এক সময়ে যাঁর দাপটে কার্যত ‘বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেত’ গোঘাটে, সেই সিপিএম নেতা অভয় ঘোষকেই আরামবাগ আদালতে ঢোকার সময়ে ঝাঁটাপেটা করলেন মহিলারা। ঘুষি মারলেন এক যুবক। ধৃত সিপিএম নেতাকে লক্ষ করে উড়ে এল ছেঁড়া জুতো। ধৃত নেতার হয়ে সওয়াল করেননি কোনও আইনজীবী। ‘নিরাপত্তার’ অভাবে গোঘাট জোনাল কমিটির প্রাক্তন এই সম্পাদককে আদালত থেকে বের করা হয় শুনানির দীর্ঘ ক্ষণ পরে। তাঁকে ৭ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আরামবাগ মহকুমা আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ শ্রীবাস্তব।
হুগলি জেলা পুলিশ ও রাজ্য গোয়েন্দা দফতর সূত্রের খবর, অভয়বাবুকে জেরা করে লুকোনো অস্ত্রশস্ত্রের সন্ধান করা হচ্ছে। গড়বেতায় কঙ্কাল-কাণ্ডে এই সিপিএম নেতা জড়িত কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিআইডির-র একটি দলও আসছে গোঘাটে। সেই সঙ্গে অভয়বাবুর বিরুদ্ধে পুরনো মামলাগুলি ফের তদন্ত করতে চেয়ে পুলিশ আদালতে আবেদন জানাবে। সোমবার উত্তরপাড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল অভয় ঘোষকে। মঙ্গলবার বেলা ১২টা নাগাদ আরামবাগ মহকুমা আদালতে আনা হয় এক সময়ে গোঘাট সিপিএমের ‘শেষ কথা’ অভয়বাবুকে। আগেই সেখানে জড়ো হয়েছিলেন তৃণমূলের শয়ে শয়ে কর্মী-সমর্থক। এলাকার অসংখ্য মানুষও ভিড় করেছিলেন। মহিলারা ঝাঁটা হাতে ছিলেন অপেক্ষায়। অভয়বাবুকে নিয়ে পুলিশের গাড়ি সোজা ঢুকে পড়ে আদালত চত্বরে। সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন শ্রীরামপুরের এসডিপিও রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়-সহ একাধিক অফিসারেরা। কিন্তু ক্ষোভ-বিক্ষোভের হাত থেকে নিস্তার মেলেনি অভয়বাবুর। পুলিশি ঘেরাটোপের মধ্যেও তাঁকে ঝাঁটাপেটা করেন এক মহিলা। আঁচলের তলা থেকে ঝাঁটা বের করে কয়েক জন মহিলা তেড়ে যান অভয়বাবুর দিকে। আদালতের মূল ফটকের মুখে এক যুবক অভয়বাবুর মুখে ঘুষি চালান। |
আদালতে ঢোকার পথে বিক্ষোভের মুখে অভয় ঘোষ। — নিজস্ব চিত্র |
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে দেখে লাঠি চালায় পুলিশ। জনা দশেক তৃণমূল সমর্থক জখম হন। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে জনতা। এসডিপিও ‘দুঃখপ্রকাশ’ করে পরিস্থিতি সামাল দেন। সন্ধের দিকে হুগলির অতিরিক্ত এসপি অশেষ বিশ্বাসের নেতৃত্বে পুলিশ অভয়বাবুকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। তখন ইট-পাটকেল উড়ে আসে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি, বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত বলেন, “দলের কেউ হুমকি দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন আইনের পথে চলবে।”
কী অভিযোগ আনা হল অভয়বাবুর বিরুদ্ধে? পুলিশ জানিয়েছে, গোঘাটের ‘রাজনৈতিক কর্মী’ সত্য মালিক খুন হন কিছু দিন আগে। ওই ঘটনায় অভয়বাবু-সহ কয়েক জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন সত্যবাবুর স্ত্রী। তার ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে সিপিএম নেতাকে। সত্য মালিকের ‘রাজনৈতিক পরিচয়’ নিয়ে পুলিশ মুখ না খুললেও সিপিএমেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, এক সময়ে ওই ব্যক্তি ছিলেন তাঁদের দলে। পরে তৃণমূলের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’ বাড়ে। গোঘাটের শ্যাওড়া গ্রামে নঈমুদ্দিন নামে তৃণমূল কর্মীকে খুনে জড়িয়ে যায় তার নাম।
এ দিন আদালতের আইনজীবীরা কেউ ধৃত সিপিএম নেতার হয়ে সওয়াল করেননি। তাঁদের অনেককে তৃণমূল নেতারা ‘হুমকি’ দেন বলে অভিযোগ। আরামবাগ বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অরূপ হাজরা বলেন, “অভিযুক্ত ব্যক্তি তাঁর হয়ে দাঁড়াতে বলেননি আইনজীবীকে। তবে ওঁর পক্ষে দাঁড়ানো হবে না বলে আমাদের সংগঠনগত ভাবেও সিদ্ধান্ত হয়নি। কেউ কেউ আমাদের অনুরোধ করেন, ধৃত ব্যক্তির হয়ে মামলা না লড়ার জন্য।” আরামবাগের সিপিএম সাংসদ শক্তিমোহন মালিক বলেন, “মিথ্যা ও সাজানো মামলায় অভয়বাবুকে ধরা হয়েছে। বিশৃঙ্খলা ও তাঁর পক্ষে না দাঁড়াতে আইনজীবীদের হুমকির ঘটনার নিন্দা করছি আমরা।” |