মাটির নীচের জলস্তর নামছে। অথচ, জলের অপব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ডের কর্তারা। গ্রামের পাশাপাশি শহরেও জলের অপব্যবহার চলছে। সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ড ও সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার অথরিটির যৌথ উদ্যোগে মঙ্গলবার মেদিনীপুর শহরে এক প্রশিক্ষণ শিবির হয়। যেখানে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর-সহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের আধিকারিক ও কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এখানেই জলস্তর নেমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এবং কী ভাবে বৃষ্টির জল ধরে রেখে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা সম্ভব, সে নিয়েও আলোচনা হয়। গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ডের রিজিওনাল ডিরেক্টর গৌরাঙ্গচরণ পতি বলেন, “এখন থেকে সতর্ক হলে পরবর্তীকালে এই সমস্যা আর বড় হয়ে দেখা দেবে না। বৃষ্টির জল সংরক্ষণের উপরেই গুরুত্ব দিতে হবে।”
প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হওয়ার আগে এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) সাগর সিংহ, জেলা উন্নয়ন ও পরিকল্পনা আধিকারিক প্রণব ঘোষ প্রমুখ। শহরের এক অতিথিশালায় এই শিবির অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, “ভূগর্ভস্থ জলস্তর নামছে। আগামী দিনে জল কতটা মূল্যবান হয়ে দাঁড়াবে, তা সকলেই বুঝতে পারছেন। এখন দেখা যায়, শহরের অনেক এলাকায় ট্যাপকল খোলা থাকে। জল পড়ে নষ্ট হয়।” তাঁর কথায়, “শহরের মতো গ্রামেও জল নষ্ট হয়। সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।” জেলা উন্নয়ন ও পরিকল্পনা আধিকারিক বলেন, “এই ধরনের প্রশিক্ষণ শিবির অত্যন্ত জরুরি। পশ্চিম মেদিনীপুরের কিছু ব্লকে জলস্তর দ্রুত নামছে। এখনই সতর্ক না-হলে সমস্যা বাড়বে।” তাঁর কথায়, “ধনী মানুষেরা জল কিনে নেবেন। কিন্তু, গরিব মানুষদেরই সমস্যায় পড়তে হবে। বৃষ্টির জল ধরে রেখে তা ব্যবহারের জন্য ইতিমধ্যেই উদ্যোগ শুরু হয়েছে।” ওয়াটার বোর্ডের তরফে প্রশিক্ষণ শিবিরে উপস্থিত ছিলেন শান্তনু সামন্ত, অম্লানজ্যোতি কর, সঞ্জীব চক্রবর্তী, তরুণ মিশ্র প্রমুখ।
বৃষ্টির জল ধরে রাখতে রাজ্য সরকার ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্প রূপায়ণে উদ্যোগী হয়েছে। এ জন্য পুকুর, চেক ড্যাম প্রভৃতি তৈরি হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকাতেও উদ্বেগজনক ভাবে জলস্তর নামছে। এর জের পড়ছে চাষের কাজেও। পর্যাপ্ত জলের অভাবে চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ জেলায় মোট কৃষি-জমির পরিমাণ ৭ লক্ষ ৭৩ হাজার ৩৭৫ হেক্টর। এর মধ্যে সেচের সুবিধা রয়েছে ৩ লক্ষ ২৩ হাজার ৯৬৩ হেক্টর জমিতে। জঙ্গলমহলে আবার মোট কৃষিজমি রয়েছে ২ লক্ষ ১২ হাজার ৯৭৮ হেক্টর। এর মধ্যে সেচের সুবিধা রয়েছে মাত্রই ১ লক্ষ ৯ হাজার ২৯ হেক্টরে। বাস্তবে এই অবস্থা আরও করুণ বলেই অভিযোগ গ্রামবাসীদের। পরিস্থিতি পাল্টাতে জঙ্গলমহল এলাকায় পুকুরের থেকে বেশি সংখ্যক চেক-ড্যাম তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। কারণ, এখানে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি খাল আছে। এ জেলায় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১ হাজার ৫৪২ মিলিমিটার।
জেলার উপর দিয়েই বয়ে গিয়েছে কংসাবতী, সুবর্ণরেখা। কিন্তু, তা-ও বিস্তীর্ণ এলাকায় সেচের জল পৌঁছয় না। মঙ্গলবারের প্রশিক্ষণ শিবিরে সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ডের সদস্যরা পরামর্শ দেন, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করেই বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণে জোর দেওয়া হোক। প্রয়োজনে বৃষ্টির জলকে শোধন করে পানীয় হিসাবেও ব্যবহার করা যায়। দুই সংস্থার উদ্যোগে আজ, বুধবার স্কুল ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে মেদিনীপুর শহরে একটি পদযাত্রাও হবে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতেই এই কর্মসূচি। |