মেট্রো কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়েছেন, সম্প্রসারণের কাজের জন্য জলা সঙ্কোচন বা বোজানো হবে কি না, তা চূড়ান্ত হয়নি। তবু তা ঘিরে আগাম আশঙ্কা থেকে প্রতিবাদে খড়্গহস্ত বৈষ্ণবঘাটা-পাটুলি উপনগরীর বাসিন্দারা। মেট্রো কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, গড়িয়া থেকে দমদম রুটের সম্প্রসারণ-পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবে ওই পথ সংক্রান্ত সার্ভে-রিপোর্ট জমা পড়েছে মাত্র। কোন পথে মেট্রো যাবে, তা-ও ঠিক হয়নি। তার আগেই বাসিন্দারা অভিযোগ তুলেছেন, ওই কাজে এক কিলোমিটারের বেশি জলা বোজানো হচ্ছে। যার জেরে নষ্ট হতে পারে পরিবেশের ভারসাম্য। এমনকী, সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই তার প্রতিবাদে মামলা করার কথাও ঠিক করে ফেলেছেন অভিযোগকারীরা। নিজেদের রোজগারের পথ বাঁচাতে তাঁদের সঙ্গে পথে নেমেছেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরাও। |
আর এই প্রসঙ্গটি উস্কে দিয়েছে বহুচর্চিত বিতর্ক পরিবেশ বাঁচিয়ে ‘উন্নয়ন’? নাকি সেই দাবি অগ্রাহ্য করে উন্নয়নের পথে হাঁটা? নোবেলজয়ী পরিবেশবিদ রাজেন্দ্র পচৌরি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী, সকলেই মনে করেন উন্নয়নের জন্য জলা বোজানো হলেও, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে বিকল্প জলা তৈরি জরুরি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা সম্ভব কি না, সে বিষয়ে এখনই স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি মেলেনি।
মেট্রো সম্প্রসারণ-প্রকল্পের জন্য বৈষ্ণবঘাটা-পাটুলির জলাশয়গুলি বোজানোর বিরুদ্ধে সরকারের নানা দফতরে চিঠি দিয়েও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। ‘কিউ ব্লক রেসিডেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশন’-এর যুগ্ম সম্পাদক দুর্গাশঙ্কর গুপ্ত বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে শুরু করে মৎস্য ও পরিবেশ দফতরে জানিয়েও সাড়া পাইনি। তাই মামলা করতে বাধ্য আমরা।” তবে বাসিন্দারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, উন্নয়ন তাঁরাও চান। তাঁদের দাবি, জলা না বুজিয়েও ওই রেল-পথ করা যায় বলে পেশাদারদের মতামত যাচাই করা হয়েছে।
মৎস্যমন্ত্রী আবু হেনার বক্তব্য, “জনস্বার্থে জলা বোজানো হলে কিছু বলার নেই। তবে আইনানুযায়ী বিকল্প জলাশয় তৈরি করতে হয়।” কিন্তু তা কতটা নিশ্চিত করা যাবে, তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি তিনি। পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার জানান, পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও এ ক্ষেত্রে তাঁর দফতরের কিছু করার নেই।
যদিও এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে ইস্ট ক্যালকাটা ওয়েটল্যান্ডস্ ম্যানেজমেন্ট অথরিটি-র কর্তা অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই জলাশয় মৎস্য দফতরের। তাই আমাদের কিছু করার নেই। তবে এ ভাবে জলা বোজানো হলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে।”
এত বিতর্কের উৎস, সেই মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের অবশ্য বক্তব্য, সম্প্রসারণের পথ এখনও চূড়ান্তই করা হয়নি। জলা বোজানো হবে কি না, তা ঠিক হয়নি। সংস্থার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (জেনারেল) প্রত্যুষ ঘোষ বলেন, “সার্ভে-রিপোর্ট জমা পড়েছে। কোন পথ দিয়ে রেল লাইন যাবে, তার সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।” |