জেলে অবাধে মোবাইল ফোন, নিরাপত্তা শিকেয়
মাওবাদী সন্দেহে ধৃত বহু বন্দি রয়েছেন মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো স্পর্শকাতর দিনে জেলের নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ চিন্তাও রয়েছে প্রশাসনের। কিন্তু সেই নিরাপত্তার ‘বজ্র আঁটুনি’তেও যেন ‘ফস্কা গেরো’!
জেল সূত্রের খবর, বিশেষত সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিরা (মাওবাদী সন্দেহে ধৃতেরা নন) যথেচ্ছ মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে জেলের ভিতরেই। মারামারির ঘটনাও ঘটছে। জেলের ভিতরে বন্দিরাই সব ব্যাপারে শেষ কথা বলছে। তল্লাশি করতে গেলে জেলকর্মীদের উপরে হামলাও হচ্ছে। জেলকর্মীদের বিরুদ্ধে খারাপ ব্যবহার করার অভিযোগ তুলে জল ঘোলা করারও চেষ্টা হচ্ছে। সম্প্রতি নিরাপত্তা আধিকারিক স্বপন দাসকে মারধরের অভিযোগও উঠেছিল। যদিও জেল কর্তৃপক্ষ পুরো বিষয়টিই ধামাচাপা দিয়ে দেন। কিন্তু সার্বিক অবস্থা নিয়ে নিরাপত্তারক্ষীরাই আতঙ্কিত। তা হলে কী ভাবে গড়ে তোলা হবে ‘বিশেষ নিরাপত্তা বলয়’? এই প্রশ্ন উঠে আসছে নিরাপত্তারক্ষীদের মধ্যে থেকেই।
নিজস্ব চিত্র
তবে, এই ‘সংশয়’ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ জেলের সুপারিনটেনডেন্ট প্রহ্লাদ সিংহ কুমার। জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলের ভিতরে বন্দিরা একটি ‘চক্র’ তৈরি করেছে। যে চক্রের পাণ্ডা খুনে সাজাপ্রাপ্ত জনৈক রাজা দত্ত। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বন্দি রাজার কাছে ৩টি মোবাইল ফোন রয়েছে। সেই ফোনগুলি ব্যবহার করেই বাইরের অন্ধকার জগতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। রাজার অঙ্গুলিহেলনেই সাজাপ্রাপ্ত বন্দি উত্তম সর্দার, মহম্মদ মুর্তজা, নন্দ নায়েক, দিল মহম্মদ, মহম্মদ মুস্তাফা, মহম্মদ লালা, শেখ রাজু, নবী বক্সরা চলে। এদের কাছেও রয়েছে মোবাইল।
কিন্তু মোবাইল ফোন জেলের মধ্যে আসছে কী ভাবে? জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলের চার নম্বর পাঁচিল দিয়ে মোবাইল ছুঁড়ে দেওয়া হচ্ছে ভিতরে। বন্দিরা সেখান থেকেই মোবাইল নিয়ে চলে যাচ্ছে। জেলের দেওয়ালের দিকে সাধারণত বন্দিদেরই পাহারায় রাখা হয়। সেই বন্দি-পাহারাদারেরা ভয়ে কিছুই বলে না। কারণ, কিছু দিন আগেই কৈলাস দাস নামে এক বন্দি প্রচণ্ড মারধরের ফলে মারা যান। মারধরের অভিযোগ উঠেছিল নবী বক্সের বিরুদ্ধেই। ওই ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে। তাই ওই চক্রের বন্দিদের বিরুদ্ধে কেউ কিছুই বলে না। এমনকী শনিবার দুপুরে একটি মোবাইল এ ভাবেই ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছিল। তা এক বন্দি-পাহারাদারের হাতে পড়ে। তার হাত থেকেই ছিনিয়ে নিয়ে যায় এক সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি। পরে মোবাইলটি উদ্ধার হলেও কার কাছ থেকে মোবাইল পাওয়া গিয়েছে সে বিষয়ে কেউ কিছুই বলতে রাজি হয়নি। এমনকী এই পদ্ধতিতেই জেলের ভিতরে ঢুকছে গাঁজা, মদ-সহ নানা ধরনের মাদকদ্রব্যও। এই চক্রের সঙ্গে জেলের কিছু কর্মীর যোগসাজশ নিয়েও অবশ্য অভিযোগ রয়েছে।
কিন্তু কেন চিরুনি তল্লাশি চালিয়ে সব মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হচ্ছে না। জেলের এক পদস্থ কর্তার কথায়, “বন্দিরা অনেক সময়ে মোবাইলের বিভিন্ন অংশ খুলে নানা জায়গায় রাখে। তল্লাশি চালিয়েও যা পাওয়া কঠিন।” আর এক আধিকারিকের যুক্তি, “কর্মী কম। হিতে বিপরীত হতে পারে।” তাই কেউ কোনও ঝুঁকি নিচ্ছেন না। অবলীলায় বন্দিরাই জেলের ভিতরে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে। তবে কর্মী সংখ্যাও যে কম তা-ও ঠিক। ১৪৩টি অনুমোদিত পদের ৯৮টি শূন্য। তার উপরে ১৮ জন স্পোর্টসে গিয়েছেন। ৪ জনকে অস্থায়ী ভাবে রঘুনাথপুর জেলে পাঠানো হয়েছে। ডেপুটি সুপার ও সাব-জেলার ৮ জন থাকার কথা। ৫টি পদই শূন্য।
অথচ, এই জেলেই কুখ্যাত অপরাধীদের পাশাপাশি রয়েছেন মাওবাদী সন্দেহে ধৃত বন্দিরাও। ছত্রধর মাহাতো, রাজা সরখেল, প্রসূন চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ চোংদার ওরফে কাঞ্চন, কল্পনা মাইতি, মনোজ মাহাতোর মতো বন্দিরা রয়েছেন। কিষেণজির মৃত্যুর পর মাওবাদীরা পাল্টা হামলা চালাতে পারে বলে গোয়েন্দাদের অনুমান। আগেও এই জেলে হামলার ‘ছক’ ছিল মাওবাদীদের। তাই জেলের নিরাপত্তা বাড়াতে একগুচ্ছ পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছুই কার্যকরী হয়নি। এ ভাবে চলতে থাকলে যে কোনও সময়ে অঘটন ঘটতে পারে বলে জেলেকর্মীদের একাংশেরই আশঙ্কা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.