নীতীশ কুমার তাঁর রাজ্যকে দুর্নীতি মুক্ত করতে চাইছেন। তার জন্য কখনও তিনি নয়া আইন প্রণয়ন করছেন, কখনও লোকায়ুক্ত নিয়োগ করে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর-সহ সকলকেই এর আওতাভুক্ত করছেন। সক্রিয় করেছেন রাজ্যের ভিজিল্যান্স দফতরকে। একই ভাবে রাজ্য প্রশাসনকে স্বচ্ছ রাখতে তাঁর মন্ত্রিসভার সকল সদস্য-সহ পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত সম্পত্তির বার্ষিক রিটার্ন ঘোষণার নিয়ম চালু করেছেন। এই করতে করতেই অন্য এক ছবি সামনে এসে পড়েছে। তা হল: নীতীশ মন্ত্রিসভার সব সদস্যেরই নিজস্ব সম্পদের পরিমাণ তাঁদের স্ত্রীদের নামে থাকা সম্পদের থেকে কম। এবং এই নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।
বিহার মন্ত্রিসভার সদস্যরা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাঁদের সম্পত্তির হিসেব পেশ করেছেন সরকারের কাছে। তা সরকারি ওয়েবসাইটেও তুলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, মন্ত্রীর স্ত্রী-রা তাঁদের স্বামীদের থেকে অনেক বেশি ধনী।
রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার মোদী রাজ্যের অর্থমন্ত্রীও বটেন। তাঁর সম্পত্তির হিসেব থেকে দেখা যাচ্ছে, সুশীলবাবুর কাছে ৮০ গ্রাম গহনা আছে। তাঁর স্ত্রী জে এস মোদীর গহনার পরিমাণ ৩৯০ গ্রাম। স্ত্রীদের সোনা বেশি থাকেই সেটাই দস্তুর। কিন্তু সুশীল মোদীর ব্যাঙ্ক-সহ অন্যান্য জায়গায় গচ্ছিত সম্পত্তিও শ্রীমতী মোদীর থেকে কম। সুশীলের জমা অর্থের পরিমাণ ১৪ লক্ষ ৫২ হাজার ৭৩৯ টাকা। তাঁর স্ত্রী-র নামে রয়েছে ১৭ লক্ষ ১৮ হাজার ৪৫৪ টাকা। সব মিলিয়ে সুশীল মোদীর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২৫ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা, তাঁর স্ত্রী-র নামে আছে ২৯ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা।
রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার চৌবে। তাঁর পেশ করা হিসেব অনুযায়ী: ডাকঘর, জীবন বিমা-সহ বিভিন্ন আর্থিক সংস্থায় মন্ত্রীর নামে গচ্ছিত ১০ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা, আর তাঁর স্ত্রী নীতা চৌবের নামে গচ্ছিত টাকার পরিমাণ ১৮ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা। মন্ত্রীর নামে আছে ৩ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা মূল্যের সোনা-রূপোর গয়না। তাঁর স্ত্রী-র নামে সাড়ে সাত লক্ষ টাকার গহনা। স্বাস্থ্য মন্ত্রী-র নামে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক-সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে গচ্ছিত টাকার পরিমাণ ১০ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা হলে, তাঁর স্ত্রী-র নামে রাখা আছে ১৮ লক্ষ ৪১ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে নীতা চৌবে তাঁর স্বামী অশ্বিনী কুমারের থেকে প্রায় ১৬ লক্ষ্য টাকায় এগিয়ে আছেন।
একই ভাবে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছেন রাজ্যের কৃষি মন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহের স্ত্রী সাগরমনি দেবীও। মন্ত্রীর নামে কোনও গয়নার হিসেব দেখানো না হলেও তাঁর স্ত্রী-র নামে ৪০০ গ্রাম গয়না দেখানো হয়েছে। মন্ত্রীর নামে সম্পত্তির পরিমাণ দেখানো হয়েছে ২৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার। তাঁর স্ত্রীর নামে দেখানো হয়েছে ২৭ লক্ষ্য ৪২ হাজার টাকার সম্পদ। রাজ্যের জলসম্পদ মন্ত্রী বিজয় চৌধুরির নামে মাত্র ২৯ হাজার টাকার গয়না দেখানো হয়েছে। অথচ তাঁর স্ত্রী গঙ্গা চৌধুরীর নামে কেবল গয়নাই আছে ৬ লক্ষ টাকার। একটি সংস্থায় স্ত্রী-র নামে রাখা আছে ১২ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা। যেখানে মন্ত্রীর নামে কোনও টাকাই গচ্ছিত হিসেবে দেখানো হয়নি। সব মিলিয়ে মন্ত্রীর নামে ১৫ লক্ষ টাকার সম্পত্তি যেখানে দেখানো হয়েছে, সেখানে তাঁর স্ত্রীর নামে দেখানো হয়েছে ২০ লক্ষ ২৮ হাজার টাকার।
মন্ত্রীদের এই হিসেব দেওয়ার কাজ শেষ। এখন চলছে আইএএস এবং আইপিএস-সহ সরকারি কর্মীদের সম্পত্তি পেশের সময়। ২৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যে সকলকেই সরকারের কাছে হিসেব পেশ করতে হবে। |