চরমসীমা কেটে যাওয়ার একমাস পরেও মাওবাদী প্রশিক্ষণ শিবির উৎখাতে পুলিশ ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষিপ্ত নাগাল্যান্ডের রালান এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় মানুষ ও নাগা ছাত্র সংগঠন এ নিয়ে অবিলম্বে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে।
অসমের গোলাঘাট ও নাগাল্যান্ডের ওখা জেলার সীমানায়, আদিবাসী ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (আনলা) সহায়তায় মাওবাদীরা যে শিবির গড়েছে তা নিয়ে সেনাবাহিনী ইতিমধ্যেই গোপন রিপোর্ট পাঠিয়েছে। পুলিশও সব জানে। তার পরেও এ নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অসম ও অরুণাচলে মাওবাদী দমনে সেনা ও পুলিশ যৌথঅভিযান চললেও, নাগাল্যান্ড ও মণিপুরে মাওবাদী ঘাঁটিগুলি এখনও নিরাপদেই চলছে। মণিপুরে পিএলএ-আরপিএফের সমর্থন ও নাগাল্যান্ডে এনএসসিএন (আইএম)-এর প্রত্যক্ষ মদতে এই প্রশিক্ষণ শিবিরগুলি চলছে। ঝাড়খণ্ডে মাইন বিস্ফোরণে ১৩ জন পুলিশকে হত্যা করায় আরপিএফ সরাসরি মাওবাদীদের ‘অভিনন্দন’ জানাচ্ছে। নাগাল্যান্ডে গত বছর থেকেই মাওবাদী জঙ্গিদের সামরিক প্রশিক্ষণ চলার খবর মিললেও পুলিশ নিষ্ক্রিয়। এনএসসিএন-এর সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি থাকায়, তাদের মদতে ও তাদেরই শিবিরে থাকা মাওবাদী জঙ্গিদের ধরতে পারছে না পুলিশ বা সেনাবাহিনী। কিন্তু ওখায় মাও শিবির চলে অসমের আনলার সহয়তায়। আগামী কাল আনলা ‘সরকারিভাবে’ অস্ত্র জমা দিয়ে সরকারের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছে। কিন্তু রালানবাসীদের দাবি, সামনে শান্তি আলোচনা চালালেও অর্থের বিনিময়ে এনএসসিএন-এর মতো আনলাও মাওবাদীদের আশ্রয় দিতে থাকবে।
রালানের বাসিন্দাদের বক্তব্য, ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে জঙ্গল লাগোয়া একটি অংশে মাও শিবির তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে শিবিরটিতে অন্তত ৩০০ সদস্য রয়েছে। প্রতিদিন রাত ২টো থেকে সকাল ৮টা অবধি তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ চলে। আনলা শান্তি প্রক্রিয়ার শর্ত হিসেবে আদিবাসীদের জন্য স্বশাসিত পরিষদ দাবি করেছে। লোথা ও রালানবাসীদের আশঙ্কা, স্বশাসিত পরিষদ পেয়ে গেলে মাও শিবিরে অভিযান চালানো আরও কঠিন হবে। গত ৩ ডিসেম্বর মাও শিবির সম্পর্কে বিশদ জানিয়ে, ১৫ দিনের মধ্যে পুলিশ ও প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছিল রালান এরিয়া সংগঠন, রালান রেঞ্জ ইউনিয়ন ডিমাপুর ও রালান এরিয়া স্টুডেন্টস্ ইউনিয়ন। কিন্তু প্রশাসনের তরফে এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রাজ্য ব্যবস্থা না নেওয়ায় কেন্দ্রকে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করতে অনুরোধ করেছে রালানবাসী।
ওখার জেলাশাসক রোভিলাটুও মোর জানান, বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী নেফিয়ু রিও-র সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সরকারও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। অসম সরকারকেও মাওবাদী শিবির সম্পর্কে অবগত করা হয়েছে। তবে এলাকাটি বিতর্কিত হওয়ায় সেখানে নাগা পুলিশ অভিযান চালাতে পারছে না। তাতে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই কেন্দ্রের কাছ থেকে পরবর্তী নির্দেশ চেয়েছে নাগাল্যান্ড সরকার।
উল্লেখ্য, গত কিছুদিন ধরেই উত্তর-পূর্বে মাওবাদীদের উপস্থিতি নিয়ে সরব অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। বার বার তিনি বলছেন, রাজ্যে নদীবাঁধ বিরোধী আন্দোলনের পিছনে মাওবাদীরা সক্রিয় ভাবে রয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতরও এই মর্মে রিপোর্ট দিয়েছে। তার পরেও কেন মাওবাদী শিবিরের সন্ধান জানা সত্ত্বেও রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসন নিষ্ক্রিয় তা স্পষ্ট নয়। |