জঙ্গি-দমনে কৈমুরের আদিবাসীদের বন্দুকের লাইসেন্স দিলেন নীতীশ
ক সময়ে যা ছিল মাওবাদীদের ঘাঁটি, এখন সেখানেই মাওবাদীদের মোকাবিলায় অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে খোদ গ্রামবাসীরা। কৈমুরের পাহাড় ঘেরা গ্রামগুলিতে আদিবাসীদের বাস। ছ’মাস আগে প্রাক্তন মাওবাদী নেতা সুগ্রীব সিংহ খেরওয়ারের তিন আত্মীয়কে হত্যা করার পরে এখানকার মানুষরা প্রবল মাওবাদী-বিরোধী হয়ে ওঠে। গড়ে তোলে সংগঠন। এ বার মাওবাদীদের মুখোমুখি হওয়ার জন্য, সরকারের ‘অনুমতি’ নিয়ে এখানকার আদিবাসী মানুষ হাতে বন্দুক তুলে নিয়েছেন। বিহারের রোহতাস জেলার কৈমুর উপত্যকার ছ’টি গ্রামের জঙ্গি-বিরোধী বিদ্রোহে জেলার পুলিশ প্রশাসন, মুখে না বললেও, যেন কিছুটা স্বস্তিতে। সম্প্রতি ভান্দা, মেঘা, পিপরাডি, ভুরকুরা, সালমা এবং অওরিয়ার ৬৫ জন আদিবাসীকে তাঁদের আবেদনের ভিত্তিতে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দিয়েছে বিহার সরকার।
রাজ্যের অন্যতম মাওবাদী প্রভাবিত জেলা এই কৈমুর-রোহতাস। এই বিস্তীর্ণ এলাকায় সমস্যার শুরু বছর খানেক আগে থেকে। বিহারের মাওবাদী নেতৃত্বে যাদবদের ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে কোণঠাসা হয়ে যায় আদিবাসী নেতারা। বিহারের চিরকালীন জাতপাতের রাজনীতি মাওবাদী নেতৃত্বেও ব্যাপক প্রভাব ফেলে। শেষ পর্যন্ত কৈমুর-রোহতাসের আদিবাসী নেতা-কর্মীরা সুগ্রীব সিংহ খেরওয়ারের নেতৃত্বে সংগঠন ভেঙে বেরিয়ে এসে ‘কৈমুরাঞ্চল বিকাশ মোর্চা’ তৈরি করে। এই মোর্চার বক্তব্য ছিল, সাধারণ মানুষের জীবনের মানোন্নয়ন এবং এলাকার সার্বিক উন্নয়নের সরকারি লক্ষ্যের সঙ্গে তাঁদের কোনও বিরোধ নেই। তারপর থেকেই এই সংগঠন আদিবাসী জনজাতিদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। ধাক্কা খায় মাওবাদী প্রভাব। এরপরেই প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে খেরওয়ারের তিন আত্মীয়কে হত্যা করে যাদব-শাসিত মাওবাদী জঙ্গিরা। ‘অত্যন্ত সংবেদনশীল’ এই মাওবাদী এলাকার জন্য সরকার নিরাপত্তা রক্ষীদের কয়েকটি শিবির তৈরি করেছে। বাড়ানো হয়েছে সিআরপিএফের শক্তিও। এরই পাশাপাশি, আদিবাসী মানুষদের হাতে বন্দুক তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে সরাসরি নয়, আবেদনের ভিত্তিতে লাইসেন্স দিয়েছে সরকার।
ভান্দা হত্যাকাণ্ডের পর এই এলাকা পরিদর্শনে যান স্বরাষ্ট্রসচিব আমির সুভানি। সেই সময় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন ভান্দা, মেঘা, পিপরাডি, ভুরকুরা, সালমা এবং অওরিয়ার স্থানীয় মানুষ। জেলার পুলিশ সুপার মনু মহারাজ জানিয়েছেন, “এই সব গ্রামের মানুষ প্রশাসনের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের জন্য লাইসেন্সের আবেদন জানিয়েছিল। পুলিশ থেকে খোঁজ-খবর করা হয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই সেরকম ৬৫ জনকে জেলা প্রশাসন থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।”
পুলিশ কী তাঁদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেবে? না, তবে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেবে প্রাক্তন মাওবাদীরা। খেরওয়ারের কৈমুর বিকাশ মোর্চাই লাইসেন্সধারী গ্রামবাসীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেবে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বাবন ঠাকুর বলেন, “আমাদের দাবি এবং মানুষের ইচ্ছে রাজ্য সরকার মেনে নিয়ে ৬৫ জনকে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। তাঁদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।”
আসলে সালোয়া জুড়ুম মামলায় সুপ্রিম কোর্ট সাধারণ মানুষের হাতে বন্দুক তুলে দেওয়ার কড়া নিন্দা করে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যাপারেও সরকারকে সতর্ক করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সেই কারণেই কৈমুর-রোহতাসে সাধারণ গ্রামবাসীদের বন্দুকের লাইসেন্স দিয়েও পুরো ব্যাপারে নিজেদের না-জড়ানোর চেষ্টা করছে বিহার সরকার। এসপি সাফাই দিয়েছেন, “এর সঙ্গে আমাদের সর্ম্পক নেই।” দাবি করেছেন, পুলিশ এর সঙ্গে যুক্তও থাকবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.