ম্যাচ জিতে ভক্তদের খুশি করছেন ফেডেরার। মঙ্গলবার। ছবি: রয়টার্স |
ফেডেরারের আগে রড লেভার এরিনায় দুই প্রজন্মের লড়াইয়ে তারুণ্যকে ম্লান করে দেন আর এক বর্ষীয়ান। মেয়েদের সিঙ্গলসে বর্তমান বনাম প্রাক্তন এক নম্বরের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে ওজনিয়াকিকে ৬-৩, ৭-৬ (৭-৪) হারালেন গত বারের চ্যাম্পিয়ন কিম ক্লিস্টার্স। সঙ্গে দু’টো প্রশ্নের সমাধানও করে দিলেন তিনি। আগের ম্যাচে লি না-র বিরুদ্ধে মচকে যাওয়া গোড়ালি ফিট ক্লিস্টার্সের। এবং এ দিনই বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর আসন হারানো ওজনিয়াকির যোগ্যতা নেই ওখানে থাকার। শেষ ১৬ মাসে মাত্র একটি সপ্তাহ বাদে এক নম্বরে থাকলেও ওজনিয়াকির এখনও গ্র্যান্ড স্লাম অধরাই। ২০০৯ যুক্তরাষ্ট্র ওপেন ফাইনালে উঠলেও ক্লিস্টার্সের কাছেই হেরেছিলেন। এ দিন তার থেকেও খারাপ খেললেন। নিজের প্রথম ১০টা সার্ভিসের মধ্যে যিনি কিনা মাত্র চারটি অটুট রাখতে পারেন, তিনি কী করে বিশ্বের এক নম্বর হন, টেনিসমহলেই এমন প্রশ্ন উঠছে। সামনের সোমবার নতুন বিশ্ব র্যাঙ্কিং প্রকাশ পেলে কিভিতোভা-শারাপোভা-আজারেঙ্কা, তিন জনের যে কেউ এক নম্বর হবেন।
ব্লকব্লাস্টার টেনিস-যুদ্ধের মধ্যে ভারতীয়দের জন্যও সুখবর রয়েছে। মেয়েদের ডাবলসে সানিয়া মির্জা খেলোয়াড়জীবনের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্লাম সেমিফাইনালে উঠেছেন। দু’বারই রুশ সঙ্গী এলেনা ভেসনিনাকে নিয়ে। গত বছর উইম্বলডনের পর আজ অস্ট্রেলীয় ওপেনে শেষ চারে যাওয়ার পথে সানিয়ারা রীতিমতো চমকে দিলেন। বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা মার্কিন জুড়ি লিজা রেমন্ড-লিজেল হুবারকে ম্যারাথন কোয়ার্টার ফাইনালে ৬-৩, ৫-৭, ৭-৬ (৮-৬) ছিটকে দিয়ে। উইম্বলডন সেমিফাইনালে সানিয়ারা হেরেছিলেন বিশ্বের এক নম্বর চেক জুড়ি পেশকে- স্রেবোটনিকের কাছে। চোটের জন্য যাঁরা মেলবোর্ন পার্কে দ্বিতীয় রাউন্ডেই সরে দাঁড়িয়েছেন। বুধবারই সানিয়াদের ফাইনালে ওঠার লড়াই দুই রুশ সিঙ্গলস বিশেষজ্ঞের জুড়ি বাঁধা ডাবলস টিমের বিরুদ্ধে কুজনেৎসোভা-জোনারেভা। বস্তুত চার সেমিফাইনালিস্টের মধ্যে সানিয়ারাই এখন সর্বোচ্চ (ষষ্ঠ) বাছাই। |